জাহান্নামের দরজা সমূহ
জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِيْنَ – لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابِ لِكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ –
‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ (হিজির ১৫/৪৩-৪৪)।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় শয়তান ইবলীসের অনুসারীদের কিছু অংশের প্রবেশের কথা লিখা আছে, তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, পালানোর কোন পথ পাবে না।
প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং তার নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَبْوَابُ جَهَنَّمَ سَبْعَةٌ، بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ، فَيَمْتَلِيُّ الأَوَّلُ، ثُمَّ الثَّانِي، ثُمَّ الثَّالِثُ، ثُمَّ تَمْتَلِى كُلُّهَا”
‘জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে যা পর্যায়ক্রমে একটি অপরটির উপর অবস্থিত, সর্বপ্রথম প্রথমটি, অতঃপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর তৃতীয়টি পূর্ণ হবে, অনরূপভাবে সবগুলো দরজাই পূর্ণ হবে’।
এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। আর্থাৎ জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে। যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوْهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوْا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ
‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে’ (সূরা যুমার ৩৯/৭১)।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা কাফিরদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল’ (সূরা যুমার ৩৯/৭২)।
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا هُمْ أَصْحَابُ الْمَسْأَمَةِ – عَلَيْهِمْ نَارٌ مُّوْصَدَةٌ
‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ (সূরা বালাদ ৯০/১৯-২০)।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, (مُّوْصَدَةٌ) অর্থাৎ অবরুদ্ধ দরজাসমূহ।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ – الَّذِي جَمَعَ مَالاً وَعَدَّدَهُ – يَحْسَبُ أَنْ مَالَهُ أَخْلَدَهُ – كَلا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ – وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللَّهِ الْمُوْقَدَةُ الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ – إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُوْصَدَةٌ – فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَة –
‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গণনা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহ্র প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ (সূরা হুমাযাহ্ ১০৪/১-৯)।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন