ইসলাম

ঈমান ছাড়া আমলের কোনো প্রতিদান নেই আখিরাতে

ঈমানবিহীন একজন মানুষের ভালো আমলের উদাহরণ হলো, রূহবিহীন শরীরের মতো। দুনিয়াতে যেমন রূহবিহীন শরীরের কোনো মূল্য নেই, তদ্রূপ ঈমান-আকীদার বিশুদ্ধতা ছাড়া আখিরাতে ভালো কাজ ও আমলের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিদান নেই।

তাই কুরআনে কারীমের বিভিন্ন স্থানে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ঈমান ছাড়া আখিরাতে আমলের কোনো প্রতিদান নেই; বরং বিভিন্ন উপমা ও উদাহরণ টেনে বিষয়টি সূর্যের আলোর ন্যায় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা (ঈমানবিহীন ব্যক্তিরা দুনিয়ায়) যা কিছু আমল করেছে, আমি তার ফয়সালা করতে আসব এবং সেগুলো শূন্যে বিক্ষিপ্ত ধুলোবালি (-এর মতো মূল্যহীন) করে দেবো।'(সূরা আল ফুরকার : আয়াত : ২৩)

অর্থাৎ তারা যে সকল কাজকে পুণ্য মনে করত, আখিরাতে তা ধুলোবালির মতো মিথ্যা মনে হবে। আখিরাতে তার বিনিময়ে কিছুই পাবে না। কেননা, আখিরাতে কোনো কাজ গৃহীত হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত, যা তাদের ছিল না। তাই সেখানে এসব কোনো কাজে আসবে না।

সুন্দর একটা উদাহরণ টেনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে (তাদের উপমা এই যে,) তাদের কর্ম সেই ছাইয়ের মতো, প্রচণ্ড ঝড়ের দিনে তীব্র বাতাস যা উড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা যা কিছু উপার্জন করে, তার কিছুই তাদের হস্তগত হবে না। এটাই চরম বিভ্রান্তি। সূরা ইবরাহীম ,আয়াত : ১৮

সহীহ হাদীসে এসেছে, আনাস রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ( আল্লাহ তাআলার রীতি হলো) কাফের দুনিয়ায় ভালো কাজ করে থাকলে, (যেমন : সেবা, আর্ত ও পীড়িতদের সাহায্য করা ইত্যাদি) তিনি এগুলোর প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। আখিরাতে তার কোনো পুরস্কার তারা পাবে না।(মুসনাদে আহমদ,হাদীস নং : ১২২৬৪)

কেননা, সেখানে পুরস্কার লাভের জন্য ঈমান শর্ত। সুতরাং এসব কাজ আখিরাতে তাদের কোনো কাজে আসবে না। তাই এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে—ঝড়ো হাওয়া যেমন ছাই উড়িয়ে নিয়ে যায়, তারপর তার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না, সে রকমই কাফেরদের কুফর তাদের সৎকর্মসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ফলে তার কোনো উপকার তারা আখিরাতে লাভ করবে না।

আরেকটি উদাহরণ দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, তারা এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করে, তার দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন হিমশীতল বায়ু এমন একদল লোকের শস্যক্ষেত্রে আঘাত হানে ও তা ধ্বংস করে দেয়, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে। বস্তুত আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুন করছে।'(সূরা আলে ইমরান, আয়াত :১১৭)

অর্থাৎ আখিরাতে কাফেরদের দানও তদ্রূপ বিফল হয়ে যাবে। কেননা, কুফর দান কবুল হওয়ার বিরোধী। তথাপি ‘জালেম কওমের শস্যক্ষেত্র’ বলার কারণ হলো, মুসলমানদের কোনো পার্থিব ক্ষতি হলে আখিরাতে সে তার বিনিময়ে নেকি অর্জন করবে। অথচ কাফেরদের ভাগ্যে তা জুটবে না।”

সুতরাং তাদের সেবামূলক কার্যক্রমের দৃষ্টান্ত হলো শস্যক্ষেত্র, আর তাদের কুফরী কাজের দৃষ্টান্ত হিমশীতল ঝড়ো হাওয়া। সেই ঝড়ো হাওয়া যেমন মনোরম শস্যক্ষেত্রকে তছনছ করে দেয়, তেমনই তাদের কুফরও তাদের সেবামূলক কার্যক্রম ধ্বংস করে দেয়।

আরও একটি উপমা দেখুন, ‘যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা-সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। অবশেষে সে যখন সেখানে যায়, তখন কিছুই পায় না।”(সূরা নূর, আয়াত :৩৯)

মরুভূমিতে যে বালুরাশি চিকচিক করে, দূর থেকে তাকে মনে হয় পানি। আসলে তা পানি নয়, মরীচিকা। সফরকালে মুসাফিরগণ ভ্রমবশত সেটাকে পানি মনে করে বসে। কিন্তু বাস্তবে তা কিছুই নয়। ঠিক এ রকমই কাফের ও ঈমানবিহীন ব্যক্তিরা যে ইবাদত ও সৎকর্ম করে আর ভাবে বেশ নেকি কামাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তাদের কিছুই কামাই হয় না, তা মরীচিকার মতোই ফাঁকি।

সুতরাং তারা তাদের কৃতকর্মের কারণে সম্পূর্ণরূপে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে গেছে। এভাবে তারা দেখতে পাবে তাদের কর্ম তাদের কোনো উপকারে আসেনি; বরং ক্ষতিরই কারণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, মানুষ যেহেতু দু-ধরনের : মুমিন-মুসলিম ও বেঈমান-কাফের। এর বাহিরে আর কোনো প্রকার নেই। কাজেই মুমিন-মুসলিম ছাড়া সকল কাফের-বেঈমান, নাস্তিক, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ধর্মহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বিধান প্রযোজ্য। যদিও মুসলিম নামধারী হোক না কেন, যেমন : কাদিয়ানী সম্প্রদায়।

ঈমানবিহীন মৃত্যুর ঠিকানা চিরস্থায়ী জাহান্নাম

ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কাফের—হোক আহলে কিতাব কিংবা মুশরিক—নিশ্চয় ওরা জাহান্নামের আগুনে যাবে, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। ওরাই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব।” ‘নিশ্চয় যারা কুফর করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের প্রতি আল্লাহর,ফেরেশতাগণের এবং সমগ্র মানুষের লানত। তারা সে লানতের মধ্যে থাকবে চিরকাল। তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।’

তথ্য সূত্রঃ

কিতাবঃ ঈমান – আকিদা ১

লেখকঃ মাওলানা সাঈদ আহমদ উস্তাদঃ দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *