গায়েবানা জানাযার নামাযের হুকুম

জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য মাইয়্যেত ইমামের সামনে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। কাজেই কোন অনুপস্থিত মাইয়্যেতের জন্য গায়েবানা নামাযে জানায পড়া শুদ্ধ নয়। গায়েবানা জানাযার শরীয়তে কেন অনুমতি নেই?

১. রাসূলে কারীম সা. এর ওফাতের পর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রা. এর ইন্তিকাল, হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী রা, এর শাহাদাতের ঘটনাও ঘটেছে। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এই চার জনের শ্রেষ্ঠত্ব সবার উপর। কিন্তু কোথাও তাদের গায়েবানা জানাযার নামায পড়া হয়নি। অথচ জানাযার সমসকল সাহাবী উপস্থিত ছিলেন না। অনেক সাহাবী অনুপস্থিত ছিলেন।

অনেক সাহাবী মদীনা শরীফে উপস্থিত ছিলেন না, জিহাদে কিংবা দ্বীনের তাবলীগের কাজে দূর- দূরান্তে এলাকায় ছিলেন। কিন্তু পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে অনুপস্থিত বহু সাহাবী ও তাবেয়ী ইন্তেকাল ও শাহাদাতের সংবাদ পাওয়ার পরও তারা গায়েবানা জানাযার নামায পড়েননি। (আল- বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৩/২৯৮)

২. যদি গায়েবানা জানাযার নামায জায়েয হতো, তাহলে যেসব সাহাবী মদীনা শরীফের বাইরে ইন্তেকাল করেছেন, তাদের গায়েবানা জানাযার নামায অবশ্যই রাসূল সা. পড়তেন। পূর্ব- পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণের মুসলমানরাও খুলাফায়ে রাশেদীনের গায়েবানা জানাযারা নামায পড়তো, অথচ একথা কারো থেকে বর্ণিত নেই। (ফাতহুল মুসলিম : ৪/৪৮১)

নাজ্জাশী বাদশাহর গায়েবানা জানাযার ব্যাখ্যা

নবী কারীম সা. হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশী এবং হযরত মু’আবিয়া লাইসি মুযানী রা. এর গায়োবানা জানাযার নামায পড়েছিলেন, এর উপর অন্যদের গায়েবানা জানাযার নামায তুলনা করা শুদ্ধ হবে না। কেননা এটা হুজুর সা. এর বৈশিষ্ট্য ছিল। এ দুটি বিশেষ ঘটনা তাদের দু’জনের সাথে একান্ত ও বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। এর ব্যাপক অনুমতি নেই। কাজেই এ ঘটনার উপর অন্যদের আমল করার অবকাশ নেই। নতুবা মদীনা এবং মদীনা শরীফের দূরে অদূরে বড় বড় সাহাবায়ে কেরামের ইন্তিকাল কিংবা শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওহীর মাধ্যমে নবী করীম সা. কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কারো গায়েবানা জানাযার নামায পড়েননি।

যেমন : কারী সাহাবীদের মধ্যে রাসূল সা. এর অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী হযরত খুবাইব রা. এর শাহাদাতের পর হযরত জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে রাসূলে কারীম সা. কে সংবাদ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি নিজেও জানাযার নামায পড়েন নি এবং সাহাবায়ে কেরামকেও গায়েবানা জানাযার নামায পড়ার নির্দেশ দেননি। (আল- বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৩/২৯৮)

নাজ্জাশী বাদশাহ এবং হযরত মু’আবিয়া মুযানী রা. এর গায়েবানা জানাযার নামায পড়া রাসূলে কারীম সা. এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। কেননা এই দুইজন মাইয়্যেতকে মু’জিযা হিসেবে রাসূলের সম্মুখস্থ করে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের লাশ স্বচক্ষে অবলোকন করেন। এমতাবস্থায় মাইয়্যেততো ইমামের সামনে ছিল। কিন্তু কোন কারণে মাইয়্যেত মুক্তাদিদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলনা। এরপরও ইক্তিদা শুদ্ধ হবে জানাযার নামাযও শুদ্ধ হবে। (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি : পৃষ্ঠা – ৯৪ হাদীস- ১৮০)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *