অজু করে ঘুমানো সুন্নত

পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। মুমিনের প্রতিটি ইবাদতের সঙ্গে পবিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও পবিত্রতার গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে পবিত্রতা অর্জনকারীদের সুনাম করেছেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৮) এ জন্য পবিত্রতাকে কোনো কোনো ইবাদতে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, আবার কখনো কখনো সুন্নতও করা হয়েছে। যেমন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নত।

কেননা রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পবিত্রতা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, বারাআ ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের অজুর মতো অজু করে নেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৭) নবীজি (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক কেউ যদি রাতে ঘুমানোর আগে উত্তমরূপে অজু করে বিছানায় যায়, তাহলে তার জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাত জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু উমামা আল-বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার জিকির করতে থাকে, সে পার্শ্ব পরিবর্তন করার আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ হতে যা কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে নিঃসন্দেহে তা দান করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৬)

সুবহানাল্লাহ, রাতে ঘুমানোর আগে ছোট একটি কাজ করলে মহান আল্লাহ কত বড় পুরস্কার দেন। এখানেই শেষ নয়, যারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নবীজি (সা.)-এর এই সুন্নত পালন করবে, তারা ফেরেশতাদের দোয়া পাবে বলে হাদিসে পাওয়া যায়। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় রাত কাটায়, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বস্তুতে (যেমন বস্ত্র ইত্যাদি) একজন করে ফেরেশতা রাত কাটায়। সে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে আর বলে, হে আল্লাহ, তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করো।

কেননা সে পবিত্রাবস্থায় রাত অতিবাহিত করেছে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান) এগুলো তো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অজু করার আধ্যাত্মিক বা পরকালীন উপকারিতা। পাশাপাশি এই সময় অজু করার কিছু দুনিয়াবি উপকারিতাও রয়েছে। লাইফ স্টাইল বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাতে ঘুমানোর আগে পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় মানুষের শরীরের কোষ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কার্যকর থাকে। এ কারণে ঘুমানোর আগে যদি ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয় তাহলে কোষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটে। ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হলে ত্বকের লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ভেতরে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে ত্বকের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

তাই রাতে ঘুমানোর আগে অজু করলে একদিকে যেমন রাতের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয় তেমনি নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *