আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে ঈমান
চতুর্থ যে মৌলিক বিষয়ে ঈমান রাখতে হবে তা হল আল্লাহর কিতাবের প্রতি ঈমান। আল্লাহ তা’আলা মানব ও জ্বিন জাতির হেদায়েত এবং দিক নির্দেশনার জন্য নবীদের মাধ্যমে তাঁর বাণীসমূহ পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই বাণী ও আদেশ নিষেধের সমষ্টিকে বলা হয় কিতাব। আল্লাহ তা’আলা যত কিতাব দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে অনেকগুলো ছিল সহীফা অর্থাৎ, পুস্তিকা বা কয়েক পাতার কিতাব।
এক বর্ণনা মতে সর্বমোট ১০৪ খানা কিতাব ও সহীফা প্রেরণ করা হয়। তন্মধ্যে চারখানা হল বড় কিতাব, আর ১০০ খানা সহীফা বা পুস্তিকা। যার মধ্যে হযরত শীছ (আঃ)-এর উপর ৫০ খানা, হযরত ইদ্রীস (আঃ)-এর উপর ৩০ খানা, হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উপর ১০ খানা এবং হযরত আদম (আঃ)-এর উপর ১০ খানা সহীফা অবতীর্ণ হয় । চার খানা বড় কিতাব হল :
(এক) তাওরাত বা তৌরীত : যা হযরত মূছা (আঃ)-এর উপর নাযিল হয় ৷
(দুই) যবূর : যা হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর নাযিল হয়।
(তিন) ইঞ্জীলঃ যা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর নাযিল হয়।
(চার) কুরআনঃ যা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়।
কুরআনকে আল-কুরআন, আল-কিতাব, ফুরকান এবং আল-ফুরকানও বলা হয় ।
কুরআনের সংজ্ঞা হল ঃ কুরআন বলা হয় যা রাসূল (সাঃ) – এর উপর নাযিল হয়েছে, গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে এবং রাসূল (সাঃ) থেকে “তাওয়াতুর পর্যায়ের বর্ণনা” সূত্রে সন্দেহাতীত ভাবে বর্ণিত আছে। শব্দ এবং অর্থ উভয়টার সমষ্টিকে কুরআন বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, কুরআন ব্যতীত বর্তমানে ইয়াহুদী খৃষ্টানদের নিকট যে তাওরাত ইঞ্জীল রয়েছে তার উপর ঈমান আনা জরূরী নয়। আমরা শুধু এতটুকু বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা’আলা যে তাওরাত, ইঞ্জীল ও যাবূর সংশ্লিষ্ট পয়গম্বরদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন, তা সত্য ছিল এবং সংশ্লিষ্ট সময়ে তার প্রতি ঈমান আনয়ন ও তদনুসারে আমল করা ফরয ছিল।
বর্তমানে আল্লাহর প্রেরিত আসল তাওরাত ইঞ্জীল দুনিয়ার কোথাও নেই। বর্তমানে ইঞ্জীল বা বাইবেল নামে যে গ্রন্থ পাওয়া যায় তা মূলতঃ হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তা’আলা উর্ধ্ব আকাশে উঠিয়ে নেয়ার বহু বৎসর পর কিছু লোক রচনা ও সংকলন করেছিল। তারপর যুগে যুগে বিভিন্ন পাদ্রী ও খৃষ্টান পন্ডিতগণ তাতে বহু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করেছে। ফলে এটিকে কোনক্রমেই আর আসমানী ইঞ্জীল বলে মেনে নেয়া যায় না বরং এ হল মানুষের মনগড়া, বিকৃত এবং মানব রচিত ইঞ্জীল-আসমানী ইঞ্জীল নয়। তাওরাতের অবস্থাও অনুরূপ। বিস্তারিত বিবরণের জন্য এ সম্বন্ধে একটি বিশদ প্ৰবন্ধ পেশ করা হল।
আল্লাহর কিতাব বা আসমানী কিতাব সম্বন্ধে ঈমান রাখার মধ্যে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত :
আল্লাহর কিতাব বা আসমানী কিতাব সম্বন্ধে ঈমান রাখার অর্থ হল প্রধানতঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিশ্বাস করা
১. এ সমস্ত কিতাব আল্লাহর বাণী, মানব রচিত নয়।
২. আল্লাহ যেমন অনাদি ও চিরন্তন, তাঁর বাণীও তদ্রূপ অনাদি ও চিরন্তন। কুরআন অনিত্ব-সৃষ্টি নয়।
৩. আসমানী কিতাব সমূহের মধ্যে কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ।
৪. কুরআন সর্বশেষ কিতাব-এর পর আর কোন কিতাব নাযিল হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআনের বিধানই চলবে। কুরআনের মাধ্যমে অন্যান্য আসমানী কিতাবের বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। যেমন ইঞ্জীলের মাধ্যমে তাওরাতের বিধান রহিত হয়ে গিয়েছিল।
৫. কুরআনের হিফাযতের জন্য আল্লাহ তা’আলা ওয়াদা করেছেন, কাজেই এর পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। কুরআনকে সর্বদা অবিকৃত বলে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি এই কুরআন নাযিল করেছি এবং অবশ্যই আমি তার হেফাজতকারী। (সূরাঃ ১৫-হিজর ৯)
যারা বলে বর্তমান কুরআন মূল কুরআনের এক তৃতীয়াংশ, অপর দুই তৃতীয়াংশ গায়েব, তারা কুরআনের হক্কানিয়্যাত অস্বীকারকারী। রাফিযীগণ (শী‘আগণ) এরূপ বলে থাকেন। এটা স্পষ্ট কুফুরী।
তথ্য সূত্রঃ
কিতাবঃ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা – ১১০০। মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬