ইবাদত

বাণিজ্যিক মালের যাকাত সম্পর্কিত ১৪ টি মাসআলা।

০১. মাসআলা : যদি কোন ব্যক্তি হরেক মাল অথবা ফেরিওয়ালার কাছে মাল বিক্রি করে থাকে এবং তার কাছ থেকে টাকা উসূল হওয়ার আশা রয়েছে, কিন্তু দেরীতে উসূল হচ্ছে। তখন এমন ঋণের টাকা উসূল হওয়ার পর বিগত বছরগুলোর যাকাতও আদায় করা আবশ্যক। যেমনিভাবে বর্তমান জামানায় ব্যবসায়িক কাজ- কারবারের এই পদ্ধতিই চলছে । (আল বাহরুর রায়েক- ২/২০৯, শামী : ২/৩০৫)

০২.মাসআলা : বাণিজ্যিক চতুস্পদ জন্তুর হুকুম ব্যবসায়িক পণ্যের হুকুমে। অতএব, এমন চতুস্পদ জন্তুর বাজারের চলমান মূল্য লাগিয়ে বছর শেষ হওয়ার পর চল্লিশ ভাগের একভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করা আবশ্যক হবে। (আলমগীরী : ১/১৭৬)

০৩.মাসআলা : যদি কোন ব্যক্তির নিকট বাণিজ্যিক পণ্য বছরের পর বছর পড়ে থাকে এবং সে তার যাকাত আদায় করেনি। অতঃপর পরে এক সময় তা বিক্রি করল, তাহলে পূর্বে অতিবাহিত সকল বছরের যাকাত হিসাব করে দেওয়া তার জন্য আবশ্যক হবে । শুধুমাত্র এক বছরের যাকাত আদায় করার দ্বারা তার জিম্মাদারী আদায় হবে না । (শামী : ২/২৯৫)

০৪.মাসআলা : বাণিজ্যিক মালের যাকাত দিবে বিক্রয়ের মূল্য হিসেবে, ক্রয়ের মূল্য হিসেবে নয়। অতএব, বছর পূর্ণ হওয়ার পর যখন ব্যবসায়ী যাকাত দিবে, তখন তাকে বিক্রয়ের মূল্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে, ক্রয়ের মূল্য হিসেবে নয়। যেমন : কোন ব্যক্তি ব্যবসার নিয়তে একটি জিনিস ক্রয় করল দশ হাজার টাকায়, আর বর্তমানে তার বিক্রয় মূল্য হলো বার হাজার টাকা, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে বার হাজার টাকার উপর হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।

আর যদি মূল্য কমে গিয়ে বিক্রয় মূল্য আট হাজার হয়ে যায়, তাহলে তাকে আট হাজার টাকারই যাকাত দিতে হবে। (শামী : ২/২৮৬, আল বাহরুর রায়েক : ২/২২৯)

০৫.মাসআলা : আর বাণিজ্যিক মালে ঐ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করবে, যা এই শহরে প্রচলিত বাজার মূল্য। যেমন- একটি পণ্য তার মূল্য ঢাকাতে দশ হাজার টাকা এবং ফেনীতে পনের হাজার টাকা, আর এই পণ্যটি হলো ঢাকাতে, তাহলে ব্যবসায়ীকে দশ হাজার টাকার উপরই যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি পণ্যটি ফেনীতে থাকে, তাহলে তাকে পনের হাজারের হিসেবে যাকাত দিতে হবে । (শামী : ২/২৮৬, বাহরুর রায়েক : ২/২২১)

মুরগীর ফার্ম ও মৎস খামারের যাকাত ০৬.মাসআলা : মুরগীর ফার্ম এবং মৎস খামারের ভূমি, বাড়ী এবং সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের উপর যাকাত আসবে না। মুরগী এবং মুরগীর বাচ্চা ক্রয়ের সময় যদি এগুলোকেই বিক্রয় করে দেওয়ার নিয়ত থাকে, তবে এগুলোর মূল্যমানের উপর যাকাত ফরজ হবে। অবশ্য যদি এর পরিবর্তে ডিম ও বাচ্চা বিক্রির নিয়ত থাকে, তবে যাকাত আসবে না। তদ্রুপ পুকুর ইত্যাদিতে বিক্রয়- এর উদ্দেশ্যে যদি মাছ বা মাছের পোনা ক্রয় করে ছাড়া হয়, তবে তার মূল্যমানের উপর যাকাত ফরজ হবে; অন্যথায় নয়। মুরগীর খামার ও মৎস খামারের আয়ের উপর সর্বাবস্থায় যাকাত ওয়াজিব । (আহসানুল ফাতাওয়া : 8/300)

ব্যবসায়ীর ক্রয়মূল্য গ্রহণযোগ্য নাকি বর্তমান মূল্য। ০৭.মাসআলা : ব্যবসার সম্পদের যাকাত বাজার দর অনুযায়ী আদায় করা চাই। ক্রয়মূল্য অনুযায়ী যদি কেউ যাকাত দিয়ে দেয়, অথচ বাজার দর অনুপাতে তা আরো বেশী পরিমাণ প্রদেয় হয়, তবে অতিরিক্ত পরিমাণ তার দায়িত্বে আবশ্যক থাকবে এবং তা আদায় করে দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/১৪৯)

বাকিতে বিক্রিত মালের যাকাত ০৮.মাসআলা : অধিকাংশ বড় বড় ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসার পণ্য ক্রেতা ব্যবসায়ীদের (বাকিতে) ন্যস্ত করে দেয় এবং মূল্য পরিশোধের সময় বিশেষভাবে নির্ধারিত থাকে। এ জাতীয় উসূল সম্ভাব্য মূল্য যাকাতের হিসাবের মধ্যে গণনা করা হবে এবং মালের যাকাত ওয়াজিব হবে। অবশ্য উসূল হওয়ার পরই তা আদায় করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিগত সময়ের যাকাত ও আদায় করতে হবে। কয়েক বছর পর উক্ত টাকা উসূল হলে পূর্বের সকল বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৬/১৪৭)

ব্যবসার পশুতে যাকাত। ০৯.মাসআলা : কেউ বকরীর ব্যবসা করে। চল্লিশ (৪০) পঞ্চাশ (৫০) টি বকরী মজুদ থাকে, অবশ্য ক্রয়- বিক্রয়ের ধারাবাহিকতায় সেগুলো তে পরিবর্তন হয়ে থাকে এবং কোন বকরী বছর ধরে থাকে না। আর এগুলো জঙ্গলে বিচরন করে। ঐ বকরীগুলো ব্যবসার মাল হিসাবে এগুলোর মূল্যমানের ২.৫০% হারে যাকাত আদায় করতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : 8/277)

ঔষধের যাকাত ১০.মাসআলা : বছর পূর্ণ হওয়ার পর দোকানে বিদ্যমান সমস্ত ঔষধের হিসাব করে বিক্রিত মূল্যের হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করবে, যদি কোন প্রকার ঋণ থাকে সেটাও আদায় করবে, তারপর বাকি টাকা এবং আয়ের টাকার সমষ্টিতে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করা ফরজ। (হিন্দিয়া : ১/১৭৩)

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘর। ১১. মাসআলা : ঘর যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয় কিন্তু ঘর ক্রয় করার সময় বিক্রি করার নিয়ত না করে থাকে, তখন ঐ সূরতে ঘরের মূল্যের উপর যাকাত আবশ্যক হবে না। তবে যদি তাকে ভাড়ায় ইত্যাদির উপর দিয়ে দেয়, তখন ভাড়ার টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে, যদি তা নেসাব পরিমাণ অথবা তার থেকেও বেশী হয় এবং তার উপর বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। (শামী : ২/২৬৮)

বিক্রি না হওয়া জিনিসপত্র দ্বারা যাকাত আদায় করা। ১২.মাসআলা : কখনো এমন হয় যে,দোকানদার এর নিকট এমন আইটেম এবং জিনিস থাকে যা স্বাভাবিকত বিক্রি হয় না, এমন জিনিস সমূহের যে পরিমাণ মূল্য বাজারে হবে তা আদায় করার দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২০)

মাছের ফিসারির যাকাত ১৩.মাসআলা : মাছের ফিসারির জমিন, পুকুর, ঘর এবং এতদ্বসম্পৰ্কীয় সকল আসবাবপত্রের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়, অবশ্য মাছের ফিসারি থেকে মাছ বিক্রি করার পর যে লাভ হবে, বছর শেষে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যদি লাভের টাকা নেসাব পরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশী হয়। (ফাতহুল কাদীর : ২/১২১)

মিল/কারখানার যাকাত ১৪. মাসআলা : কারখানার মেশিন সমূহের উপর যাকাত ফরজ হবে না। কিন্তু তার মধ্যে যে মাল তৈরী হয় তার উপর যাকাত ফরজ হবে। তেমনিভাবে তাতে যে অপরিণত মাল আছে, সামানা তৈরী করার জন্য রেখেছে। তার উপরও যাকাত ফরজ হবে। তৈরী মাল এবং অপরিণত মাল সবগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে তার মধ্যে শতকরা আড়াই ২.৫০% টাকা হারে যাকাত আদায় করা ফরজ হবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৬৫)

তথ্যসূত্রঃ

যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।

লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *