ইবাদত

এক ব্যক্তির একাধিক জানাজা পড়া যাবে?

বর্তমানে এক মাইয়েতের একাধিক জানাজা পড়তে দেখা যায়। অনেকেই এটাকে প্রভাব ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে মনে করেন। বিশেষ করে সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোকেরা যখন ইন্তেকাল করেন তখন তার এক জানাজা শহরে, আরেক জানাজা গ্রামে এভাবে করতে করতে একাধিক জানাজা হয়ে যায়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করে একাধিক জানাজা পড়ার মাধ্যমে মূলত মাইয়েতকে কষ্ট দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এর প্রচলন ছিল না।

মৃত ব্যক্তির অভিভাবকের উপস্থিতিতে বা অনুমতিসাপেক্ষে জানাজা পড়া হলে দ্বিতীয়বার জানাজা জায়েজ নেই। তবে যদি অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত জানাজা পড়া হয়ে যায়, তবে শুধু অভিভাবক জানাজা পুনরাবৃত্তির অধিকার রাখে। এই সুরতে যারা প্রথম জানাজায় অংশগ্রহণ করেনি তারা দ্বিতীয় জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর যারা প্রথম জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিল তারা অভিভাবকের সঙ্গে দ্বিতীয় জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তেমনিভাবে কেউ যদি অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানকার লোকজন অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত ওই দেশে জানাজা পড়ে নেয়, তা হলে লাশ দেশে আনার পর অভিভাবক দ্বিতীয়বার জানাজার নামাজ পড়তে পারবে। আর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে জানাজা পড়লে দ্বিতীয়বার জানাজা পড়তে পারবে না।

আসলে জানাজা হচ্ছে ফরজে কেফায়া। আর কোনো ফরজ বিধান একাধিকবার আদায় করা যায় না। তবে নফল একাধিকবার আদায় করা যায়। যেমন-হজ জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। কেউ একাধিকবার হজ করলে প্রথমটা তার ফরজ হিসেবে আদায় হবে এবং বাকিগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে। তেমনিভাবে কেউ যদি জোহরের ফরজ একা আদায় করে নেয় এবং পরবর্তী সময়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে শরিক হয়, তা হলে তার প্রথম নামাজ ফরজ হিসেবে আদায় হবে এবং ইমামের সঙ্গে যে নামাজ পড়েছে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে জানাজার ব্যাপারটি ভিন্ন, কেননা জানাজার নফল বিধান শরিয়তে নেই। তাই একবার জানাজা পড়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার ফরজের পুনরাবৃত্তির অবকাশ নেই। তবে অভিভাবককে যেহেতু শরিয়ত নির্দিষ্ট হক প্রদান করেছে তাই অভিভাবকের ব্যাপারটি ভিন্ন।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জানাজাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তবে তো তাকে তার শুভ পরিণতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি বদকার হয়, তা হলে তো তোমাদের ঘাড় থেকে আপৎ সরিয়ে দিচ্ছ!’ (বুখারি : ১৩১৫)।

এ হাদিসে বিলম্ব না করে লাশ তাড়াতাড়ি দাফন করতে বলা হয়েছে। সুতরাং যদি একাধিক জানাজা পড়া হয়, তা হলে লাশ দাফন করতে বিলম্ব হবে এবং এই হাদিসের ওপর আমল করা সম্ভব হবে না। (ফাতহুল বারি : ৩/২১৯)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *