ইসলাম

ইমাম আওযায়ীর ভুল স্বীকার

আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. ছিলেন ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বিশিষ্ট ছাত্র ও তাঁর ফিকহি বোর্ডের সদস্য এবং ইমাম বুখারী রহ. এর উস্তাদ। তিনি বলেন একবার আমি সিরিয়ার বৈরুতে ইমাম আওযায়ী রহ. এর মজলিসে হাদীস শ্রবেেণর উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলাম ।

ইমাম আওযায়ী রহ. আমাকে দেখা মাত্রই জিজ্ঞেস করলেন, হে খোরাসানী! কৃষ্ণা নগরীতে ‘আবু হানীফা’ নামে কোন বিদআতী আত্মপ্রকাশ করেছে? সে নাকি দীনের ব্যাপারে নতুন নতুন কথা বলে?

ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি ইমাম আওযায়ী রহ. এর এই কথার তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিইনি। পরে আমি বাড়িতে চলে এলাম । ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কিতাবগুলো সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলাম। লাগাতার তিন দিন মুতালাআ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা সংকলন করলাম। এতে একটি পুস্তিকা তৈরি হলো।

তিন দিন পর আবার ইমাম আওযায়ী রহ. এর মজলিসে উপস্থিত হলাম। তখন আমার হাতে সেই পুস্তিকাটি ছিলো। ইমাম আওযায়ী রহ, জিজ্ঞেস করলেন, এটা কার কিতাব? আমি কিছু না বলে তাঁর হাতে পুস্তক তুলে দিলাম । তিনি তা পড়তে লাগলেন, মাসআলাগুলো শিরোনামে লেখা ছিলো ‘কালান নুমান বিন সাবিত’। পড়তে পড়তে আযানের সময় হয়ে গেলো। তাঁর ইমামতির দায়িত্ব ছিলো। ইকামতের সময় হলে কিতাবটি আস্তীনে রেখে নামায পড়ালেন তিনি।

নামায শেষে পুস্তকটি পড়ে শেষ করে আমাকে বললেন, খোরাসানী ! তুমি যে মাসআলাগুলো শিরোনামে লিখেছো ‘কালান নুমান বিন সাবিত’ এই নুমান বিন সাবিত কে?

আমি বললাম, ইনি ইরাকের একজন শায়েখ, যার সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

ইমাম আওযায়ী রহ. বললেন, ‘মাশাআলাহ’ ইনি তো অনেক উঁচু মাপের শায়েখ । যাও, যাও, তার কাছ থেকেই ইলম হাসিল করো ।

এবার আমি বললাম, হযরত! ইনিই তো শায়েখ আবু হানীফা, যাকে আপনি কয়েকদিন পূর্বে বিদআতী বলেছিলেন ।

ইমাম আওযায়ী রহ. তখন নিজের ভুল বুঝতে পারলেন । এরপর হজ্জের সময় ইমাম আওযায়ী রহ. মক্কায় গেলে সেখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সাথে সাক্ষাত হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা-মাসায়িল নিয়ে তাদের মাঝে আলোচনা হয়। ইমাম আবু হানীফা রহ. এর গভীর ইলম দেখে ইমাম আওযায়ী রহ. যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হন ৷

এরপর পৃথকভাবে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. ইমাম আওযায়ী রহ. এর সাথে সাক্ষাত করলে আওযায়ী তাকে বললেন, ইল্‌ম ও ফিক্‌হে পরিপূর্ণতার কারণে ইমাম আবু হানীফা রহ. মানুষের হিংসার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। তাঁর ব্যাপারে আমার ধারণা ভুল ছিলো। এখন আমি খুবই অনুতপ্ত।

তথ্যসূত্র:

বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প

লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *