প্রশ্নোত্তর

বায়জীদ খান পন্নী প্রতিষ্ঠিত “হেযবুত তওহীদ” হক না ভ্রান্ত দল?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম

সন্মানিত মুফতি সাহেব, আপনাদের খেদমতের বিনিময়ে আজ পর্যন্ত আমরা সহি দীন পেয়ে যাচ্ছি | আপনাদের কথা এবং কাজ আমাদের জন্য দলিল হিসাবে কাজ করে |

বর্তমানে আমাদের এলাকায় এবং ঢাকার কিছু এলাকায় এবং বাংলাদেশএর বিভিন্ন এলাকায়  হেজবুত তাওহীদ নামের একটি সংগঠন খুব জোরে সোরে কাজ করে যাচ্ছে যা এই অধম এর নজরবন্দী | তাদের নিয়ে কিছু জানার ছিল |

১/ হেজবুত তাওহীদ এর আকিদা?

২/ তাদের কর্মকান্ড ?

৩/ তারা হক না বাতেল ?

৪/ তাদের কে কি সমর্থন করা যাবে?

ইত্যাদি ইত্যাদি বিস্তারিত বললে উপকৃত হতাম |

মোঃ আরিফিন

তেজগাঁও, ঢাকা |

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

টাঙ্গাইল জেলার করটিয়ার পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব বায়জীদ খান পন্নী। জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত বায়জীদ সাহেব ১৯৯৫ সনে হেযবুত তওহীদ নামক দলটির সূচনা করেন।

ইসলাম সম্পর্কে একাডেমিক পড়াশোনা না থাকায় নিজ থেকে বাংলা ও ইংরেজী বই পড়ে তার মাঝে ইসলাম সম্পর্কে একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। নিজ থেকেই কিছু একটা করার তাগিদে একটি নতুন মতবাদ চালু করেন।

তার সাথে ইসলাম বিরোধী কোন বর্হিশক্তির হাত আছে কি না? তা অবশ্যই সন্দেহের বিষয়।

খুব অল্প সময়ে উদ্ভট সব থিউরী দিয়ে বেশ কিছু ভক্ত যুগিয়ে ফেলেন পন্নী সাহেব।

ইসলামের মৌলিক বিধানাবলীর নতুন সব অপব্যাখ্যা করে পুরো দ্বীনটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখার দুষ্কর্ম তিনি আমরণ করে যান।

অবশেষে ১৬ ই জানুয়ারী ২০১২ ইং সনে তার মৃত্যু হয়।

কিন্তু এতদিনে তার ভ্রান্ত দলের কর্মী হাজার ছাড়িয়ে যায়।

বায়জীদ খান পন্নীর এ নতুন ফেরকা হেযবুত তাওহীদ ভ্রান্ত হবার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। আমরা সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছিঃ

১ সশস্ত্র জিহাদে রত নয় এমন কেউ উম্মতে মুহাম্মদী নয়!

হেযবুত তওহীদ, করটিয়া, টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত “ইসলামের প্রকৃত আকীদা, ক্রমিক নং-১” নামক বইয়ে লিখা হয়েছেঃ “উম্মতে মুহাম্মদীর সংজ্ঞা হল, আল্লাহ যে কাজের দায়িত্ব দিয়ে তার রসূলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ও যে দায়িত্ব তিনি তার গঠিত জাতির ওপর অর্পণ করে চেলে গিয়েছেন, যে বা যারা সেই কাজ চালিয়ে যাবে শুধু তারাই উম্মতে মুহাম্মদী। যারা সেই কাজ অর্থাৎ জেহাদ চালিয়ে যাবে না তারা যত বড় মুসল্লিই হন,যত বড় মুত্তাকি, আলেম দরবেশ হন না কেন-উম্মতে মুহাম্মদী নন। হাশরের দিন তার উম্মত হিসাবে রসূলের শাফায়াতের ওপর তাদের কোন দাবী থাকবে না।“ [পৃষ্ঠা নং-১৬]

এর মানে কী দাঁড়াচ্ছে?

জিহাদরত নয়,এমন প্রতিটি মুসলমানই হেযবুত তাওহীদের আকীদায় উম্মতে মুহাম্মদীর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গেছে।

অথচ জিহাদ করলেই ব্যক্তি উম্মতে মুহাম্মদী থাকবে, নতুবা উম্মতে মুহাম্মদী থেকে বেরিয়ে যাবে এমন কথা কুরআন ও হাদীসের কোথাও বিদ্যমান নেই।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন অনেক সাহাবীই জিহাদের ময়দানে যাওয়া ছাড়াই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এর মানে কি তারা উম্মতে মুহাম্মদী নয়? [নাউজুবিল্লাহ বিন মিন জালিক]

২ জিহাদ না থাকলে নামাযের কোন দাম নেই!

উপরোক্ত বইয়ের ৮ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ “ছাদ না থাকলে যেমন থামের কোনও দাম নেই, প্রয়োজন নেই, তেমনি জিহাদ সশস্ত্র সংগ্রাম না থাকলে নামাযেরও কোন দাম নেই।“

ইন্নালিল্লাহ। কী ভয়াবহ বক্তব্য। যদি জিহাদ তথা সশস্ত্র সংগ্রাম না থাকলে নামাযের কোন দাম না থাকে, তাহলে হিজরতের আগে নবীজী এবং সাহাবাগণ কেন নামায পড়েছেন?

নবীজী অসুস্থ্য হয়ে যাবার পর দুই সাহাবীর কাঁধে ভর করে কেন নামাযে গেলেন? তখনতো আর নবীজীর জিহাদে যাবার কোন সুযোগ ছিল না। তারপরও নামাযের এত গুরুত্ব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন দিয়েছিলেন?

“জিহাদ না থাকলে, নামায লাগবে না” দাবী করা পাগলামী বৈ আর কী হতে পারে?

৩ নবীরা যা পারেননি তা করতে মনোনিত বায়জীদ খান পন্নী?

বায়জীদ খান পন্নীর একটি ভিডিও লেকচার ইউটিউবে পাওয়া যায়। যা আমরা আহলে হক মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে “হেযবুত তাওহীদ একটি নতুন ধর্মঃ বায়জিদ খান পন্নি যে ধর্মের নবী” শিরোনামে আপলোড করেছি।

উক্ত ভিডিও লেকচারে বায়জীদ খান পন্নী সাহেব বলেনঃ “মহাসত্য পেয়েও যেখানে নবী রাসূলদের মধ্যেও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন, পারেন নাই, সেখানে আমিকে সেই মু’জিজা দিয়ে, আল্লাহর রহমে, আল্লাহ অবসান  করে দিলেন আমার যে, কর! হবে!”

আস্তাগফিরুল্লাহ! কি মারাত্মক কুফরী বক্তব্য! নবীরা নাকি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। নাউজুবিল্লাহ। যেখানে নবীরা ব্যর্থ, সেখানে এ উন্মাদ বায়জীদ খান পন্নী মুজিজাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত?!

পাগলের প্রলাপ ছাড়া এসব আর কী?

৪ জিহাদকারীর সম্মান নবীদেরও উপরে?

হেযবুত তওহীদ প্রকাশিত বইয়ে তাদের আকীদা লিখা হয়েছেঃ “তওহীদের ওপর ঈমানের পরই শ্রেষ্ঠ আমল ঐ তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ বলেই তার পুরস্কার আল্লাহ রেখেছেন ইসলামের শ্রেষ্ট পুরস্কার ও সম্মান, যে পুরস্কার ও সম্মান কয়েকটি বৈশিষ্ঠে আল্লাহর নবীদেরও ছাড়িয়ে গেছে।“ [ইসলামের প্রকৃত আকীদা, পৃষ্ঠা-১৭]

যে নবীদের মাধ্যমে বিধান নাজিল হল, সেই নবীর সম্মানের চেয়ে বিধানপালনকারীর সম্মান বেড়ে যায়? নাউজুবিল্লাহ! এর মানে নবীদের চেয়ে তার উম্মতের মর্যাদা বেশি?

এ কোন ধর্মের দিকে আহবানকারী হেযবুত তওহীদ? যে ধর্মে নবীর চেয়ে উম্মতীর সম্মান অধিক!

৫ হিন্দু দেবতা শ্রীকৃষ্ণ নবী ছিল?

“ভারতীয় মোসলেম চিন্তাবিদ ও এসলামিক দার্শনিকগণ শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে যেসব সুচিন্তিত মতামত রেখেছেন এবং কোর’আন  হাদিসের আলোকে তাঁর সম্বন্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন ঐসব মতামতও বক্তব্য বিচার-বিশ্লেষণ করে এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ একজন নবী। [শোষণের হাতিয়ার, লেখক- হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম, হেযবুত তাওহীদ, প্রকাশক-তওহীদ প্রকাশন, দ্বিতীয় প্রকাশ-২০ ফেব্রুয়ারী-২০১৫ ঈসায়ী]

নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। হিন্দুদের এক কাল্পনিক দেবতা নবী ছিলেন? যে কৃষ্ণ হিন্দুদের বই অনুপাতেই একজন নারীলোভী এবং আপন মামার বিবি রাধাকে ভাগিয়ে বিয়েকারী। এমন অসৎ চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি কিভাবে নবী হতে পারেন?

এরকম অনেক ভ্রান্ত আকীদার কারণে এ নতুন ফিরকাটি একটি কুফরী ফিরক্বায় পরিণত হয়েছে।

প্রকৃত ইসলামের সাথে। কুরআন ও হাদীসের সাথে এদের সামান্যতম কোন যোগসাজস নেই। এটি একটি মনগড়া নতুন মতবাদ। ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে ঈমানহারা করাই যাদের মূল মিশন।

তাদের নামায পড়ার পদ্ধতির মাঝেও রয়েছে ভিন্নতা। রয়েছে কবর দেবার পদ্ধতির মাঝেও।

ধর্ম এবং দেশজাতির জন্য মারাত্মক খতরনাক দল হল “হেযবুত তওহীদ”। তাই তাদের থেকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে সবার সাধ্যমত চেষ্টা করা উচিত। সেই সাথে সামাজিকভাবেও তাদের বয়কট করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা হেযবুত তওহীদ নামক ভ্রান্ত ফিরকাসহ সকল ভ্রান্ত দল থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন। আমীন।

হেযবুত তাওহীদ ও বায়যীদ খান পন্নীর আসল চেহারা!

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– [email protected]

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *