জাহান্নামের অস্তিত্ব
আল্লাহ তা’আলা মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করে পার্থিব্য জীবন পরিচালনার জন্য ভাল-মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাল কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত এবং মন্দ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। আর এটি হল অহংকারী ও পাপীদের মর্মান্তিক আবাসস্থল। চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার ও অনুতাপস্থল। যুগ যুগ ধরে দগ্ধীভূত চূড়ান্ত দাহিকাশক্তি সম্পন্ন ভয়ংকর আগুনের লেলিহান বহ্নিশিখা এই জাহান্নামের স্বরূপ তুলে ধরা হল।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য জান্নাত ও অবাধ্য বান্দাদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যা বর্তমানে বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সৃষ্টি করেছেন তার অধিবাসী। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মু’তাযিলা ও কাদারিয়াগণ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন- আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করবেন।
জাহান্নামের অস্তিত্ব সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা জহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য’ (সূরা আলে-ইমরান ৩/১৩১)।
দ্বিতীয় দলীল : আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা নাবা ৭৮/২১-২২)।
জাহান্নামের অস্তিত্ব সম্পর্কে হাদীছ থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنْ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর যদি জাহান্নামী হয়, তবে তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়)। আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি। বুখারী হা/১৩৭৯, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৭২ পৃঃ; মুসলিম হা/২৮৬৬।
দ্বিতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عن أبي هُرَيْرَةَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ عَامِرِ بْنِ لُحَيِّ الْحُزَاعِيَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ، وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ سَيَّبَ السَّوَائِبَ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমের ইবনে লুহাই খুযআকে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে। বুখারী হা/৩৫২১, ‘খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৪৭৬ পৃঃ।
তৃতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ ثُمَّ رَأَيْنَاكَ كَعْكَمْتَ قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُوْدًا وَلَوْ أَصَبْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وَأُرِيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا بِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيْلَ يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ منْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ –
সময় সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি । আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী । লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কি কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে যদি তোমার হতে সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না। বুখারী,হাদীস : ১০৫০
চতুর্থ দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرِيلَ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا ، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلا دَخَلَهَا ثُمَّ حَفْهَا بِالْمَكَارِهِ ثُمَّ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَى رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ، قَالَ فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ النَّارَ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَى رَبِّ وَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا فَحَفَّهَا بِالشَّهَوَاتِ ثُمَّ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ حَشِيْتُ أَنْ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا
দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা এবং উহার অধিবাসীদের জন্য যে সমস্ত জিনিস আল্লাহ তা’আলা তৈরী করে রেখেছেন, সবকিছু দেখে আসলেন, এবং বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেহ এই জান্নাতের অবস্থা সম্পর্কে শুনবে, সে অবশ্যই উহাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ প্রবেশের আকাঙ্খা করবে)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জান্নাতকে তার চারপার্শে কষ্টসমূহ দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন, অতঃপর পুনরায় জিবরাইল (আঃ)-কে বললেন, হে জিবরাইল! যাও এবং পুনরায় জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা দেখে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এখন যাকিছু দেখলাম, উহার প্রবেশপথ যে কষ্টকর; তাতে আমার আশংকা হচ্ছে যে, কোন একজনই উহাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যখন জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন। তখন বললেন, হে জিবরাইল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি দেখে এসে বলবেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেহ এই জাহান্নামের ভয়ংকর অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও উহাতে প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ এমন কাজ করবে, যাতে উহা হতে বেঁচে থাকতে পারে)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে তার চারপার্শে প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা বেষ্টন করলেন এবং পুনরায় জিবরাইলকে বললেন, যাও এবং দ্বিতীয়বার উহা দেখে আস । তিনি গেলেন এবং দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে, একজন লোকও উহাতে প্রবেশ ব্যতীত বাকী থাকবে না । আবুদাউদ হা/৪৭৪৪; নাসাঈ হা/৩৭৬৩; মিশকাত হা/৫৬৯৬, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৭২; আলবানী, সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে’ হা/৫২১০।
উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ হতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্ট অবস্থায় বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। যার উপরে আহলুস সন্নাত ওয়াল জামা’আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অতএব মু’তাযিলাহ ও কাদারিয়াদের মত গ্রহণযোগ্য নয় ।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন
আল্লাহ তা’আলা মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করে পার্থিব্য জীবন পরিচালনার জন্য ভাল-মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাল কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত এবং মন্দ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। আর এটি হল অহংকারী ও পাপীদের মর্মান্তিক আবাসস্থল। চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার ও অনুতাপস্থল। যুগ যুগ ধরে দগ্ধীভূত চূড়ান্ত দাহিকাশক্তি সম্পন্ন ভয়ংকর আগুনের লেলিহান বহ্নিশিখা এই জাহান্নামের স্বরূপ তুলে ধরা হল।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য জান্নাত ও অবাধ্য বান্দাদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যা বর্তমানে বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সৃষ্টি করেছেন তার অধিবাসী। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মু’তাযিলা ও কাদারিয়াগণ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন- আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করবেন।
জাহান্নামের অস্তিত্ব সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা জহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য’ (সূরা আলে-ইমরান ৩/১৩১)।
দ্বিতীয় দলীল : আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা নাবা ৭৮/২১-২২)।
জাহান্নামের অস্তিত্ব সম্পর্কে হাদীছ থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنْ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর যদি জাহান্নামী হয়, তবে তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়)। আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি। বুখারী হা/১৩৭৯, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৭২ পৃঃ; মুসলিম হা/২৮৬৬।
দ্বিতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عن أبي هُرَيْرَةَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ عَامِرِ بْنِ لُحَيِّ الْحُزَاعِيَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ، وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ سَيَّبَ السَّوَائِبَ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমের ইবনে লুহাই খুযআকে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে। বুখারী হা/৩৫২১, ‘খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৪৭৬ পৃঃ।
তৃতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ ثُمَّ رَأَيْنَاكَ كَعْكَمْتَ قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُوْدًا وَلَوْ أَصَبْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وَأُرِيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا بِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيْلَ يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ منْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ –
সময় সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি । আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী । লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কি কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে যদি তোমার হতে সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না। বুখারী,হাদীস : ১০৫০
চতুর্থ দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرِيلَ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا ، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلا دَخَلَهَا ثُمَّ حَفْهَا بِالْمَكَارِهِ ثُمَّ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَى رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ، قَالَ فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ النَّارَ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَى رَبِّ وَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا فَحَفَّهَا بِالشَّهَوَاتِ ثُمَّ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ حَشِيْتُ أَنْ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا
দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা এবং উহার অধিবাসীদের জন্য যে সমস্ত জিনিস আল্লাহ তা’আলা তৈরী করে রেখেছেন, সবকিছু দেখে আসলেন, এবং বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেহ এই জান্নাতের অবস্থা সম্পর্কে শুনবে, সে অবশ্যই উহাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ প্রবেশের আকাঙ্খা করবে)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জান্নাতকে তার চারপার্শে কষ্টসমূহ দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন, অতঃপর পুনরায় জিবরাইল (আঃ)-কে বললেন, হে জিবরাইল! যাও এবং পুনরায় জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা দেখে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এখন যাকিছু দেখলাম, উহার প্রবেশপথ যে কষ্টকর; তাতে আমার আশংকা হচ্ছে যে, কোন একজনই উহাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যখন জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন। তখন বললেন, হে জিবরাইল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি দেখে এসে বলবেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেহ এই জাহান্নামের ভয়ংকর অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও উহাতে প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ এমন কাজ করবে, যাতে উহা হতে বেঁচে থাকতে পারে)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে তার চারপার্শে প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা বেষ্টন করলেন এবং পুনরায় জিবরাইলকে বললেন, যাও এবং দ্বিতীয়বার উহা দেখে আস । তিনি গেলেন এবং দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে, একজন লোকও উহাতে প্রবেশ ব্যতীত বাকী থাকবে না । আবুদাউদ হা/৪৭৪৪; নাসাঈ হা/৩৭৬৩; মিশকাত হা/৫৬৯৬, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৭২; আলবানী, সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে’ হা/৫২১০।
উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ হতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্ট অবস্থায় বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। যার উপরে আহলুস সন্নাত ওয়াল জামা’আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অতএব মু’তাযিলাহ ও কাদারিয়াদের মত গ্রহণযোগ্য নয় ।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন