জাহান্নামের দরজা ও পর্দাসমূহ
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— وَ إِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِيْنَ لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ –
‘আর তাদের সকলের প্রতিশ্রুত ঠিকানা হল জাহান্নাম । যার মধ্যে সাতটি দরজা রয়েছে । প্রত্যেক দরজাতেই তাদের পৃথক পৃথক অংশ বিভক্ত রয়েছে। —সূরা হিজর : ৪৩-88
হাদীস ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে— إِنَّ لِجَهَنَّمَ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ بَاب مِنْهَا لِمَنْ سَلَّ سَيْفَهُ عَلَى أُمَّتِى .
জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তার একটি হল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার উম্মতের উপর তরবারী উত্তোলন করেছে। —মুসনাদে আহমদ
হাদীস ঃ হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— إِنَّ لِلْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ وَ جَهَنَّمَ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ وَ بَعْضُهَا أَفْضَلُ مِنْ بَعْضٍ –
জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। আর জাহান্নামের রয়েছে সাতটি। তার একটি অন্যটি থেকে উপরে ।
হাদীস ঃ হযরত আবু রযীন উকাইলী (রাযিঃ) নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন— لَعُمْرُ الْهِكَ إِنَّ لِلنَّارِ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ مَا مِنْهُنَّ بَابَانِ إِلَّا وَ يَسِيرُ الرَّاكِبُ بَيْنَهُمَا سَبْعِينَ عَامًا
‘তোমার প্রতিপালকের কসম! জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তার প্রত্যেক দুই দরজার মধ্যখানে একটি তেজস্বী ঘোড়া সত্তর বছর চলতে পারবে।—ইবনে আবী হাতেম, তাবরানী ও হাকেম
হাত্তান রুকাশী (রহঃ) বলেন, আমি হযরত আলী (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তোমাদের কি জানা আছে যে, জাহান্নামের দরজা কেমন? আমরা বললাম, আমাদের দুনিয়ার দরজার মতই নাকি? তিনি বললেন, না; বরং সেখানকার দরজা হল একটি আরেকটির উপরে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, একটি অন্যটির নীচে । —ইবনে আবী হাতেম
বায়হাকীর রেওয়ায়েতে উল্লিখিত আছে যে, হযরত আলী (রাযিঃ) বলেন, জাহান্নামের দরজা এমন। এ বলে তিনি ডান হাতকে বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন । (অর্থাৎ, বুঝালেন, উপরে ও নীচে ।
জাহান্নামের দরজাসমূহের নাম
হযরত ইবনে জুরাইজ (রহঃ) لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ এর তাফসীরে বলেন, জাহান্নামের প্রথম দরজার নাম হল জাহান্নাম। এরপর পর্যায়ক্রমে লাযা, হুতামা, সায়ীর, সাকার, জাহীম, ও হাবিয়া। —ইবনে আবিদ্দুয়া
ইমাম যাহহাক (রহঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দরজাগুলোর নাম করণ করে রেখেছেন। তন্মধ্যে একটি ইহুদীদের জন্য, একটি খ্রীষ্টানদের জন্য, একটি মাজুসীদের জন্য, একটি সায়েবীনদের জন্য, একটি মুনাফেকরদের জন্য এবং একটি আরবের কাফের মুশরেকদের জন্য। আরেকটি হল গোনাহগার মুসলমানদের জন্য, এতে মু’মিনদের গোনাহসমূহকে পরিষ্কার করা হবে মাত্র । —যিলাল
ব্যভিচারীদের জন্য দরজা
হযরত আতা খোরাসানী (রহঃ) বলেন, জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা কষ্টদায়ক, যন্ত্রণাদায়ক, পীড়াদায়ক ও গরম-উত্তপ্ত হবে ব্যভিচারীদের দরজা। যারা এই কর্মটিকে গোনাহ জানা সত্ত্বেও তাতে লিপ্ত হয়েছে তাদের জন্য । —আবু নুয়াঈম
হারুরিয়া ফেরকার জন্য
হযরত কা’ব (রাযিঃ) বলেন, জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্য থেকে একটি হল হারুরিয়া ফেরকার জন্য।
বান্দার আমল অনুপাতে জাহান্নামের দরজা
উপরোক্ত রেওয়ায়েতে জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা বলা হয়েছে। এগুলো বান্দার মন্দ কীর্তির স্তরভেদে বন্টন করা হবে। যেমন জান্নাতের আট দরজা বান্দার নেক আমলের স্তরভেদে হবে।
জাহান্নামের প্রত্যেক নিচের স্তর উপরের স্তর থেকে অধিক গরম হবে হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ বলেন, প্রত্যেক দুই দরজার মধ্যখানে সত্তর বছরের দূরত্ব থাকবে। আর প্রত্যেক নিচের দরজা উপরের দরজা থেকে অধিক প্রখর ও উত্তপ্ত হবে।
জনৈক নারী সাহাবীর আজব ঘটনা
হযরত বেলাল (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে নববীতে একাকী নামায পড়ছিলেন। তখন তাঁর পেছনে এক মহিলা এসে নিয়ত বাঁধল। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা টের পাননি। অতঃপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন— لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءً مَّقْسُومٌ
এ আয়াত শোনামাত্রই ঐ মহিলা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেই সালাম ফেরালেন এবং কাউকে পানি আনতে বললেন। তার চেহারায় পানির ছিটা দিতেই সে চৈতন্য ফেরত পেল। অতঃপর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কী হল? সে বলতে লাগল, আপনি নামাযে যে আয়াত পাঠ করলেন, তা কি আপনার নিজের কোন কথা ছিল? না আল্লাহর বাণী? তিনি উত্তরে বললেন, হে আল্লাহ্ বান্দী! এটাত আল্লাহ্ পাকের কালাম। অতঃপর সে বলল, আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় আযাব বান্দী! দেয়া হবে? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর এমন নয়; বরং প্রত্যেক দরজার জন্য এক এক অংশ নির্ধারণ করা রয়েছে। অতঃপর সে বলতে লাগল, আল্লাহ্র কসম! আমি তো একজন মিসকীন মহিলা আমার ধন-সম্পদ কিছু নেই। তবে সাতটি গোলাম রয়েছে। আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি জাহান্নামের সাতটি দরজা থেকে মুক্তির জন্য আমার সাতটি গোলামকে আল্লাহ্ তা’আলার জন্য মুক্ত করে দিলাম। ইতোমধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে খবর নিয়ে এল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এ মহিলাকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর জাহান্নামের সাত দরজাকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তার জন্য জান্নাতের সবকটি দরজা খুলে দিয়েছেন। —তাফসীরে কুরতুবী
সাতটি সূরা জাহান্নামের সাতটি দরজার জন্য ঢাল স্বরূপ
খলীল ইবনে মুররা (রাযিঃ) বলেন, হুযূরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরায়ে মুলক এবং হা-মীম সেজদা তেলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না । তিনি এরশাদ ফরমান—
الْحَوَامِيمُ سَبْعُ وَ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ سَبْعُ : جَهَنَّمُ وَالْحُطَمَةُ ، وَ لَظَى وَالسَّعِيرُ، وَ سَقَرُ ، وَالْهَاوِيَةُ ، وَالْجَحِيمُ ، وَ قَالَ تَجِيءُ كُلَّ حمّ مِنْهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحْسَبُهُ قَالَ : تَقِفُ عَلَى بَابٍ مِنْ هَذِهِ الْأَبْوَابِ فَتَقُولُ : اللَّهُمَّ لا تُدْخِلْ هُذَا الْبَابَ كُلَّ مَنْ يُؤْمِنُ بِي وَ يَقْرَؤُني –
হা-মীম সূরা সাতটি এবং জাহান্নামের দরজাও সাতটি। (১) জাহান্নাম (২) হুতামা (৩) লাযা (৪) সায়ীর (৫) সাকার (৬) জাহীম (৭) হাবিয়া। হামীম সূরাগুলো কেয়ামতের দিবসে আসবে, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় দাঁড়িয়ে যাবে এবং মিনতী কণ্ঠে বলতে থাকবে, হে আল্লাহ্! যে আমার উপর বিশ্বাস রেখেছে এবং আমাকে পাঠ করত, আপনি তাকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করাবেন না।
আবদুল আযীয ইবনে আবু রাওয়াদ (রহঃ) বলেন, এক লোক জঙ্গলে বসবাস করত। সে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে রেখেছিল। তার কেবলার দিকে সে সাতটি পাথর রেখে দিয়েছিল । যখনই সে নামায শেষ করত, তখন ঐ পাথরগুলোকে সম্বোধন করে বলত, হে পাথর! আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই । অতঃপর লোকটি অসুস্থ হয়ে গেল, কিছুদিন পর সে মারা গেল। তার মারা যাওয়ার পর আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, তাকে আমার সাথেই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হল । তখন সেখানে ঐ পাথরগুলোর মধ্য থেকে একটি পাথর দেখতে পেলাম, যা আমি চিনতে পারলাম। পাথরটি জাহান্নামের একটি দরজা বন্ধ করে রাখল । অনুরূপ বাকী পাথরগুলোও অন্যান্য দরজাসমূহকে বন্ধ করে দিল ।—ইবনে আবিদ্দুয়া
জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ তাদের উপর জাহান্নামকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। —সূরা হুমাযা-৮
অন্যত্র ইরশাদ ফরমান — তাদের উপর আবদ্ধ অগ্নি থাকবে। —সূরা সূরা বালাদ:২০
এ আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় হযরত মুকাতিল (রহঃ) বলেন, জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশের পর দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কখনোই কোন দরজা খোলা হবে না। সুতরাং তার ভেতরকার দুঃখও কখনও বের হবে না এবং বাইরের সুখও কখনও ভেতরে প্রবেশ করবে না।
হযরত যাহ্হাক (রহঃ) বলেন, জাহান্নামে এমন দেয়াল হবে যেখানে কোন দরজা বা ফটকদ্বার থাকবে না । হয়ত এ ব্যাখ্যার সারাংশ এমন যে, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়ার পর তা এমন শক্ত প্রাচীরের রূপ নিবে, মনে হবে যেন সেখানে কোন দরজাই ছিল না।
হযরত মুকাতিল (রহঃ) বলেন, জাহান্নামীরা তথায় প্রবেশের পর দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে । অতঃপর লোহার পেরেক দ্বারা সেগুলোকে শক্ত করে এঁটে দেয়া হবে। অতঃপর তাদের উপর প্রখরতা ও উত্তপ্ততার প্রবল বর্ষণ হতে থাকবে।
সূরায়ে হুমাযার উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে সেগুলোকে স্তম্ভের সাথে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হবে। জাহান্নামীদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে ।
হাদীস : হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-
ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَائِكَتَهُ مَسَامِيرَ مِنْ نَارٍ أَوْ إِطْبَاقَ مِنْ نَارٍ فَيَطْبَقُوْنَهَا عَلَى مَنْ بَقِيَ فِيْهَا وَ يَسْمَرُوْنَهَا بِتِلْكَ الْمَسَامِيرِ يَتَنَاسَاهُمُ الْجَارُ عَلَى عَرْشِهِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَشْتَغِلُ عَنْهُمْ أَهْلَ الْجَنَّةِ بِنَعِيمِهِمْ وَلَذَّتِهِمْ –
মু’মিন মুসলমানদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার পর আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে জাহান্নামে প্রেরণ করবেন। তাদের হাতে থাকবে আগুনের পেরেক কিংবা দণ্ড। সেগুলোর সাথে জাহান্নামীদেরকে বেঁধে দেয়া হবে এবংনজাহান্নামের দরজাগুলোকে পেরেক দিয়ে চিরকালের জন্য এঁটে দেয়া হবে। পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর দয়া করা ছেড়ে দিবেন। পক্ষান্তরে জান্নাতীরা জান্নাতী নেয়ামত দ্বারা ভোগ-বিলাস করতে থাকবে।
হাদীস ঃ হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রাযিঃ) বলেন—
يُنَادِى رَجُلٌ فِي شُعَبٍ مِنْ شِعَابِ النَّارِ مِقْدَارَ أَلْفَ عَامٍ يَا حَنَّانُ يَا مَنَّانُ فَيَقُولُ اللهُ تَعَالى يَا جِبْرِيلُ اَخْرِجْ عَبْدِى فَيَجِدُهَا مُطْبِقَةً فَيَقُولُ يَا رَبِّ إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُطْبِقَةٌ مُوْصَدَةٌ –
এক লোক জাহান্নামের কোন এক উপত্যকায় পড়ে ইয়া হান্নানু ইয়া মান্নানু বলে হাজার বছর যাবৎ ডাকতে থাকবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, হে জিব্রাঈল! আমার বান্দাকে বের করে দাও। তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাতে প্রবেশ করতে চাইলে জাহান্নামের সবকটি দরজা বন্ধ পাবেন। তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলবেন, হে আল্লাহ্! জাহান্নামের সবকটি দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে আছে।
আবূ ইমরান জওনী (রহঃ) বলেন, যখন কেয়ামতের দিবস চলে আসবে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক অহংকারী, দাপুটে, কপট ও অত্যাচারী লোকদের ব্যাপারে হুকুম করবেন, এদেরকে লৌহ শিকলে বেঁধে ফেল, এরপর জাহান্নামে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাও। অতঃপর ফেরেশতারা অক্ষরে অক্ষরে এ হুকুম পালন করবেন। আবু ইমরান বলেন, আল্লাহ্র কসম! সেখানে তাদের পদযুগল স্থির থাকবে না। কসম আল্লাহ্র ! সেখানে তারা আসমানের দিকে তাকাতে পারবে না। কসম আল্লাহ্! তাদের চোখ কখনো বন্ধ হবেনা। কসম আল্লাহ্র কখনো তারা ঠাণ্ডা পানি পান করতে পারবে না।
হাদীস : হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- اِنّى أتى جَهَنَّمَ فَاضْرِبُ بَابَهَا فَيُفْتَحُ لِي فَادْخُلُهَا فَأَحْمَدُ اللهَ بِمَحَامِدِهِ مَا حَمِدَهُ بِهَا أَحَدٌ قَبْلَ مِثْلَهَا وَلَا يَحْمَدُهُ أَحَدٌ بَعْدِي ثُمَّ أُخْرِجُ مِنْهَا مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصًا فَيَقُوْمُ إِلى نَاسٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَيَنْتَسِبُوْنَ إِلَيَّ فَأَعْرِفُ نَسَبَهُمْ وَلَا أَعْرِفُ وُجُوْهَهُمْ فَأَتْرُكُهُمْ فِي النَّارِ
আমি জাহান্নামের দরজায় আসব, দরজায় করাঘাত করব। আমার জন্য দরজা খোলা হবে। আমি তাতে প্রবেশ করব। (উল্লেখ্য, তখন জাহান্নামের আগুন তাঁকে জ্বালাতে ও কষ্ট দিতে পারবে না।) এবং আমি আল্লাহ্ তা’আলার এমন প্রশংসা করব যা ইতিপূর্বে আর কেউ করেনি এবং আমার পরেও আর কেউ কখনও এমন প্রশংসা করবে না। এরপর আমি জাহান্নাম থেকে এমন লোকদেরকে বের করে নিয়ে আসব, যারা ইখলাসের সাথে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করেছে। অতঃপর আমার নিকট কোরেশ বংশের কিছু লোক আসবে। তারা আপন বংশ আমার দিকে সম্পৃক্ত করতে থাকবে। আমি তাদের বংশ সম্পর্কে অবগত থাকব কিন্তু তাদেরকে চিনতে পারব না। অতঃপর আমি তাদেরকে সেখানেই ছেড়ে দিব। চিরকাল তারা সেখানেই বসবাস করবে।
জাহান্নামের বেষ্টনীসমূহ
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান- إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا আমি অত্যাচারীদের জন্য এমন আগুন বানিয়ে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে ।
হাদীস ঃ হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন— سُرَادِقُ النَّارِ أَرْبَعَةُ جُدُرٍ كَشَفُ كُلِ جِدَارٍ مَسِيْرَةَ أَرْبَعِيْنَ سَنَةً
জাহান্নামের বেষ্টনী হবে চারটি প্রাচীর। প্রত্যেক প্রাচীরের পুরত্ব হবে চল্লিশ বছরের পথ। —তিরমিযী
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— وَ اِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ و سَاءَتْ مُرْتَفَقًا . وَ لَهُمْ مَقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَةٍ أُعِيدُوا فِيْهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ .
আর যদি জাহান্নামীরা প্রচণ্ড পিপাসার তাড়নায় পানির জন্য ফরিয়াদ করতে থাকে, তাহলে তাদেরকে এমন পুঁজের ন্যায় পানি দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডলকে ঝলসে দেবে। এ পানীয় কতই না নিকৃষ্ট হবে এবং এটা খুবই মন্দ ঠিকানা । –সূরা কাহাফ-২৯
তাদের জন্য রয়েছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে নেয়া হবে। বলা হবে, দহন-শাস্তি আস্বাদন কর। —সূরা হজ্জ-২১-২২
জাহান্নামী কখনও প্রশাস্তির শ্বাস নিবে না
আবু মহশার (রহঃ) বলেন, আমরা কারী আবু জা’ফরের সাথে এক জানাযায় শরীক হলাম। হযরত আবু জা’ফর কেঁদে দিলেন। অতঃপর আমাকে বললেন, হযরত যাইন ইবনে আসলাম আমাকে এ হাদীস শুনিয়েছেন যে, জাহান্নামী কখনোই প্রশান্তির শ্বাস নিতে পারবে না। এ বিষয়টিই আমাকে কাদিয়েছে। — জওযাজানী
হযরত ইকরিমা (রাযিঃ) বলেন— عَلَى كُلِّ بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ النَّارِ سَبْعُونَ أَلْفَ سَرَادِقَ مِنْ نَارٍ فِي كُل سَرَادِقٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ اَلْفَ قُبَّةٍ مِنْ نَّارٍ فِي كُلِّ قُبَّةٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ اَلْفَ تَنُوْرٍ مِنْ نَارٍ فِي كُلِّ تَنُوْرٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ كُوَّةٍ مِنْ نَارٍ فِي كُل كُوَّة مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ صَخْرَةٍ مِنْ نَارٍ عَلَى كُلِّ صَخْرَةٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ حَجَرٍ مِنْ نَارٍ عَلَى كُلِّ حَجَرٍ مِنْهَا سَبْعُونَ أَلْفَ عَقْرِبٍ مِنْ نَارٍ لِكُلِّ عَقْرَبٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ ذَنْبٍ مِنْ نَارٍ لِكُلِّ ذَنْبٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ فَقَارٍ مِنْ نَارٍ فِي كُلِ فَقَارٍ مِنْهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ قُلَّةٍ مِنْ سَةٍ وَ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مُوْقِدٍ مِنْ نَارٍ يُوْقِدُونَ تِلْكَ النَّارَ أَنَّهُمْ يَهُونَ مِنْ بَابِ إِلَى بَابِ خَمْسِينَ سَنَةٍ –
জাহান্নামের প্রত্যেক দরজাতেই আগুনের সত্তর হাজার বেষ্টনী থাকবে। তার প্রত্যেকটিতেই আগুনের সত্তর হাজার গম্বুজ থাকবে। প্রত্যেক গম্বুজ সত্তর হাজার আগুনের তন্দুর থাকবে। প্রত্যেক তন্দুরে সত্তর হাজার বাতী থাকবে। তার প্রত্যেকটিতে আগুনের সত্তর হাজার বিরাট পাথর খন্ড থাকবে। আর প্রতিটিপাথর খন্ডে আগুনের সত্তর হাজার বিচ্ছু থাকবে। প্রত্যেক বিচ্ছুতে আগুনের সত্তর হাজার লেজ থাকবে। প্রত্যেক লেজে আগুনের সত্তর হাজার দানা থাকবে। প্রত্যেক দানাতে সত্তর হাজার বিষ ভর্তি মটকা থাকবে। সেখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে, যারা শুধু আগুনে ফুৎকার দিতে থাকবে। জাহান্নামীরা এক দরজা থেকে অন্য দরজা পর্যন্ত পতিত হতে থাকবে পঞ্চাশ হাজার বছর যাবৎ।
তথ্যসূত্র:
বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী