বৎসর ও তারিখ সম্পর্কিত ৯ টি মাসআলা।
০১.মাসআলা : এক বছর অতিবাহিত হওয়ার উদ্দেশ্য হল, কোন ব্যক্তি মালের মালিক হওয়ার পর তার মালিকানায় তা পূর্ণ এক বছর না থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয় না। আর বছর দ্বারা চন্দ্রবর্ষ উদ্দেশ্য: সৌরবর্ষ তথা ঈসায়ী বছর উদ্দেশ্য নয়। কেননা চন্দ্রবর্ষ হিসেবে বছর হয় তিনশত চুয়ান্ন (৩৫৪) দিনে; অথচ সৌরবর্ষ হিসেবে তিনশত পঁয়ষট্টি (৩৬৫) দিনে বছর পূর্ণ হয়। কখনো কখনো একদিন অতিরিক্ত হয়ে তিনশত ছেষট্টি (৩৬৬) দিনেও বছর পূর্ণ হয়ে থাকে। (কিতাবুল ফিকহ : ১/৯৬৪)
০২. মাসআলা : যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু চন্দ্রবর্ষের বিবেচনা হয়, তাই চন্দ্রবর্ষের হিসেবেই যাকাত দিবে। সৌরবর্ষের হিসেবে যাকাত দেওয়া একান্ত জরুরী হয়ে পড়লে অতিরিক্ত দশ (১০) দিনের যাকাত আদায় করে দিতে হবে। (কিফায়াতুল মুফতী : ৪/১৪৫)
০৩. মাসআলা : যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে তারিখ ধর্তব্য হবে । অর্থাৎ যে তারিখে বছর পূর্ণ হবে, সেই তারিখেই যাকাত ওয়াজিব হবে। যাকাত যখনই আদায় করুক এ তারিখে ওয়াজিব হয়েছে বিধায় এর হিসাবেই আদায় করতে হবে। আগামী বছরের এ তারিখেই পূণরায় যাকাত ওয়াজিব হবে। (মিশকাত শরীফ : ১/১৫৭)
০৪. মাসআলা : এ ক্ষেত্রে মূল বিধান হলো যে তারিখে আপনি নেসাবের মালিক হয়েছেন, পরবর্তী বছরের ঐ তারিখেই আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে। অবশ্য যাকাত অগ্রিম আদায় করা যেমনি বৈধ অনুরূপ কিছু বিলম্বে আদায়েরও অবকাশ আছে। এজন্য কোন এক তারিখ নির্দিষ্ট করে নিবে। এর ব্যত্যায় ঘটলে কোন অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী : ৪/৫)
০৫. মাসআলা : চন্দ্র বৎসর শেষ হওয়ার পর কারো নিকট যে পরিমাণ (নেসাব) মাল থাকবে, তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। যদি কারো যাকাতবর্ষ ১ম মহররমে শুরু হয়, তবে আগামী বছরের ১লা মুহাররামে তার নিকট যে পরিমাণ মাল থাকবে, তার যাকাত আদায়চাই তাতে কিছু পরিমাণ মাল দু’মাস পূর্বে আসুক কিংবা দুই দিন পূর্বে। অর্থাৎ বছরের মাঝখানে যে মালই অর্জিত হবে যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে তার জন্য ভিন্ন হিসাব করা হবে না; বরং মূল নেসাবের বর্ষ পূর্তির সাথে সাথে কিছু অংশ বর্ষ পূর্তি না হলেও পূর্ণ সম্পদের যাকাত ওয়াজিব হবে। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৬২)
৬. মাসআলা : যাকাত আদায়ের জন্য শরয়ীভাবে কোন মাস ও দিন তারিখ নির্দিষ্ট নেই। অবশ্য কিছু মাস ও দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অর্থাৎ যে সব মাস বিশেষ বরকতপূর্ণ (যেমন রমযানুল মুবারক) তাতে সাদাকা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করাও বরকতপূর্ণ। তবে যে মাসেই যাকাত আদায় ওয়াজিব হবে, সে মাসেই আদায় করে দিবে এবং পরবর্তিতে যাকাতের হিসাবের জন্য এই মাসকেই নির্দিষ্ট করে নিবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৭২) উদাসীনতার কারণে যাকাত না দিলে
০৭. মাসআলা : নেসাবের মালিক উদাসীনতার কারণে এক বছর যাকাত আদায় না করলে পরবর্তী বছর বিগত বছরের যাকাতসহ একত্রে দু’বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে হিসাব এভাবে করবে যে, গত বছরের যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার দিন যে পরিমাণ সম্পদ ছিল ঐ সম্পদের যাকাত দিয়ে দিবে। আর এ বছর যে পরিমাণ সম্পদ আছে, এ বছরের যাকাত আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৬৫)
বছরের মাঝখানে মাল অর্জিত হলে
০৮. মাসআলা : নেসাবের মালিক হওয়ার পর নেসাবের উপর বছর অতিক্রান্ত হলে বছরের মাঝখানে যত সম্পদ অর্জিত হবে, পূর্ণ সম্পদেই যাকাত ওয়াজিব হবে। অর্থ- সম্পদের প্রত্যেকটা অংশের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। সুতরাং রমযান মাসে আপনার নিকট যে পরিমাণ সম্পদ থাকবে; পূর্ণ সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৫৬)
০৯. মাসআলা : যখন সাহেবে নেসাব ব্যক্তির মালের উপর বছর পূর্ণ হয়ে যায়, তখন পূর্ণ যাকাত আদায় করে দেয়া উচিত। কেননা হতে পারে যে, হঠাৎ মৃত্যু এসে যেতে পারে এবং যাকাতের ফরজ ঘাড়ের উপর থেকে যেতে পারে। যদি বছর শেষ হওয়ার পর যাকাত না দেয়, ইতিমধ্যে যদি দ্বিতীয় বছর ও অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে গুনাহ হবে। তা থেকে তাওবা করে উভয় বছরের যাকাত আদায় করে দেওয়া উচিত । (শামী : ২/১৭১)
তথ্যসূত্রঃ
কিতাবঃ যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি লেখকঃ মাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী