ইসলাম

ইমাম আযম সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি

আবদুল্লাহ ইবনে দাউদের উক্তি

হাদীস বা আসার জানতে হলে হযরত সুফিয়ানের কাছে যাও। আর হাদীসের তত্বজ্ঞান ও খুঁটি-নাটি বিষয় জানতে হলে হযরত আবু হানীফা রহ. এর কছে যাও ।

তিনি আরও বলেন, প্রতি নামাযের পর হযরত আবু হানীফার জন্য দুআ করা সকল মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। কারণ, তিনি মুসলমানদের স্বার্থে হাদীস ও সাহাবাগণের বাণীকে হিফাযত করেছেন।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. এর উক্তি

ইমাম আবু হানীফা রহ. ইলম, তাকওয়া, দুনিয়াত্যাগী ও আখেরাত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে ছিলেন।

খাল্ফ ইবনে আইয়ূব রহ. এর উক্তি

আল্লাহ তাআলা থেকে রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইল্‌ম পেয়েছেন আর তাঁর থেকে সাহাবাগণ, তাঁদের থেকে তাবেঈনগণ আর তাঁদের থেকে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. পেয়েছেন। সুতরাং এ কথায় যার ইচ্ছা সে খুশি হোক, আর যার ইচ্ছা নারাজ হোক।

সুফিয়ান আওরী রহ. এর উক্তি

বাজপাখির সামনে চড়ুই পাখির যে অবস্থা হয়, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সামনে আমাদের অবস্থাও তেমন ছিলো। নিশ্চয় তিনি সকল আলেমের সেরেতাজ ছিলেন।

ইবরাহীম ইবনে ইকরামা মাখযুমী রহ. এর উক্তি

আমি আমার জীবনে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. হতে বেশি পরহেযগার, বেশি দুনিয়াত্যাগী, বেশি ইবাদতকারী ও বেশি ইলমধারী অন্য কোনো আলেমকে দেখিনি।

শাকীক বালখী রহ. এর উক্তি

হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম, সবচেয়ে বেশি পরহেযগার, সবচেয়ে বেশি ইবাদতকারী, সবচেয়ে বেশি সম্ভ্রান্ত ও দীনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বনকারী ছিলেন ।

আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. এর উক্তি

আমি কূফা নগরীতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে সবচেয়ে বড় আলেম কে? তখন সবাই বললেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ.।

১. সবচেয়ে বেশি পরহেজগার ব্যক্তি কে?

২. ইমাম আবু হানীফা রহ.

৩. সবচেয়ে বেশি দুনিয়াত্যাগী কে?

৪. ইমাম আবু হানীফা রহ.

৫. সবচেয়ে বেশি ইবাদতকারী কে?

৬. ইমাম আবু হানীফা রহ.

৭. ইলম চর্চায় বেশি ব্যস্ত কে?

৮. ইমাম আবু হানীফা রহ.

মোটকথা, উত্তম ও প্রশংসিত চরিত্র সম্পর্কে যতো প্রশ্ন করলাম সকলে উত্তরে বললেন, ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং তারা বললেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ এসব গুণের অধিকারী হয়ে জন্মেছেন বলে আমরা জানি না ।

ইমাম শাফী রহ. এর উক্তি

ফিক্হশাস্ত্রে সমস্ত মানুষ হযরত আবু হানীফা রহ. এর পরিবারের লোক । কারণ, আমি তাঁর চেয়ে বড় কোনো ফকীহ পাইনি। তিনি আরও বলেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কিতাব না পড়লে কেউ ফকীহ ও গভীর ইলমে পারদর্শী হতে পারবে না ।

ইমাম ওকী রহ. এর উক্তি

ইমাম আবু হানীফা রহ. ‘এর চেয়ে বড় ফকীহ ও কোনো ভালো নামাযী ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাত হয়নি। ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলকাত্তান রহ. এর উক্তি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহ. বলেন, আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলকাত্তানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি মিথ্যা কথা বলছি না, ইমাম আবু হানীফা রহ. এর চেয়ে দীন সম্পর্কে উত্তম রায়দাতা আমি অন্য কাউকে দেখিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর মতামতের উপর আমি আমল করে থাকি ৷

ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহ. এর উক্তি

হযরত হামযা রহ. এর কিরাত আর ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ফিক্হ আমার সবচেয়ে ভালো লাগে ৷ সাহাল ইবনে আবদুল্লাহ তাসতরী রহ. এর উক্তি হযরত মূসা ও ঈসা আ. এর উম্মতে যদি হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতো যোগ্য আলেম, উজ্জ্বল বুদ্ধিমত্তা, সত্যনিষ্ঠ ও বাস্তবদর্শী মানুষ জন্ম হতো, তাহলে তাঁদের উম্মত ইয়াহুদী ও নাসারা হতো না এবং এতো দ্রুত গোমরাহ হতো না ।

মুসইর ইবনে কিদাম রহ. এর উক্তি

ছয়টি সহীহ হাদীসের কিতাবে তাঁর থেকে হাদীস নেওয়া হয়েছে এবং তিনি হযরত সুফিয়ান সাওরী ও হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহ. এর উস্তাদ ছিলেন।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার ও তার রবের মাঝে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. -কে ওসীলা বানাবে এবং তাঁর মাযহাবের অনুসরণ করবে, আমি আশা করি তাঁর কোনো ভয় থাকবে না ৷

তিনি আরো বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নেকী করেছি তা আমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। তা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীনের উপর চলা, যিনি সৃষ্টির মধ্য হতে সেরা। আর হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মাযহাব মতো আমল করা।

ইমাম শাফী রহ. এর উক্তি

‘খাইরাতুল হিসান’ নামক কিতাবে আছে, হযরত ইমাম শাফী রহ. বলেন, অধমের ধারণায় হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর চেয়ে বেশি বিচক্ষণ লোক দুনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেননি

ইমাম মালিক রহ. এর উক্তি

‘তারীখে ইবনে খাল্লিকান’ নামক কিতাবে আছে, হযরত ইমাম শাফী রহ. হযরত ইমাম মালেক রহ.-কে ইমাম আযম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আবু হানীফা এমন ব্যক্তি, আপনি যদি তাঁর সাথে এই খুঁটি নিয়ে আলোচনা করেন আর তিনি তা স্বর্ণের প্রমাণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই তিনি সে খুঁটিকে দলীল দ্বারা স্বর্ণ প্রমাণ করে দেবেন।

এসব উক্তি ‘আল মাওয়াহিবুশ শারীফাহ ও হাদায়িকুল হানাফিয়া’ হতে গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে এর উদ্ধৃতি বর্ণিত রয়েছে। সংক্ষেপ করতে গিয়ে এখানে তা উল্লেখ করা হয়নি।

ইমাম আযমে রহ. এর মৃত্যু

কোটি কোটি মুসলিমের স্মরণীয়, বরণীয়, অনুসরণীয়, অনুকরণীয় এই সুমহান ব্যক্তি, সকলের শ্রদ্ধেয় ও প্রাণপ্রিয় মুখ, অসাধারণ পথিকৃত মুসলিম জাতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা, অনন্য মনীষীকে খলীফা মানসূর কাজীর দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করার কারণে জেলখানায় বন্দী করে।

১৫০ হিজরীতে জেলখানায় তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে ইন্তিকাল করেন। জেলখানার পাঁচজন কর্মকর্তা তার লাশ জেলখানা থেকে বের করে। ইমাম সাহেবের শীর্ষ ছাত্র বাগদাদের কাজী হাসান ইবনে উমারা তাঁর গোসল দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন ।

তাঁর জানাযার নামাজে পঞ্চাশ হাজার লোক সমবেত হয়েছিলো। ছয়টি জামাআতে তার জানাযার নামাজ পড়া হয়। বর্ণিত আছে, তাঁর জানাযা দেখে বিশ হাজারের বেশি অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে। পূর্ব বাগদাদে খিযরান নামক স্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয় ।

তথ্যসূত্র:

বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প

লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *