ইসলামে পরিবার পরিচালনায়।ফরয বিধান গুলো কি কি?
ইসলামে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু ফরয (অবশ্যক) বিধান রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য পালনীয়। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এই ফরয বিধানগুলো কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিচে দেওয়া হলো:
১. পরিবারকে দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখা
আল কুরআন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সুরা আত-তাহরীম: ৬)
ব্যাখ্যা: একজন মুসলিম ব্যক্তির দায়িত্ব হলো তার পরিবারকে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া এবং তাদেরকে হারাম কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা।
২. স্ত্রীর অধিকার ও ভরণপোষণ নিশ্চিত করা
আল কুরআন:
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
“তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো।” (সুরা আন-নিসা: ১৯)
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে তার পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৯৫)
৩. সন্তানদের হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করা
আল কুরআন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ
“তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের এবং তোমাদের রিজিক দেই।” (সুরা আল-ইসরা: ৩১)
ব্যাখ্যা: সন্তানের জন্য হালাল উপার্জন করা ফরয, যেন তারা হারাম খাদ্যে লালিত না হয়।
৪. স্ত্রীর মাহর প্রদান করা
আল কুরআন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
“তোমরা স্ত্রীদের তাদের মাহর (বিবাহের দেনমোহর) পরিপূর্ণভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা: ৪)
৫. সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া
আল কুরআন:
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
“তোমার পরিবারকে সালাতের আদেশ দাও এবং নিজেও তা পালনে দৃঢ় থাকো।” (সুরা ত্বাহা: ১৩২)
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়স থেকে নামাজের নির্দেশ দাও। দশ বছর বয়স হলে না পড়লে শাস্তি দাও।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)
৬. সন্তানদের উত্তম নাম রাখা
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“তোমরা কিয়ামতের দিন তোমাদের নাম ও তোমাদের পিতার নামে আহ্বান করা হবে। কাজেই তোমরা তোমাদের নাম সুন্দর করো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৯)
৭. ন্যায়বিচার করা
আল কুরআন:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার ও উত্তম আচরণের নির্দেশ দেন।” (সুরা আন-নাহল: ৯০)
ব্যাখ্যা: পরিবার পরিচালনায় ন্যায়বিচার করা ফরয, যেমন স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে কোনো বৈষম্য না করা।
৮. হারাম থেকে বাঁচানো
আল কুরআন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সুদ খেও না।” (সুরা আলে ইমরান: ১৩০)
ব্যাখ্যা: পরিবারকে সুদ, ঘুষ, হারাম উপার্জন, মদ্যপান ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখা ফরয।
৯. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
আল কুরআন:
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো না।” (সুরা আন-নিসা: ১)
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করেন।”_ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৭)
১০. ইসলামী বিধান অনুযায়ী উত্তরাধিকার (মীরাস) বণ্টন করা
আল কুরআন:
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দেন: পুরুষের অংশ নারীর অংশের দ্বিগুণ।” (সুরা আন-নিসা: ১১)
ব্যাখ্যা: সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন মেনে চলা ফরয।
উপসংহার
হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, পরিবার পরিচালনায় এই বিধানগুলো ফরয। এগুলো পালনে গাফিলতি করলে কিয়ামতের দিন কঠিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামী পরিবার পরিচালনায় সাহায্য করুন। আমীন।