জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা এবং ধোঁয়ার আধিক্য
আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ فِي سَمُوْمٍ وَحَمِيْمٍ وَظِلٍ مِن يَحْمُوْمٍ لا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ
‘আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচন্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়’ (সূরা ওয়াকি‘আহ ৫৬/৪১-৪৪)।
উল্লিখিত আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিনের প্রচন্ড তাপ থেকে মানুষকে ঠান্ডা করবেন তিনটি বস্তু দ্বারা, তা হল, ১- পানি ২- বাতাস এবং ৩- ছায়া, যার সামান্যটুকুও জাহান্নামীদেরকে দেওয়া হবে না ।
অতএব জাহান্নামের বাতাস যা তার অধিবাসীদেরকে দেওয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম বাতাস। আর পানি যা পান করতে দেওয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম পানি।
আর ছায়া যা তাদেরকে আচ্ছাদন করে রাখবে, তা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার ছায়া। এগুলো জাহান্নামীদের কোন উপকারে আসবে না। বরং এগুলো তাদের অধিক শাস্তির কারণ হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, انْطَلِقُوا إِلَى ظِلٍّ ذِي ثَلاَثِ شُعَب – لاَ ظَلِيْلٍ وَلَا يُغْنِي مِنَ اللَّهَبِ – إِنَّهَا تَرْمِي بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ – كَأَنَّهُ حِمَالَتْ صُفْرٌ.
‘চল তিন শাখাবিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া শীতল নয় এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে, নিশ্চয়ই সে নিক্ষেপ করবে প্রাসাদতুল্য স্ফুলিঙ্গ । যা দেখে মনে হবে হলুদ বর্ণের উট’ (সূরা মুরসালাত ৭৭/৩০-৩৩)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার তিনটি প্রকার উল্লেখ করেছেন, ১- ছায়া সদৃশ ধোঁয়া যা শীতল করে না। ২- এই ধোঁয়া জ্বলন্ত অগ্নিশিখা থেকে রক্ষা করতে পারে না। ৩- এই ধোঁয়া মোটা হলুদ উট সদৃশ ।
আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা উল্লেখ করে বলেন, سَأَصْلِيْهِ سَقَرَ – وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ – لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ ۖ لَوَّاحَةٌ لِلْبَشَرِ –
‘আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ, তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না, ইহা তো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে’ (সূরা মুদ্দাছছির ৭৪/২৬-২৯)।
অতএব জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের সবকিছু খেয়ে ধ্বংস করে ফেলবে। তারা সেখানে না পারবে মরতে, না পারবে বাঁচতে। জাহান্নামীদের চামড়া- গোশত পুড়িয়ে হাড্ডি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এবং পেটের ভেতরের সবকিছু বের করে ফেলবে।
জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَارُكُمْ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فِضًلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا –
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল । তিনি বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে। বুখারী হা/৩২৬৫, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৩৪৬ পৃঃ; মুসলিম হা/২৮৪৩; মিশকাত হা/৫৬৬৫, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৬০ পৃঃ।
অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اشتكت النَّارُ إِلَى رَبِّهَا ، فَقَالَتْ رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا، فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشَّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ، فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ فِي الْحَرِّ ، وَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الزَّمْهَرِيْرِ –
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে আমার রব! আমার একাংশ অপরাংশকে ভক্ষণ করে নিচ্ছে। তখন আল্লাহ তাকে দু’টি নিঃশ্বাসের অনুমতি দান করেন। একটি শীতকালে আর অপরটি গ্রীষ্মকালে । যার কারণে তোমরা প্রচণ্ড গরম ও ঠাণ্ডা অনুভব করে থাক ৷ বুখারী হা/৩২৬০, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৩৪৫ পৃঃ; মুসলিম হা/৬১৭, মিশকাত হা/৫৯১ ।
দুনিয়ার আগুনের চেয়ে আরো উনসত্তর গুণ বেশী তাপ সম্পন্ন জাহান্নামের আগুনে জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করে শাস্তি দেওয়া হবে আর এই আগুনের তাপ কখনো প্রশমিত হবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, فَذُوقُوا فَلَنْ نَّزِيْدَكُمْ إِلا عَذَابًا –
‘অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমি তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব’ (সূরা নাবা ৭৮/৩০)। তিনি অন্যত্র বলেন, كُلَّمَا حَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا – ‘যখনই উহা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব’ (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭/৯৭)।
যার কারণে জাহান্নামীরা কখনো সামান্যটুকু বিশ্রামের অবকাশ পাবে না এবং তাদের থেকে শাস্তির কিছুই কমানো হবে না ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, فَلَا يُحَفِّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ – ‘সুতরাং তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’ (সূরা বাকারহা ২/৮৬)।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন