জুমার নামাজ সহিহ হওয়ার শর্তসমূহ
[জুমু’আর নামায ওয়াজিব হওয়ার জন্য ৬টি শর্ত আছে, যথাঃ]
১। মুক্বীম হওয়া। অতএব, মুসাফিরের উপর জুমু’আ ওয়াজিব নহে, (কিন্তু যদি পড়ে, তবে উত্তম। মুসাফির যদি কোথাও ১৫ দিন অবস্থান করিবার ইচ্ছা করে, তবে তাহার উপর জুমু’আ ওয়াজিব হইবে।)
২। সুস্থকায় হওয়া। অতএব, যে রোগী জুমুআর মসজিদ পর্যন্ত নিজ ক্ষমতায় হাঁটিয়া যাইতে অক্ষম তাহার উপর জুমু’আ ফরয হইবে না। এইরূপে যে বৃদ্ধ বার্ধক্যের দরুন জামে মসজিদে হাঁটিয়া যাইতে অক্ষম কিংবা অন্ধ, ইহাদিগকে রোগী বলা হইবে; তাহাদের উপর জুমু’আর নামায ফরয নহে।
৩। আযাদ হওয়া। গোলামের উপর জুমু’আ ফরয নহে।
৪। পুরুষ হওয়া। স্ত্রীলোকের উপর জুমু’আ ফরয নহে।
৫। যে সব ওযরের কারণে পাঞ্জেগানা নামাযের জমাআত তরক করা জায়েয হয় সেই সব ওযর না থাকা। যথা, (ক) মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া। (খ) রোগীর সেবা-শুশ্রূষায় লিপ্ত থাকা (গ) পথে শত্রুর ভয়ে প্রাণ নাশের আশঙ্কা থাকা। (পথ দেখিতে পায় না এরূপ অন্ধ হওয়া। পথ চলিতে পারে না এরূপ খঞ্জ হওয়া ইত্যাদি যাহা জমা’আতের বয়ানে বর্ণিত হইয়াছে।)
৬। পাঞ্জেগানা নামায ফরয হইবার জন্য যে সব শর্ত আছে তাহা মৌজুদ থাকা। যথা : আকেল হওয়া, বালেগ হওয়া, মুসলমান হওয়া, এইসব শর্তে জুমুআর নামায ফরয হয়, কিন্তু যদি কেহ এই শর্ত ছাড়াও জুমুআ পড়ে, তবুও তাহার ফরযে-ওয়াক্ত অর্থাৎ, যোহর আদায় হইয়া যাইবে। যেমন, কোন মুসাফির অথবা কোন স্ত্রীলোক যদি জুমুআর নামায পড়ে, যোহর আদায় হইয়া যাইবে।
(জুমু’আর নামায ছহীহ্ হইবার শর্তসমূহ)
১। শহর হওয়া। অর্থাৎ, বড় শহর বা ছোট শহর বা ছোট শহরতুল্য গ্রাম’ হওয়া। অতএব, ছোট পল্লীতে বা মাঠে (বা বিলের) মধ্যে (নদীর বা সমুদ্রের মধ্যে) জুমু’আর নামায দুরুস্ত নহে। যে গ্রাম ছোট শহরতুল্য অর্থাৎ, ৩/৪ হাজার লোকের বসতি আছে, তথায় জুমু’আর নামায দরুস্ত আছে।
(টিকা) ১ মোছান্নেফ (রঃ) কিতাবে লিখিয়াছেন যে গ্রামের লোকসংখ্যা ছোট শহরের লোকসংখ্যার সমান অর্থাৎ যে গ্রামে তিন চার হাজার লোকের বাস, সে গ্রামে জুমু’আ দুরুস্ত আছে। বঙ্গদেশে যে সব একলাগা বসতি গ্রাম নামে কথিত হয়, তথায় জুমু’আ দুরুস্ত হওয়া না হওয়া সম্বন্ধে আলেমগণের মতভেদ দেখা যায়। অধীন মোতার্জেম বলে—আমি একলাগা বসতিসমূহে জুমু’আ পড়িয়া থাকি। অবশ্য বন, চর বা বিলের মধ্যে আবাদি হইতে অনেক দূরে কোন ছোট গ্রাম থাকিলে তথায় নিশ্চয় জুমু’আ দুরুস্ত হইবে না। যে স্থানে জুমু’আ দুরুস্ত হওয়া সম্বন্ধে মতভেদ হওয়ার কারণে সন্দেহ আসিয়া গিয়াছে তথায় সন্দেহ ভঞ্জনের জন্য চারি রাকা’আত (আখেরী যোহর) এহতিয়াতি যোহর পড়িয়া থাকি।
২। যোহরের ওয়াক্ত হওয়া। অতএব, যোহরের ওয়াক্তের পূর্বে বা পরে জুমুআর নামায পড়িলে তাহা দুরুস্ত হইবে না। এইরূপে জুমুআর নামায পড়িতে পড়িতে যদি যোহরের ওয়াক্ত চলিয়া যায়, তবে জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না, যদিও দ্বিতীয় রাকা’আতে আত্তাহিয়্যাতু পড়িতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু বসিয়া থাকে। আর জুমুআর নামাযের ক্বাযাও নাই। (কাজেই এই কারণে বা অন্য কোন কারণে জুমুআর নামায ছহীহ্ না হইলে যোহর পড়িতে হইবে।)
৩। খুৎবা। অর্থাৎ, মুছল্লিদের সম্মুখে আল্লাহ্ তা’আলার যিকর করা, শুধু সোবহানাল্লাহ্ বলা হউক বা আল্হামদু লিল্লাহ্। অবশ্য শুধু এতটুকু বলিয়া শেষ করা সুন্নতের খেলাফ তাই মকরূহ্ হইবে।
৪। নামাযের পূর্বে খুৎবা পড়া। নামাযের পূর্বে খুৎবা না পড়িয়া পরে পড়িলে জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না।
৫। খুৎবা যোহরের ওয়াক্তের মধ্যে হওয়া। অতএব, যোহরের ওয়াক্তের পূর্বে খুৎবা পড়িলে জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না।
৬। জমা’আত হওয়া। অর্থাৎ, খুৎবার শুরু হইতে প্রথম রাকাআতের সেজ্দা পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে অন্ততঃ তিনজন পুরুষ থাকা চাই। যদিও খুৎবায় যে তিনজন উপস্থিত ছিল চলিয়া যায় এবং অন্য তিনজন নামাযে শামিল হয়। কিন্তু শর্ত এই যে, লোক তিনজন ইমামতের যোগ্য হওয়া চাই। সুতরাং শুধু স্ত্রীলোক বা নাবালেগ ছেলে মুক্তাদী হইলে জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না।
৭। যদি সেজ্দা করার পূর্বে লোক চলিয়া যায় এবং তিন জনের কম অবশিষ্ট থাকে, কিংবা কেহই না থাকে, তবে নামায ফাসেদ হইয়া যাইবে, অবশ্য যদি সেজদা করার পর চলিয়া যায়, তবে কোন ক্ষতি নাই ।
৮। এ’লানে আম এবং এজাযতে আম্মা। অর্থাৎ, যে স্থানে জুমু’আর নামায পড়া হয়, সে স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকা চাই। সুতরাং, যদি কোন স্থানে গুপ্তভাবে নামায পড়া হয় যেখানে সাধারণের প্রবেশের অনুমতি নাই বা মসজিদের দরজা বন্ধ করিয়া জুমুআর নামায পড়ে, জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না । এইসব শর্ত জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবার শর্ত। কাজেই ইহার একটি মাত্র শর্তও যদি না পাওয়া যায়, তবে জুমু’আর নামায দুরুস্ত হইবে না, যোহর পড়িতে হইবে। যে স্থানে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, জুমু’আর নামায দুরুস্ত নহে, সেখানে যোহর পড়াই ফরয, সেখানে জুমু’আ নফল মাত্র এবং নফল ধুমধামের সহিত জমা’আত করিয়া পড়া মকরূহ্। সুতরাং এমতাবস্থায় জুমু’আর নামায পড়া মকরূহে তাহরিমী।
সূত্রঃ বেহেশতী জেওর
লিখকঃ আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)