ইবাদত

আইয়ামে বিজের রোজা রাখা

আইয়াম হলো আরবি ইয়াওম শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো দিনগুলো। আর বীজ শব্দের অর্থ সাদা, শুভ্র। আইয়ামে বীজ দ্বারা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ বোঝানো হয়। এই তারিখগুলোতে জ্যোৎস্নায় রাতগুলো শুভ্র ও আলোকিত হয়। বিশেষত মরুভূমিতে এটি বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। এ কারণে তারিখগুলোকে একসঙ্গে বোঝাতে ‘আইয়ামে বীজ’ নামকরণ করা হয়েছে।

এই তিন দিনের রোজার বিশেষ ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। আবুু জর (রা.) বলেন, নবীজি (স.) তাঁকে বলেছেন, তুমি যদি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তাহলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখো। (সুনানে তিরমিজি: ৭৬১)

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আব্দুল্লাহ, তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখবে। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকি। এভাবে সারা বছরের রোজা হয়ে যায়।’ (মুসলিম ২৬১৯)

প্রতি চান্দ্র মাসে তিনটি রোজা রাখা মুস্তাহাব। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ রোজাগুলো ছাড়তেন না। তিনি সব সময় আইয়ামে বিজের রোজা রাখতেন। এমনকি সফরেও। তবে রোজাগুলো ফজিলতপূর্ণ হলেও তিনি উম্মতের জন্য এ রোজাকে বাধ্যতামূলক করেননি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমার বন্ধু নবী (স.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন। ১. প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখা, ২. চাশতের দুই রাকাত নামাজ পড়া এবং ৩. ঘুমানোর আগে বিতির নামাজ আদায় করা।’ (বুখারি: ১৮৮০)

তবে, মাসের যেকোনো তিন দিন রোজা রাখলেও সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব লাভ হবে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ধৈর্যের মাস হলো রমজান। আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম (রোজা) পালন করা সারাবছর সাওম (রোজা) পালন করার সমতুল্য। (নাসায়ি: ২৪১০)

এছাড়াও মাসে তিন দিন রোজা রাখলে মনের ওয়াসওয়াসা দূর হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি কি তোমাদের অন্তরের ওয়াসওয়াসা দূর করার আমল সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবিরা বলেন, কেন নয়? তিনি বলেন, তা হলো প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম (রোজা) পালন করা। (নাসায়ি: ২৩৮৬)

উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে, আরবি মাসের যেকোনো তিন দিন রোজা রাখলে ফজিলত লাভ হবে ঠিক, কিন্তু আইয়ামে বিজের দিনে তথা ১৩, ১৪, ১৫ এই তিন দিন রোজার মর্যাদা বেশি। কেননা বিভিন্ন হাদিসে নবীজি বিশেষভাবে এই তিন দিন রোজার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

আইয়ামে বিজে রোজা রাখার কারণ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলাররা বলেন, ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ভূপৃষ্ঠ ও মানুষের ওপর চাঁদের প্রভাব পড়ে। এ দিনগুলোতে চাঁদ পূর্ণতা পায়। এ সময় ভূপৃষ্ঠ ও মানুষের অভ্যন্তরে এ আকর্ষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। সাগর-নদীতে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে আর মানুষের মধ্যে এটির প্রকাশ ঘটে। এর প্রভাবেই মানুষের চঞ্চলতা, আবেগ-উদ্বেগ, গোঁড়ামি, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, মানবিক ও স্নায়ুবিক উত্তেজনা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। তাই এ সময়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে, যাতে এই দিনগুলোতে মানবিক উত্কর্ষ সাধন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনারোধে সক্ষম হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আইয়ামে বিজের দিনগুলোতে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *