হিংসা
হিংসা বিদ্বেষের নিন্দা এবং ইহার অপকৃষ্টতা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন যে- হিংসা বিদ্বেষ, নেকী সমূহকে এইভাবে ধ্বংস করিয়া দেয় যেভাবে অগ্নি শুকনা কাঠ জ্বালাইয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন :
মানুষ তিনটি দুষনীয় কার্যে অধিক লিপ্ত থাকে
✅ খারাপ ধারণা
✅ হিংসা
✅ কোন কার্য থেকে মনগড়াভাবে অশুভ ফলাফলের পূর্ব ধারণা করা
কেহ জিজ্ঞাসা করিল- এই তিনটি দোষ হইতে বাঁচিয়া থাকার উপায় কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন-
✅ কাহারও নিকট স্বীয় হিংসা প্রকাশ করিও না এবং যাহার প্রতি হিংসা হয় তাহার দোষ বর্ণনা করিও না।
✅ কোন মুসলমান সম্পর্কে কুধারণা জন্মিলে স্বচক্ষে না দেখিয়া উহা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিবে না।
✅ যদি কোথাও যাওয়ার সময় রাস্তায় কোন বিচ্ছু বা কাক ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হয়, অথবা তোমার কোন অংগ (চক্ষু কর্ণ ইত্যাদি) নড়িয়া উঠে তাহা হইলে সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ না করিয়া গন্তব্য স্থানের দিকে চলিতে থাকিবে। (অর্থাৎ এই সকল কারণ অশুভ-লক্ষণ মনে করিয়া যাত্রা বন্ধ করিও না।) এইভাবে এই সকল অসৎ কর্ম হইতে বাঁচিয়া থাকিবে।
দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- অশুভ লক্ষনের কোন বিষয় দৃষ্টিগোচর হঁইলে এই দোয়া পড়িবে- لأطير إلا طيرك ولا خير إلا خيرك ولا إله غيرك ولا حول ولا اللهم قوة إلا بالله ط অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রদত্ত অকল্যাণ ব্যতীত কোন অকল্যাণ নাই। আপনার প্রদত্ত কল্যাণ ব্যতীত কোন কল্যাণ নাই। আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আল্লাহর আশ্রয় ব্যতীত কোন পরিত্রাণ নাই। আর আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নাই।
এই দো’আ পড়িতে পড়িতে চলিয়া যাইবে। আল্লাহর ফজলে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। হিংসার প্রতিক্রিয়া ও কুপ্রভাব প্রথমতঃ হিংসুকের উপর আপতিত হয় ফকীহ্ আবুল লায়ছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলিয়াছেন, হিংসা সমুদয় অসৎ কার্যাপেক্ষা অধিকতর ধ্বংসাত্মক। কেননা যাহার প্রতি হিংসা করা হয় হিংসার প্রভাব তাহার উপর আপতিত হওয়ার পূর্বেই হিংসুক পাঁচ প্রকার শাস্তিতে পতিত হয়।
- অবিরাম চিন্তা
- এমন বিপদ যাহার বিনিময়ে কোন সওয়াব লাভ হয় না
- সর্বদিক হইতে কেবল বদনাম আর বদনাম, কোথাও কোন প্রশংসা নাই
- আল্লাহর অসন্তুষ্টি
- তাহার জন্য তাওফীকের দরজা বন্ধ হইয়া যায়
হিংসুক আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন- কিছু সংখ্যক মানুষ আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু হয়। কেহ জিজ্ঞাসা করিল, তাহারা কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন- সুখী লোকদের প্রতিহিংসা পোষণকারী ।
হিংসার রোগে ওলামায়ে কেরাম সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত
মালেক বিন দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- আমি সমগ্র জগত সম্বন্ধে ওলামায়ে কেরামের সাক্ষ্য গ্রহণ করিতে পারি, কিন্তু ওলামাগণের সাক্ষ্য অপর ওলামার প্রতিকূলে গ্রহণযোগ্য নহে। কেননা আমি সর্বাধিক হিংসা বিদ্বেষ ওলামাগণের মাঝে পাইয়াছি।
হিসাব নিকাশের পূর্বেই যে সকল আমল বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ ছয় প্রকার মানুষকে ছয়টি কারণে হিসাব নিকাশের পূর্বেই জাহান্নামে প্রবিষ্ট করা হইবে।
- আমীর ও বাদশাগণকে তাহাদের অত্যাচার এবং সীমা লংঘনতার কারণে।
- আরবগণকে বংশগত অহংকারের কারণে।
- রংশ প্রধান ও ক্ষমতাধর লোকদেরকে তাহাদের অহংকার ঔদ্ধত্যের কারণে।
- ব্যবসায়ীগণকে তাহাদের অসততা ও খিয়ানতের কারণে।
- গ্রাম্য লোকদেরকে তাহাদের মূর্খতার কারণে।
- ওলামায়ে কেরামকে তাহাদের হিংসার কারণে।
টীকাঃ এইখানে ওলামার দ্বারা উদ্দেশ্য হইল লোভী ওলামাগণ। দুনিয়ার লোভেই পরস্পরের হিংসার সৃষ্টি হয়। যদি আলেমগণ দুনিয়ার প্রতি আসক্তি পরিহার করিয়া আখেরাত মুখী হইয়া যায় তাহা হইলে তাহাদের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ থাকিতে পারে না।
একটি উক্তি আহনাফ বিন কায়স রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
- হিংসুক কখনও প্রশান্তি লাভ করিতে পারে না।
- কৃপণের কখনও কোমল প্রাণ হয় না।
- সংকীর্ণ মনা ব্যক্তির কোন বন্ধু হয় না।
- মিথ্যাবাদীর মাঝে মানবতা থাকেনা।
- আত্মসাৎকারী নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নহে।
- অসৎচরিত্র ব্যক্তির মধ্যে ভালবাসা থাকেনা।
কাহারও প্রতি হিংসা করা উচিত নহে
মুহম্মদ বিন শিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- আমি জীবনে কখনও হিংসা করি নাই । কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির দুইটি দিক রহিয়াছে।
- যদি সে নেককার এবং বেহেশতী হয় তাহা হইলে কি করিয়া তাহার প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করা যায়?
- আর যদি জাহান্নামী হয় তাহা হইলে জাহান্নামীর প্রতি হিংসা করার কি অর্থ হইতে পারে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপদেশ আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- আমি আট বৎসর বয়স হইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে ছিলাম। সর্ব প্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত উপদেশ দান করেন। হে আনাস! উত্তমরূপে ওযু কর, তাহা হইলে অযুতে বরকত হইবে। আর দেহরক্ষী ফিরিশতা তোমাকে ভালবাসিতে থাকিবে। ফরজ গোসল উত্তমরূপে করিবে কেননা প্রত্যেক লোমের নিচে নাপাক থাকে। অধিকন্তু উহা দ্বারা গোনাহ মাফ হইয়া যায় । চাশতের নামায অবশ্যই পড়িবে কেননা ইহা তাওবা কারীদের নামায। দিবা-রাত্র অবশ্যই নামায পড়িবে। তাহা হইলে ফিরিশতা তোমাদের জন্য দোয়া করিবে। নামাজের সমস্ত রুকনগুলি যথাযথভাবে পালন করিবে। এই ধরনের নামায আল্লাহর পছন্দনীয় এবং আল্লাহ তায়ালা এইরূপ নামাযই কবুল করেন। যথা সম্ভব সর্বদা ওযুর সহিত থাকার অভ্যাস কর ইহার ফলে মৃত্যুর সময় কলেমা শাহাদাত ভুলিবেনা। ঘরে প্রবেশ করিবার সময় যাহারা ঘরে আছে তাহাদের প্রতি ছালাম দাও। ইহাতে বরকত হয়। পথিমধ্যে কোন মুসলমানকে দেখা মাত্র সালাম দিবে ইহাতে ঈমানের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। আর পথচলাকালীন যে গোনাহ হয় উহা ক্ষমা করিয়া দেওয়া হয়। এক মুহূর্তের জন্যও অন্য মুসলমানের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করিবে না। ইহা আমার তরীকা। যে ব্যক্তি আমার তরীকা গ্রহণ করিল সে আমাকে ভালবাসিল। আর সে ব্যক্তি আমার সহিত বেহেশতে থাকিবে। হে আনাস! যদি তুমি আমার উপদেশ ও অসিয়তের সঠিক হেফাজত কর এবং তদনুযায়ী আমল কর, তাহা হইলে তোমার কাছে মৃত্যু প্রিয় হইয়া যাইবে । আর এইরূপ মৃত্যুতে তোমার জন্য প্রশান্তি রহিয়াছে। হিংসুক আল্লাহ পাকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির উক্তি- হিংসুক ব্যক্তি পাঁচভাবে আল্লাহর সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।