ধরা পড়লো চোর : বেঁচে গেলো স্ত্রী
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বর্ণনা করেন, ধূর্ত এক চোর একবার এক ব্যক্তির ঘরে ঢুকে ঘরের সব মূল্যবান আসবাবপত্র গোছাতে লাগলো। আওয়াজ পেয়ে বাড়ির মালিক ঘুম থেকে জেগে উঠতেই চোর তাকে জাপটে ধরলো। অস্ত্র দেখিয়ে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখালো এবং জোরপূর্বক তাকে এই মর্মে কসম করালো যে, যদি আমি কারো নিকট তোমার কথা বলি অথবা কোনোরূপ হট্টগোল করি, তাহলে আমার স্ত্রী তিন তালাক।
মালিককে এই কসম করিয়ে চোর তার চোখের সামনে ঘরের সমস্ত আসবাব নিয়ে চলে গেলো।
সকালে লোকটি বাজারে এসে দেখতে পেলো, সেই ধূর্ত চোর তার মূল্যবান আসবাবগুলো প্রকাশ্যে বিক্রির জন্য বসেছে। কিন্তু কসমের কারণে সে কিছুই বলতে পারছে না এবং কাউকে কিছু জানাতেও পারছে না।
চোখের সামনে নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি হতে দেখে কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে লোকটি পরামর্শের জন্য ইমাম আবু হানীফা রহ. এর নিকট এলো এবং পুরো ঘটনা খুলে বললো।
ইমাম আবু হানীফা রহ. ঘটনার পরিপূর্ণ বিবরণ শুনে বললেন, তুমি তোমার এলাকার মসজিদের ইমাম মুআজ্জিন ও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আসো।
লোকটি সকলকে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর নিকট আসার দাওয়াত দিয়ে এলো। কিছুক্ষণ পর সকলে উপস্থিত হলো। ইমাম আযম রহ. বললেন, আপনারা কি চান, আল্লাহ তাআলা আপনাদের এই ভাইয়ের সম্পদগুলো ফিরিয়ে দিন?
সকলেই একত্রে বলে উঠলো, হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা চাই।
ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, তাহলে আপনাদের এই এলাকার সন্দেহভাজন খারাপ লোকদের মসজিদে একত্রিত করুন। তারপর আপনাদের মধ্য থেকে দু’জন লোক দরজায় দাঁড়াবে, সাথে এই লোকও থাকবে। অতঃপর পালাক্রমে একজন একজন করে বের হবে এবং প্রত্যেকের ব্যাপারে এই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন, এই লোকটি কি চোর?
যদি সে চোর না হয়ে থাকে, তাহলে সে বলবে, না এই লোক চোর নয়। আর যে ব্যক্তি বাস্তবেই চুরি করে থাকে, সে যখন বের হবে, তখন মালিক কোনো কথা বলবে না; বরং চুপ থাকবে। এভাবেই চোর বেরিয়ে আসবে। তখন চোরকে পাকড়াও করা হবে। লোকজন তা-ই করলো এবং চোর বেচারাও ধরা পড়লো। মালিকের স্ত্রী আর তালাক হলো না।
এভাবেই ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বিচক্ষণতার বদৌলতে আল্লাহ তাআলা তাঁর অনেক বান্দাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন।
তথ্যসূত্র:
বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প
লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ