ইসলাম

জাহান্নামীদেরকে যেভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে

আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে রেখে এবং পাঁ উপর দিকে উঠিয়ে তাদের গলায় বেড়ি ও শৃংখলিত করে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوْهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوْا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ قِيْلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيْهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ

‘আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলোকে তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত। তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। কিন্তু কাফিরদের উপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হল। বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর, তাতেই স্থায়ীভাবে থাকার জন্য। অতএব অহঙ্কারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট’ (সূরা যুমার ৩৯/৭১-৭২)।

তিনি অন্যত্র বলেন, يَوْمَ يُدَعُوْنَ إِلَى نَارِ جَهَنَّمَ دَعَا – هَذِهِ النَّارُ الَّتِي كُنتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ –

‘সেদিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর বলা হবে, এই সেই অগ্নি, যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে’ (সূরা তূর ৫২/১৩-১৪)।

তিনি অন্যত্র বলেন,

بَلْ كَذَّبُوا بِالسَّاعَةِ وَأَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّب بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا إِذَا رَأَتْهُمْ مِنْ مَكَانٍ بَعِيْد سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيْرًا – وَإِذَا أُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ وْرًا – لاَ تَدْعُوا الْيَوْمَ تُبُوْرًا وَاحِدًا وَادْعُوْا ثُبُوْرًا كَثِيرًا –

‘আর যারা ক্বিয়ামতকে অস্বীকার করে, আমি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। দূর হতে আগুন যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও হুংকার। আর যখন তাদেরকে গলায় হাত পেঁচিয়ে জাহান্নামের সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, সেখানে তারা নিজেদের ধ্বংসকে আহবান করবে। বলা হবে, একবার ধ্বংসকে ডেকো না; অনেকবার ধ্বংসকে ডাকো (সূরা ফুরকান ২৫/১১-১৪)। তিনি অন্যত্র বলেন,

الَّذِيْنَ كَذَّبُوا بِالْكِتَابِ وَبِمَا أَرْسَلْنَا بِهِ رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ إِذِ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُ يُسْحَبُوْنَ – فِي الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُوْنَ –

‘যারা অস্বীকার করে কিতাব ও যা সহ আমার রাসূলকে প্রেরণ করেছি তা, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখলিত থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে। (সূরা মুমিন,৪০/৭০-৭২)

তিনি অন্যত্র বলেন,

وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمَّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا حَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا –

‘কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মুক ও বধির করে। আর তাদের আবাস স্থল জাহান্নাম । যখনই উহা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব’ (সূরা বানী ইসরাইল ১৭/৯৭)।

তিনি অন্যত্র বলেন, إِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ – يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ –

‘অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত। যেদিন তাদেরকে উপুড় করে মুখের উপর ভর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, সে দিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর’ (সূরা ক্বামার ৫৪/৪৭-৪৮)।

হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلاً قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنَّ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالَ قَتَادَةُ بَلَى وَعِزَّةِ رَبِّنَا –

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে) । তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠনো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন ক্বাতাদাহ (রাঃ) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই পারবেন। (বুখারী,হাদীস,৫৫৭৩ মিশকাত হা/৫৫৭৩ ।

অন্য হাদীছে এসেছে,

أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَخْرُجُ عُنُقُ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ وَلِسَانُ يَنْطِقُ يَقُوْلُ إِنِّي وَكَلْتُ بِثَلَاثَةٍ بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ وَبِكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَبِالْمُصَوِّرِيْنَ

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে একটি ঘাড় বের হবে, যার দু’টি চোখ থাকবে যা দ্বারা দেখবে, দু’টি কান থাকবে যা দ্বারা শুনবে এবং একটি জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে বলবে, আমাকে তিন শ্রেণীর মানুষের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক অবাধ্য প্রতাপশালী, আল্লাহর সাথে শিরককারী এবং ছবী অংকনকারীদের জন্য। তিরমিযী হা/২৫৭৪; মিশকাত হা/৪৫০২; সিলসিলা ছহীহা হা/৫১২।

তথ্যসূত্র:

জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব

শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *