ইবাদত

দীর্ঘ আশা ও আকাঙ্খা থেকে বেঁচে থাকতে যা প্রয়োজন

দীর্ঘ আশা মানুষের জন্য অনেক বড় দুর্ভাগ্যের কারণ। শয়তান মানুষকে বলে, আরে বোকা! সামনে তো অনেক সময় আছে। এই সময়টা ভোগ করতে হবে এবং বড় বড় আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে হবে। শয়তানের এই কুমন্ত্রণায় প্রতারিত হয়ে মানুষ তার সকল মনোযোগ দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের পিছনে নিয়োজিত করে। বড় বড় স্বপ্ন দেখতে থাকে এবং সেই স্বপ্নের পিছনেই ছুটতে থাকে। এভাবে সে আখিরাতের কথা ভুলে যায়।

বাস্তবতা হচ্ছে, দুনিয়ার আসবাব ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। আর প্রয়োজনীয় পরিমাণ আসবাব গ্রহণ করাও দোষণীয় নয়। তবে দোষণীয় হচ্ছে দুনিয়ার আসবাবের মহব্বতে তা দ্বারা আকৃষ্ট হওয়া এবং তা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া।

পবিত্র কুরআনে কারীমায় মহান আল­াহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘হে মানুষ সকল! নিশ্চয়ই আল­াহর অঙ্গীকার সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকা না দেয় এবং সেই প্রতারণাকারী যেন আল­াহর ব্যাপারে তোমাদের প্রতারিত না করে।’(সূরা ফাতির : ৫)

শরীয়তের শিক্ষা হল দুনিয়াতে থাক; কিন্তু তার প্রতারণার শিকার হবে না। কারণ দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা। যার মধ্যে অনেক চিত্তাকর্ষক বস্তু আছে, যা মানুষের মনকে আকর্ষণ করে এবং নিজের দিকে টানে। তাই এসব লোভনীয় বস্তুর ভালবাসা অন্তরে স্থান দেবেনা। পার্থিব সাজ-সরঞ্জাম অর্জিত হলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত হল, এগুলোর মধ্যে অন্তর যেন মগ্ন না হয়ে যায়। (ইসলাম আওর হামারী যিন্দেগী)

মাওলানা রুমী বলেছেন, নৌকার ভিতরে পানি প্রবেশ করলে নৌকা ডুবে যায়, কিন্তু নৌকার নীচে পানি থাকলে নৌকা চলাচলে সাহায্য করে। অনুরূপভাবে দুনিয়ার আসবাবের মহব্বত ক্বাল্বের মধ্যে প্রবেশ করলে ধ্বংস অনিবার্য।

এজন্য যে বিষয় গুলির দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

১. মূলত প্রয়োজন পরিমাণ আসবাব সঠিক পন্থায় উপার্জন করা এবং প্রয়োজনকে সীমার মধ্য রাখা। মোট কথা, দুনিয়ার আসবাবকে আখেরাতের উদ্দেশ্যে তলব করা। দুনিয়ার আসবাবের ওছিলায় আখেরাতের সম্বল সংগ্রহ করা। এবাদতের জন্য দুনিয়ার আসবাবের সাহায্য গ্রহণ করা।

২. দুনিয়ার মহব্বত দ্বীল থেকে বের করা। শাহ্ হাকীম মুহাম্মদ আখতার ছাহেব রহমাতুল­াহি আলাইহি বলেন, ‘দুনিয়ার মহব্বত সকল গুনাহের মূল’। এই ধোকার ঘরই মানুষেকে আখেরাত হতে গাফেল বানিয়ে দেয় এবং কবরস্থানে শোওয়াইয়া একদিন তাকে ঘর ছাড়া করে দেয়।

৩. দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া। স্বয়ং রসূলে কারীম সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­ামের অবস্থা লক্ষ্য করুন। একদিন আহার করলে কয়েকদিন অনাহারে থাকতেন। রসূলে কারীম সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, ‘আল­াহ আমাকে বললেন, তিনি আমার জন্য মক্কার ‘বাতহা’কে স্বর্ণে পরিণত করে দেবেন।’ আমি বললাম, ‘না, আল­াহ! তার চেয়ে আমি একদিন আহার করব, আরেকদিন অনাহারে থাকবো। অনাহারে থাকলে তোমার দরবারে রোনাজারি করব এবং তোমাকে স্মরণ করব। যখন আহার পাবো তখন তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব এবং প্রশংসা করব। (জামে তিরমিযী)

৪. দুনিয়াকে নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ জ্ঞান করা। অল্পে তুষ্টির গুণ হাসিল করা। অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ। কারণ প্রকৃত মু’মিন সর্বদা নিজেকে মহান স্রষ্টার নে‘আমতে ডুবে আছে বলে অনুভব করে। তাই সে সবসময় কৃতজ্ঞতা পরায়ণ হয়। সে যখন যা পায় তাকেই নিজের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গণ্য করে। তাই সে না পাওয়া বা বঞ্চিত হওয়ার মর্মপীড়ায় ভোগে না।

৫. জীবন উপকরেণর ক্ষেত্রে নিম্ন মানের ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা। রসূলাল­াহ্ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের চেয়ে নিম্ন মানের ব্যক্তির দিকে তাকাও। আর তোমাদের উর্ধ্বতন ব্যক্তির দিকে তাকিও না। কারণ, সে উপযুক্ত ও যোগ্যব্যক্তি। আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল­াহ প্রদত্ত নিয়ামতকে তুচ্ছ মনে করো না।’(বুখারী, মুসলিম)

৬. অল্পে তুষ্টির গুণ হাসিল করা। অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ। কারণ প্রকৃত মু’মিন সর্বদা নিজেকে মহান স্রষ্টার নে‘আমতে ডুবে আছে বলে অনুভব করে। তাই সে সবসময় কৃতজ্ঞতা পরায়ণ হয়। সে যখন যা পায় তাকেই নিজের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গণ্য করে। তাই সে না পাওয়া বা বঞ্চিত হওয়ার মর্মপীড়ায় ভোগে না।

৭. বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ করা।

৮. কবরের জীবনের কথা স্মরণ করা।

৯. এছাড়াও সুন্নাতের অনুসারী বিশুদ্ধ জ্ঞান ও বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী কোন ব্যক্তিকে নিজের অনুসরণীয় ব্যক্তি বানিয়ে নেয়া। ব্যক্তি বিশেষ আশা ও আকাঙ্খার ধরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। আমার জন্য কোন ধরণের আশা করা বা কোন ধরণের আসবাব গ্রহণ করা উত্তম, আবার কোন ধরণের আশা করা বা কোন ধরণের আসবাব গ্রহণ করা অনুত্তম? কি ধরণের আকাঙ্খা আমি করতে পারি বা কোন ধরণের আকাঙ্খা আমার জন্য করা উচিৎ হবে না? এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে আমরা অনেকেই আছি এমন যারা কোন জিনিসে কল্যাণ আর কোন জিনিসে অকল্যাণ তা আমরা ভালোভাবে জানি না। অথচ এ বিষয়সমূহের ইলম হলো অত্যন্ত উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ। কল্যাণ ও অকল্যাণের চাবি কি তা জানা অনেক বড় ইলম। এই বিষয়গুলি বড়ই নাজুক। সাধারণ মানুষের জন্য এই বিষয়গুলিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। শয়তান তার নেক সুরতে মানুষকে বিপথগামী করে। শয়তানের নেক সুরত বুঝতে পারা এবং নিজের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা একজন সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কঠিন। এজন্য একজন আল­াহওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে নেওয়া। তাঁর কাছে নিজের বিভিন্ন অবস্থাগুলো জানানো এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা।

আল­াহই সর্বজ্ঞ। মহান আল­াহ তা’য়ালা আমাদের দুনিয়ার আশা-আকাঙ্খা সীমিত করে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৈফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : বায়োকেমিস্ট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *