ফজরের নামাজের পরপর না ঘুমানো সুন্নাত
ফজরের নামাজের পর সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়।
ইসলাম এ সময়কে বিশেষ বরকতময় সময় হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ফজরের নামাজ শেষ করে সূর্যোদয় পর্যন্ত দোয়া-দরুদ-জিকিরে মশগুল থাকতে উৎসাহিত করেছে। ঘুমিয়ে থাকতে বারণ করেছে।
সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ : ২৬০৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের স্থানে বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তাঁর জন্য একটি হজ ও ওমরাহর পূর্ণ সওয়াব, একদম পূর্ণ সওয়াব।’ (তিরিমিজি: ৫৮৬)
ফাতেমা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তখন সকাল, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তিনি পা দিয়ে আমাকে নাড়া দিলেন এবং বললেন, ‘মেয়ে আমার, ওঠো। তোমার রবের রিজিক বণ্টন দেখো। অলসতায় থেকো না। কারণ আল্লাহ তাআলা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের রিজিক বণ্টন করেন।’ (শুআবুল ইমান: ৪৪০৫)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতদের ভোরে বরকত দাও।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সৈন্য দল পাঠাতেন, তখন দিনের প্রথম প্রহরেই পাঠাতেন।
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সম্পদ ও জ্ঞানের জন্য পূর্বশর্ত। বলা যায় সফলতার চাবিকাঠি। কেননা ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত-বন্দেগী নয়, বরং দুনিয়াবী কাজের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময় সময়ে। এজন্য সালফে সালেহীনদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখিত হাদীসগুলোর কারণে, ফজরের পরে ঘুমানোকে মাকরূহ মনে করতেন। কেননা ভোর বেলা ঘুমালে রাসূল (সাঃ) যে বরকতের দোয়া করেছেন, সে বরকত থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
হযরত উরওয়া (রহঃ) বলেনঃ হযরত যুবাইর (রাঃ) তার সন্তানদেরকে ভোরবেলায় ঘুমোতে নিষেধ করতেন। তিনি আরো বলেন আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি সে ভোর বেলায় ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার এক সন্তানকে ভোরবেলায় ঘুমোতে দেখে বলেছিলেন!ওঠো তুমি কি এমন সময় ঘুমিয়ে আছো, যখন রিজিক বন্টন করা হয় (সূত্র যা’দুল মাআ’দ ৪/ ২৪১)
সুতরাং আমরা এশার পর বিশেষ করে বাড়িতে কোন কাজ না থাকলে বা মেহমান না থাকলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব কিছুক্ষণ স্ত্রীর সাথে গল্পগুজব করা যেতে পারে তবে অহেতুক কোন গল্পগুজব করব না। ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার করব তারপর না ঘুমিয়ে হালাল রিজিকের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়বো।
আর দিনের ক্লান্তি ভাব দূর করতে দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেব । মহান আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে ফজরের নামাজের পর বরকতময় সময়টাকে সৎ ভাবে কাজে লাগানোর জন্য এবং রাসূলের প্রতি সুন্নত সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন