ইবাদত

বিবিধ আদব-কায়দা

১. যে সব রোগে মানুষের ঘৃণা বোধ হয়, তা নিয়ে মানুষের মাঝে যাওয়া উচিত নয় ৷

২. কুলক্ষণ, কুযাত্রা, অশুভ ইত্যাদি মানা বা বিশ্বাস করা এক প্রকারের শিরক ৷

৩. ভাগ্য গণনা করা, ভাগ্য নির্ণয় করা, ভবিষ্যতের কথা বলা,জ্বীন তাবে করা ইত্যাদি কাজে ঈমানের ক্ষতি হয়। 8. যা নিজের জন্য পছন্দ করবে, তা-ই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পছন্দ করবে।

৫. অনুমতি ছাড়া অন্যের কাপড় দিয়ে হাত মুছবে না, হয়ত সে মনে কষ্ট পেতে পারে।

৬. সকলের সঙ্গে মিষ্ট আলাপ করবে, হাসিমুখে কথা বলবে।

৭. এরকম কথা কখনও বলবে না যে, ‘যদি আল্লাহ চান এবং অমুকে চায়’ বা ‘ওপরে আল্লাহ নিচে তুমি’। হ্যাঁ, এই রকম বলা যেতে পারে, “যদি আল্লাহ চান এবং তারপর তুমি চাও বা অমুকে চায়।

৮. ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখবে। বাড়ির সামনেও নোংরা রাখবে না। —জামে তিরমিযী

৯. কোনো প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা হারাম। -সহীহ বুখারী

১০. নারীদের জন্য যেমন হুকুম আছে যে, অপর পুরুষ যেন তাদের গলার আওয়াজ শুনতে না পারে, তেমনই পুরুষেরাও ভালো সুরে গান গেয়ে বা গযল গেয়ে নারীদের শুনাবে না।

১১. গান-বাদ্য কখনও শুনবে না। কারণ শরীয়তের নিষেধ তো আছেই, তা ছাড়া এতে অন্তর একেবারে কালো হয়ে যায়।

১২. সদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কখনও বলবে না। হ্যাঁ, দুইজন লোকের মধ্যে মন কষাকষি হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে মিল করে দেয়ার মানসে পুরোপুরি সত্য নয়- এমন কিছু কথাও বলা যায়। যেমন একজনের কাছে গিয়ে অন্য জনের প্রশংসাস্বরূপ বলবে, ‘সে তো তোমাকে বড় ভালোবাসে, বড় ভালো জানে’ ইত্যাদি, এরকম মিথ্যা বলায় দোষ নেই। তবে এক্ষেত্রেও সরাসরি মিথ্যা না বলে কৌশল অবলম্বন করা উচিত।

১৩. সাক্ষাতে কারও প্রশংসা করবে না, কারও প্রশংসা করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখবে-

ক) যতোদূর গুণ আছে, তারচেয়ে বেশি বলবে না।

খ) যে বিষয় নিশ্চিতরূপে জানা নেই, তা নিশ্চিত করে বলবে না।

গ) ফাসেক-ফাজেরদের প্রশংসা করবে না।

১৪. কোনো ফাসেকের প্রশংসা করা হলে আল্লাহ তা’আলার আরশ কেঁপে উঠে।

১৫. ঘটনাক্রমে নট্স ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যদি কখনও কোনো গুনাহ্ হয়ে যায়, তবে তা যার-তার কাছে বলে বেড়াবে না। চুপে চুপে আল্লাহ তা’আলার কাছে কেঁদে কেঁদে তাওবা করবে বা নিজের পীরের নিকট বলে চিকিৎসা করাবে।

১৬. ঘটনাক্রমে অন্য কারও দ্বারা কোনো গুনাহ্-খাতা হয়ে গেলে মুহাব্বত ও কল্যাণকামিতার সঙ্গে চুপে চুপে নরমভাবে তাকে নসীহত করবে। কিন্তু শুধু তাকে লজ্জা দেয়ার মানসে লোকের মধ্যে বলে শরম দেয়া বা মন্দ বলা বা খোঁটা দেয়া ভারী অন্যায়। মনে ভয় থাকা চাই, হয়তো আমিও ওই গুনাহে পড়ে যেতে পারি। তাছাড়া নিজের দোষ দেখা চাই, অন্যের দোষ দেখে কোনো লাভ নেই, কিন্তু আমাদের চোখে এমনই পর্দা পড়েছে যে, নিজের বড় বড় দোষগুলোও না দেখে পরের সামান্য দোষটাও দেখতে পাই। -জামে তিরমিযী

১৭. মিথ্যা ওয়াদা কখনও করবে না, এমনকি বাচ্চাদেরকে ভুলাবার জন্য মিথ্যা ওয়াদা করবে না। যেমন অনেকে দেয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বাচ্চাদেরকে বলে থাকে, মিঠাই দিবো, বিস্কুট দিবো ইত্যাদি। এরূপ বলবে না। হ্যাঁ, দেয়ার নিয়তে বলা যেতে পারে।

১৮. যার যেমন মর্যাদা তার তেমন সম্মান করবে। সকলের সঙ্গে এক রকম ব্যবহার করবে না। -আবু দাউদ

১৯. যে কাজ করবে, খুব চিন্তা করে পরিণামফল ভেবে করবে। কারণ হঠাৎ কাজ করে অনেক সময় বিপদগ্রস্ত হতে হয়, কিন্তু নেক কাজে দেরী করো না। -শরহুস সুন্নাহ

২০. হিসাব করে খরচ করবে। লোক সমাজে অপ্রিয় হতে হয়, এমন কোনো আচরণ করবে না। কোনো কথা জিজ্ঞাসা করতে হলে পরিষ্কারভাবে জিজ্ঞাসা করবে। -বায়হাকী

২১. দেনা-পাওনা, দাবি-দাওয়া মাফ করিয়ে রাখবে, নতুবা কিয়ামতের দিন বড়ই মসীবতে পড়তে হবে। -সহীহ বুখারী

২২. মানুষকে নসীহতের কথা বলতে থাকবে। হ্যাঁ, একান্ত যদি শোনার আশা না থাকে বা উল্টা কষ্ট দিবে এরূপ আশঙ্কা থাকে, তবে চুপ করে থাকা জায়েয আছে, কিন্তু মন্দকে সর্বদা মন্দই মনে করতে থাকবে। মানুষ শরীয়তের কথা শুনে না দেখে তাদের মতো হওয়া যাবে না। -জামে তিরমিযী

২৩. কোনো জীবকে যবেহ করতে হলে ছুরি খুব ধার দিয়ে নিবে, কষ্ট দিয়ে মারবে না। গলা ছিঁড়ে বা গাল চেপে মারলে জানোয়ারের ভয়ানক কষ্ট হয়, এজন্য আল্লাহ্ তা’আলা এমনটি হারাম করেছেন। -সহীহ মুসলিম

২৪. যে নিজে পদপ্রার্থী হয়, সে অনুপযুক্ত এবং স্বার্থপর। পক্ষান্তরে যে পদ ও দায়িত্ব থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আশা করা যায় যে, বিচারে সে-ই বেশি ন্যায়পরায়ণতা এবং সাধুতা দেখাবে। অতএব, তাকেই দায়িত্ব ও পদ দেয়া উচিত। -সহীহ বুখারী

২৫. ক্রীড়া-কৌতুকরূপে ঢিল বা গুলাল মারা জায়েয নয়, কারণ হয়তো কারও গায়ে লাগতে পারে। -জামে তিরমিযী

২৬. দা, ছুরি বা তরবারি ইত্যাদি দ্বারা হাসি-তামাশারূপেও কারও দিকে ইশারা করবে না। কারণ হয়তো হাত থেকে ছুটে গিয়ে গায়ে লাগতে পারে। -সহীহ বুখারী

২৭. পাখির বাসা থেকে বাচ্চা ধরে এনে তাদের মা-বাপকে কষ্ট দেয়া জায়েয নয়। -আবু দাউদ

২৮. নেশার জিনিস অল্প ব্যবহার করাও নাজায়েয ।

২৯. শরীক হয়ে কোনো কাজ করলে সকলের মন সরল থাকা দরকার এবং দিয়ানতদারী ও আমানতদারীর সঙ্গে সব কাজ করবে, নতুবা বরকত উঠে যাবে। -আবু দাউদ

৩০. জুলুম করে, লজ্জায় শরমে ফেলে, নিজের সরদারি বা বড় মানুষি দেখিয়ে যা কিছু নেয়া হয়, তা হারাম। স্মরণ রাখবে- হালাল শুধু সেই জিনিস যা স্বেচ্ছায় সন্তুষ্টচিত্তে দেয়া হয়।

৩১. হাসি তামাশা করে কারো কোনো জিনিস লুকিয়ে রাখবে না বা নিয়ে আসবে না। -জামে তিরমিযী

৩২. অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করবে না। বিশেষত আল্লাহ তা’আলার নাম নিয়ে অঙ্গীকার করে যদি তা ভঙ্গ করা হয়, তবে তার ফরিয়াদি হবেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা । -সহীহ বুখারী

৩৩. শরীয়ত মোয়াফেক ঝাড়-ফুঁক করে বা তা’বীয দিয়ে কিছু নযরানা নেয়া জায়েয আছে। -আবু দাউদ

৩৪. এক সন্তানকে কোনো জিনিস দিলে, তবে অন্য সন্তানদেরকেও সেইরূপ দিবে, বে-ইনসাফী করবে না। -সহীহ বুখারী

৩৫. এক কাপড়ের নিচে দুইজন পুরুষ বা দুইজন মেয়েলোক শোয়া বড়ই খারাপ এবং লজ্জার কথা ৷

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *