ইবাদত

বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা কেমন?

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অত্যধিক ভালোবাসেন। সব সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও ভালোবাসা বিদ্যমান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা বাকারা: ১৪৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-  وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ‘আমার দয়া- তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (সহিহ বুখারি: ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব, হাদিস: ৫৯৯৯; সহিহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা, হাদিস: ২৭৫৪)

আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার শান ও মর্যাদা আলাদা। তাঁর ভালোবাসায় প্রতিদান বা প্রতিফলের কোনো প্রত্যাশা থাকে না। তিনি শুধু দিতেই থাকেন। তাই তাঁর একটি নাম রহমান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর এই সিফাতের উল্লেখ রয়েছে এভাবে—الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ‘পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।’ (সুরা ফাতিহা: ০৩)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা নাহল: ১৮)। ‘অত:এব, আপনি আল্লাহর রহমতের চি‎হ্নসমূহের প্রতি দৃষ্টি দিন..।’ (সুরা রুম: ৫০)

তবে, যেসব বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য নেক আমল করে তাদের জন্য আছে আল্লাহর ভালোবাসার বিশেষ স্তর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সৎকাজ করো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)

বান্দা তাঁর আনুগত্য ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসার বিশেষ স্তরে উন্নীত হয়। কোরআনের একাধিক আয়াত ও হাদিসে আল্লাহর পছন্দের ও অপছন্দের কাজগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৬) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকি, অমুখাপেক্ষী ও গোপনে ইবাদতকারীকে ভালোবাসেন। (সহিহ মুসলিম: ২৯৬৫)

তবে, বান্দার কিছু জঘন্য গুনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা ওসব বান্দাদের ভালোবাসেন না এবং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। যেমন তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪০)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা নিসা: ১০৭)

এছাড়াও আল্লাহ অবিশ্বাসী পাপীদের ভালোবাসেন না (সুরা বাকারা: ২৭৬)। আল্লাহ তাআলা অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না (সুরা আলে ইমরান: ৩২)। আল্লাহ তাআলা অহংকারীদের ভালোবাসেন না (সুরা নাহল: ২৩)। আল্লাহ তাআলা অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না (সুরা আনআম: ১৪১)। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা-কারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা মায়েদা: ৬৪)

মূলত সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করাও আল্লাহর রহমত ও ভালোবাসার একটি অংশ। তাঁর অপরিসীম দয়ায় তিনি নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন এবং ভালো-মন্দ জানিয়ে দিয়েছেন। শরিয়ত বিধিবদ্ধ করেছেন। তিনি বাহ্যিক ও গোপনীয় নেয়ামতের ছায়ায় বান্দাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর রহমত সব কিছুর ঊর্ধ্বে, সবচেয়ে মহান ও সুউচ্চ। মুহসিন, মুত্তাকি, ধৈর্যশীল, সত্যবাদীদের জন্য রয়েছে তাঁর রহমতের পূর্ণ অংশ এবং অপরিসীম কল্যাণ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর বিশেষ ভালোবাসা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

https://dhakamail.com/religion/87728

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *