ইবাদত

মেসওয়াকের ফজিলত ও উপকারিতা

মানুষের প্রতিটি কাজে রয়েছে সুন্নাতে নববির দিক নির্দেশনা।

মিসওয়াক করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। মিসওয়াক করার মাঝে রয়েছে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ ও উপকারিতা।

মিসওয়াকের ইহকালীন উপকারিতাঃ

১. আলী (রা.) বলেছেন, মিসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব হয়।

২. দাঁত জীবাণুমুক্ত হয়।

৩. দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়।

৪. দারিদ্র্য দূর হয় এবং পরিবারে সচ্ছলতা আসে।

৫. পাকস্থলী রোগমুক্ত হয়।

৬. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৭. মনে প্রফুল্লতা আসে।

৮. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৯. হৃদয় পরিচ্ছন্ন হয়।

১০. চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

১১. দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।

১২. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

মিসওয়াকের পরকালীন উপকারিতাঃ

১. ফেরেশতারা মিসওয়াককারীর সঙ্গে মুসাফাহা করেন।

২. আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তার জন্য ইস্তেগফার করেন।

৩. বিজলির মতো পুলসিরাত পার হবে।

৪. আমলনামা ডান হাতে পাবে।

৫. ইবাদতে আনন্দ পাবে।

৬. মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হবে।

৭. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে।

৮. দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

৯. গুনাহমুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

১০. আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।

১১. সুন্নত পালন করার সওয়াব প্রাপ্ত হবে।

১২. ইবাদতে ৭০ গুণ সওয়াব পাবে।

মেডিকেল সাইন্সে মিসওয়াকের উপকারিতা:

মিযানুর রহমান জামীল:

মিসওয়াক করার দ্বারা কিডনীর পাথর প্রতিরোধ হয়। থাইরাইড গান্ডরে আক্রান্ত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। গভীর অধ্যাবসায় সুক্ষ্ম ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। মুখের সৃষ্ট তো নিরাময়ের কারণ। এলার্জি দূরিভুত হওয়ার মাধ্যম। মুখের ব্রুণ ও কালো দাগ মুছে ফেলে। ঘুমের মধ্যে সৃষ্ট শ্বাস-প্রশ্বাসে রোগ প্রতিরোধ করে। দেহ সতেজ রাখে। মাথা ব্যথা দূর হয়। মস্তিস্ক সতেজ ও সহায়ক হয়। দাঁতের ব্যথা দূর হয়। দাঁতের শুভ্রতা ও উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। দাঁত শক্ত হয়। ফেরেশতা নূরানী চেহারায় মুসাফাহা করে। মাথা ঠান্ডা রাখে। চুলের গোড়া শক্ত হয়। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি পায়। গলায় মাংসপি- বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। রক্ত পরিষ্কার রাখে। সর্দি-কাশি নিরাময়ে ফলপ্রসূ হয়। হৃদপি- ব্যধির উপকারিতা। পাকস্থলীর কার্যকর ভালো থাকে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। বাকশক্তি সুন্দর ও আর্কষণীয় হয়। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়। নেকী বৃদ্ধি পায়। শরীরের অতিমাত্রার তাপ বা আদ্রতা দূর হয়। শরীর ইবাদতের উপযোগী হয়। সর্ব প্রকার ব্যথা দূর হয়। পিঠ মজবুত হয়। জ্বর থাকলে কমে যায়। জিহ্বা তেজস্বী হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্তানাদি নেক ও ভদ্র হয়। ফেরেশতাগণ মিসওয়াক কারীকে দেখে বলতে থাকে- ‘ঐ ব্যক্তি নবীগণের অনুসারী।’ মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ এমন আকৃতিতে আসেন যেমন আকৃতিতে নবীগণের কাছে আসতেন। মুখের জড়তা, তোতলামি, বাকরুদ্ধতা দূর হয়। যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত মিসওয়াক কাশি দূর করে। যাদের শরীরে ও মাথায় চুল এবং পশম নেই মিসওয়াক করার ফলে সেখানে চুল ও পশম গজায়। শরীরের রং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়। শয়তানের ওয়াস ওয়াসা দূর হয়। নিয়মিত মিসওয়াকের দ্বারা দাঁতের হলুদবর্ণ দূর হয়। দাঁত সাদা ও ধবধবে উজ্জ্বল হয়। জান্নাতে মিসওয়াক কারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব হয়।

মিসওয়াকের এ সুন্নত মানব জীবনের প্রতিটি ধাপে বাস্তবায়ন করা সময়রে দাবি। ইসলামি শরীয়তে মিসওয়াকের এ সুন্নত মানুষের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। চমকদার হিরার টুকরো ফেলে দিয়ে মূল্যহীন একটি কাঁচরে টুকরো যেমনি বুদ্ধিহীনতার কাজ তেমনি মিসওয়াকের মতো মূল্যবান সুন্নতকে বাদ দিয়ে টুথপেস্ট গ্রহণ অনুচিত। সাহাবায়ে কেরামের যামানায় যুদ্ধের সময় কাফেররা মুসলমানের মিছওয়াকের অবস্থা দেখে বলতে লাগলো ‘মিসওয়াক যে জাতির খাদ্য (দাঁত খিলাল) সে জাতির সাথে জয়ের আশা বোকামী’ ফলে ভয়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সে যুগে একটি সুন্নতের উপর আমল করার কারণে মুসলমানদের বিজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এজন্য পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে মিসওয়াকের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যান্য সুন্নতের সঙ্গে নবীজির এ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত মিসওয়াককেও প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। সুন্নতে নববীর ছোঁয়ায় জীবনের প্রতিটি অঙ্গন হয়ে উঠুক সফলতার বর্ণিল ক্যাম্পাসে সমৃদ্ধ। শেষ জামানায় একটি সুন্নত আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে করে দিতে পারে সুন্দর্যের শোভায় শোভামণ্ডিত। এ প্রত্যাশাই করি।

মেসওয়াক বেশি প্রিয় হওয়ার কারণঃ

১. একবার হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁতন বা মেসওয়াক আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়তে দাঁড়ায়; তখন ফেরেশতারা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কেরাত শুনতে থাকেন। ফেরেশতারা তার কাছাকাছি হতে থাকেন।

পরিশেষে ফেরেশতা নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে  কোরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফেরেশতার পেটে প্রবেশ করে। সুতরাং কোরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো।’ (মুসনাদে বাযযার, তারগিব)

২. নবিজি বলেছেন, ‘মেসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো। কারণ, মুখ হল কোরআনের পথ।’ (সিলসিলাহ)

৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মেসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)

৪. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেসওয়াক এত প্রিয় ছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে দেওয়া দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করেছেন।’ ( বুখারী, মিশকাত)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করার ক্ষেত্রে তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন বা মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় মেসওয়াকের আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত অনুযায়ী দুনিয়া ও পরকালের উপকারিতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *