জাহান্নামীদের খাদ্য
জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে আল্লাহ তা’আলা যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত এক প্রকার গাছ নির্ধারণ করেছেন। অথচ ইহা মুলত খাদ্য নয় । বরং ইহা জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়ার একটি উপকরণ মাত্র ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلا مِن ضَرِيْع – لا يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِي مِن جُوعٍ
‘তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত ফল ব্যতীত, যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করবে না’ (সূরা গাশিয়া ৮৮/৬-৭)।
আয়াতে বর্ণিত ضَرِيْع হচ্ছে এক প্রকার কাটাযুক্ত গাছ, যা হিজায এ পাওয়া যায়।
উল্লিখিত কাঁটাযুক্ত গাছ জাহান্নামীগণ ভক্ষণ করবে। কিন্তু এতে তারা কোন স্বাদ অনুভব করবে না এবং শারীরিক কোন উপকারে আসবে না। অতএব এই খাদ্য তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ প্রদান করা হবে।
জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারিত যাক্কুম সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُوْمِ – طَعَامُ الْأَثِيْمَ – كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ
‘নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, গলিত তামার মত তাদের উদরে ফুটতে থাকবে। যেমন গরম পানি ফুটতি থাকে। (সূরা দুখান,৪৪/৪৩-৪৬)
তিনি অন্যত্র বলেন, أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلاً أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُوْمِ إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةٌ لِلظَّالِمِيْنَ ۖ إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيْمِ طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِيْنِ فَإِنَّهُمْ لَاكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَالِكُوْنَ مِنْهَا الْبُطُونَ – ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ – ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ
‘আপ্যায়নের জন্য কি ইহাই শ্রেয় না যাক্কুম বৃক্ষ? যালিমদের জন্য আমি ইহা সৃষ্টি করেছি বিপদস্বরূপ, এই বৃক্ষ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, ইহার মোচা যেন শয়তানের মাথা, তারা ইহা হতে ভক্ষণ করবে এবং উদর পূর্ণ করবে ইহা দ্বারা। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ । আর অবশ্যই তাদের গন্তব্য হবে প্রজ্জ্বলিত অগ্নির দিকে’ (সূরা ছাফফাত ৩৭/৬২-৬৮)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الصَّالُوْنَ الْمُكَذِّبُونَ . لَاكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِنْ زَقَوْمٍ. فَمَالِمُوْنَ مِنْهَا الْبُطُونَ. فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ. فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ. هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ.
‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ হতে এবং উহা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে, পরে তোমরা পান করবে উহার উপর গরম পানি, আর পান করবে পিপাষিত উটের ন্যায় । কিয়ামতের দিন ইহাই হবে তাদের আপ্যায়ন (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬/৫১-৫৬)।
উল্লিখিত আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, যাক্কুম বৃক্ষ যা আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন তা অতীব নিকৃষ্ট, যা উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে। আর উহার ফল দেখতে কুৎসিত যা আল্লাহ তা’আলা শয়তানের মাথা স্বদৃশ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ জাহান্নামীদেরকে প্রচন্ড ক্ষুধা প্রদান করবেন। আর এই ক্ষুধার্থ জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ যাক্কুম প্রদান করবেন। প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন তারা এই যাক্কুম বৃক্ষ খাওয়ার চেষ্টা করবে তখন তাদের গলায় এমনভাবে আটকিয়ে যাবে যা নিচেও নামবে না বের হয়েও আসবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, إِنَّ لَدَيْنَا أَنكَالًا وَجَحِيْمًا ۖ وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيْمًا –
‘আমার নিকট আছে শৃংখল ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকিয়ে যায় এবং মর্মন্তুদ শাস্তি’ (সূরা মুযযাম্মিল ৭৩/১২-১৩)।
তথ্যসূত্র:
জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন