যাদের সুপারিশে জাহান্নামীরা মুক্তিলাভ করবে
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর বন্দাদের বিচার নিষ্পত্তি করবেন তখন মানুষ দু’টি দলে বিভক্ত হবে। একদল হবে জান্নাতী এবং অপর দল হবে জাহান্নামী। জাহান্নামীদের মধ্যে আবার দু’টি দল হবে। একদল হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী; যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে অবিশ্বাসী কাফের ছিল । অপর দল হবে অস্থায়ী জাহান্নামী; যারা দুনিয়াতে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনায়ন করেছিল, কিন্তু তারা বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত ছিল। তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগের জন্য আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আর এ সকল জাহান্নামের অস্থায়ী বাসিন্দারাই সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্যলাভ করবে। আর কিয়ামতের দিন যারা সুপারিশ করতে পারবে তারা হলেন, (১) নবী-রাসূলগণ (২) ফেরেশতাগণ (৩) মুমিনগণ ।
হাদীছে এসেছে,
شَفَعَتِ الْمَلائِكَةُ وَشَفَعَ النَّبِيُّوْنَ وَشَفَعَ الْمُؤْمِنُونَ وَلَمْ يَبْقَ إِلا أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَط قَدْ عَادُوْا حُمَمًا فَيُلْقِيْهِمْ فِي نَهْرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ يُقَالُ لَهُ نَهْرُ الْحَيَاةِ
( যখন ফেরেশতামণ্ডলী, নবী-রাসূলগণ এবং মুমিনগণ সুপারিশ করে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে আনবে) তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, ফেরেশতাগণ, নবীগণ এবং মুমিনগণ সকলেই শাফা’আত করেছে, এখন আমি পরম দয়ালু ব্যতীত আর কেউ অবষ্টি নেই। এই বলে তিনি মুষ্টিবদ্ধ এমন এক দল লোককে জাহান্নাম হতে বের করবেন, যারা কখনো কোন নেক আমল করেনি। যারা জ্বলে-পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মুখভাগের একটি নদিতে নিক্ষেপ করা হবে। যার নাম হল “নাহরু হায়াত’।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُ الصِّيَامُ أَى رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفْعْنِي فِيْهِ وَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفْعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفْعَان –
(৪)ছিয়াম (৫) কুরআন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কুরআন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলায় তাকে তার খানা ও প্রবৃত্তি হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি রাত্রে তার নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস, ৬৬২৬)
(৬) শহীদগণ:
হাদীসে এসেছে,
عَنْ نِمْرَانِ بْنِ عُتْبَةَ الدِّمَارِيُّ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى أُمِّ الدَّرْدَاءِ وَنَحْنُ أَيْتَامُ فَقَالَتْ أَبْشِرُوا فَإِنِّي سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُشَفَعُ الشَّهِيدُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ –
নিমরান ইবনু উতবাহ আয-যিমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা উম্মে দারদা (রাঃ)-এর বাড়ীতে প্রবেশ করলাম। এমতাবস্থায় আমরা এতীম ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই আমি আবু একজন শহীদ তাঁর নিজ পরিবারের ৭০ জনের জন্য শাফা’আত করবেন। (আবু দাউদ, হাদীস, ২৫২২)
অন্য হাদীছে এসেছে, عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيْكَرِبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِلشَّهِيدِ عِنْدَ الله ستُ خِصَالِ يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةِ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَيُزَوِّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةٌ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ – وَيُشَفَعُ فِي سَبْعِي
মিকদাম ইবনে মাদিকারিব (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ৬টি মর্যাদা রয়েছে। (১) শরীরের রক্তের প্রথম ফোটা ঝরতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং (মৃত্যুর সাথে সাথেই) জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থান স্থল দেখানো হবে (২) কবরের আযাব হতে তাকে নিরাপদে রাখা হবে (৩) কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদে রাখা হবে (৪) পৃথিবী ও তন্মধ্যের বস্তু হ’তে মূল্যবান ইয়াকৃত পাথর দ্বারা নির্মিত মর্যাদার মুকুট তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হবে (৫) তাকে বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট ৭২ জন হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে এবং (৬) নিকটতম ৭০ জন লোকের সুপারিশ কবূল করা হবে’৷ তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত হা/৩৮৩৪ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ৭/২১৩ পৃঃ; আলবানী, সনদ ছহীহ, ছহীহ তারগীব হা/১৩৭৫।
উল্লেখ্য যে, একজন হাফেয ১০ জনকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই যঈফ।তিরমিযী হা/২৯০৫; ইবনু মাজাহ হা/২১৬; মিশকাত হা/২১৪১; আলবানী, সনদ নিতান্তই যঈফ, যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৩৮; যঈফ তারগীব হা/৮৬৮।
এছাড়া একজন হাজী ৪০০ জনকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে মর্মে সমাজে প্রচলিত কথাটি ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন