জামাতে নামায আদায়ের ফযিলত
আল্লাহ তায়ালা সালাতের মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
সালাতের প্রতি যত্নবান ও জামায়াতভুক্ত হয়ে সালাত আদায়ের আদেশ করেছেন। সালাতকে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: আর সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাতে রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (বাকারা-৪৩)
আর এর প্রতি অবমাননা এবং তা আদায়ে অলসতা মুনাফিকের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : মুনাফিকরা অবশ্যই প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে অথচ তারা প্রকারান্তরে নিজেদেরই প্রতারিত করছে । বস্তুত তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তারা দাঁড়ায় একান্ত শিথিলভাবে। (সূরা নিসা-১৪২)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে : তারা সালাতে আসে আলস্যভরে (সূরা তওবা : ৫৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। যুদ্ধ কি শান্তি, সুস্থ কি অসুস্থ সকল অবস্থায় এমনকি ওয়াফতের পূর্বে মৃত্যব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায়ও তিনি সালাত আদায়ে অবহেলা করেননি বিন্দুমাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবিগণ ও পরবর্তীতে তাবেঈন ও উত্তম পূর্বপুরুষগণ সালাতের প্রতি ছিলেন বর্ণনাতীতভাবে ঐকান্তিক, একনিষ্ঠ। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি রীতিমতো ঘাবড়ে দেবার মতো। বর্তমানে অনেক মুসলমানই সালাত আদায়ে দারুণভাবে উদাসীন। জুমার সালাতে মসজিদে উপচে-পড়া ভিড় হচ্ছে ঠিকই তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদের অধিকাংশ জায়গাই থাকে মুসুল্লিশূন্য। সালাত বিষয়ে মুসলমানদের অবহেলার আদৌ কোন কারণ থাকতে পারে না। সালাত বিষয়ে অবহেলার অর্থ ঈমানের একটি মৌলিক দাবি, ইসলামের একটি প্রধানতম নিদর্শন বিষয়ে অবহেলা। আর যারা এ ধরনের অবহেলা প্রদর্শনে অভ্যস্ত তাদের অপেক্ষায় থাকবে মর্মন্তুদ শাস্তি, কঠিন নারকীয় আযাব।
আমাদের পূর্বপুরুষগণ জামায়াতভুক্তিতে সালাত আদায়ের প্রতি খুবই যত্নশীল ছিলেন। তাদের নিকট এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ; এমনকি জামাত ছুটে গেলে খুবই মর্মাহত হতেন। তারা। মনোকষ্টে অশ্রু ঝরাতেন। সমবেদনা জানাতেন একে অপরকে জামাত ছুটে যাওয়ার কারণে।
জামায়াতে সালাত না আদায়ের ফলে মনোবেদনা
মুহাম্মদ বিন মুবারক আ‘সম (রহ) বলেন : ‘আমি জামায়াতে সালাত আদায়ে সক্ষম না হওয়ায় শুধু আবু ইসহাক আল-বুখারীই সমবেদনা জানান। অথচ যদি আমার পিতা মারা যেত, তাহলে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ আমাকে সমবেদনা জানাত। কেননা ধর্ম পালন করতে গিয়ে কষ্ট শিকার, তাদের নিকট দুনিয়ার মসিবতের চেয়েও সহজ মনে হত।
জামায়াতে সালাত আদায় তাদের নিকট দুনিয়ার সম্পদ অর্জনের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অথচ আমরা দুনিয়ার পিছনেই লেগে রয়েছি মরিয়া হয়ে। দুনিয়ার অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভয়ে অনেক সময় সালাতও আদায় করছি দেরি করে। শুধু তাই নয় বরং আমাদের মাঝে এমন অনেকই আছেন, যারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের পিছনে তাড়িত হয়ে সালাত আদায়ই ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
মায়মুন বিন মেহরান (রহ) মসজিদে এলে তাকে বলা হল, সমস্ত লোক চলে গিয়েছে। তিনি বললেন : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এই সালাতের মর্যাদা আমার নিকট ইরাকের গভর্নর হওয়ার চেয়েও অধিক প্রিয়।
ইউনুস বিন আব্দুল্লাহ (রহ) বলেন, আমার যদি মুরগী হারিয়ে যায়, তবে আমি তার জন্য চিন্তিত হই, অথচ সালাত ছুটে গেলে তার জন্য চিন্তিত হই না! সালফে সালেহীনগণ সালাতের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে মসজিদে যাবার জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। ইমামের সাথে প্রথম তাকবিরে উপস্থিত হবার জন্য তারা সকলে ছিলেন প্রচণ্ড আগ্রহী।
সাঈদ নি মুসায়্যিব (রহ) বলেন : পঞ্চাশ বছর ধরে আমার প্রথম তাকবির ছুটেনি, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত আমি ফরজ নামাজে মানুষের ঘাড় দেখিনি। অর্থাৎ তিনি পঞ্চাশ বছর ধরে প্রথম কাতারেই শামিল ছিলেন।
ওয়াকী বিন জারাহ (রহ) বলেন : প্রায় সত্তর বছর পর্যস্ত আ’মাশ (রহ) এর প্রথম তাকবির ছুটেনি। ইবনে সামাআহ (রহ) বলেন : চল্লিশ বছর পর্যন্ত আমার তাকবিরে উলা ছুটেনি। শুধু যে দিন আমার মায়ের মৃত্যু হয়, সে দিন ছুটেছিল।
প্রিয় ভাই! আমাদের অবস্থা আর সালফে সালেহিনের অবস্থার মাঝে অনেক ব্যবধান তাদের নিকট সালাতের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, আর আমরা এর অবমাননা করছি হরহামেশা। তারা এর প্রতি যত্নবান ছিলেন। আর আমরা করছি অলসতা। তারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের ওপর সালাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর আমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি এবং একে (সালাতকে) পিছনে ফেলে রেখেছি। এর গুরুত্বপূর্ণ ছাওয়াব ও অফুরন্ত ফজিলতের প্রতি তাদের উৎসাহ ছিল অপরিসীম। আর আমরা এ থেকে বিমুখ।
জামায়াতে সালাত আদায়ের ফজিলত
জামায়াতে সালাত আদায়ের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :
১। সালাত পাপমোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদের এমন বিষয় জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ? সাহাবায়ে কেরাম বললেন : জ্বি, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তা হচ্ছে কষ্টের সময়ে যথাযথভাবে অযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচারণ করা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাকা। এটাই হল সীমান্ত প্রহরা। (তিরমিজি : ৪৮)
অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তার আসা এবং যাওয়ায় প্রতি পদক্ষেপে গুনাহ মিটে যায় এবং প্রতি পদক্ষেপে নেক আমল লেখা হয়। (আহমাদ : ৬৩১১)
২। সালাত শয়তান থেকে হেফাজত করে
হযরত আবু দারদা (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে গ্রামে বা মরুপ্রান্তরে তিনজন লোক অবস্থান করে অথচ তারা জামায়াত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, শয়তান তাদের ওপর চরে বসে। কাজেই জামায়াতে সালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলছুট বকরীটিকেই উদরস্থ করে (আবু দাউদ : ৪৬০)
৩। নিফাক থেকে পরিত্রাণ এবং জাহান্নাম খেকে মুক্তি
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, এশা ও ফজরের সালাত মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে বেশি ভারী বোঝা বলে মনে হয়। (বুখারি ও মুসলিম : ১৪১১)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তকবিরের সাথে জামায়াতে সালাতে আদায় করে, তার জন্য দু’টি মুক্তি রয়েছে : জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর নিফাক থেকে মুক্তি। (তিরমিজি : ২২৪)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি:) বলেন, এক সময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ব্যতীত আর কেউ জামায়াতে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকেনি। (মুসলিম : ১০৪৬)
৪। কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ
হযরত বুরাইদাহ (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্ধকার রাতে মসজিদে গমনকারীদের জন্য কেয়ামত দিবসে পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ : ৪৪৭)
৫। জামায়াতে সালাত আদায়কারী আল্লাহর হেফাজতে
হযরত উমামাহ (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায়, তন্মধ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে ; এমনকি তার মৃত্যু হলে তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা তাকে ছাওয়াব বা গনিমত প্রদান করে (বাড়িতে) ফিরিয়ে দিবেন। (আবু দাউদ : ২১৩৩)
তাছাড়া নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে। যে আল্লাহর জিম্মাকে অবমাননা করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (দারামি : ৩৩৬৭) একটু ভেবে দেখুন! যে ব্যক্তি সকল ফরজ-সালাত জামায়াতের সাথে মসজিদে আদায় করে তার অবস্থা কত কল্যাণময় হতে পারে ?
৬। মসজিদে সালাত আদায়ে অধিক ছওয়াব
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জামায়াতের সাথে সালাত আদায় ঘরে বা বাজারের সালাতের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি ছওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে অযু করে খুব সুন্দর করে। এবং (সালাতের জন্য) মসজিদের উদ্দেশে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে, প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে সালাত আদায় করতে থাকে, ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ! এর ওপর দয়া কর। আর যতক্ষণ সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে সালাতের অর্ন্তভুক্ত থাকে। (বুখারি ও মুসলিম : ৬১১)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন, যতবার সে সকালে বা সন্ধ্যায় গমন করে ততবারই। (বুখারি ও মুসলিম : ৬২২)
আবু উমামাহ থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে পবিত্র হয়ে ফরয সালাতের জন্য বের হয়, তার ছওয়াব একজন হজ পালনকারীর ছওয়াবের সমান। (আবু দাউদ : ৪৭১)
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু সালামাহ গোত্র মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হতে মনস্থ করল। তিনি বলেন, জায়গা খালি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে বনি সালামাহ! তোমরা তোমাদের বর্তমান বাসস্থানগুলো ধরে রাখ। মসজিদে গমনাগমনের পদক্ষেপগুলো তোমাদের জন্যে লিখে রাখা হবে। তারা বললেন, স্থানান্তরিত হওয়া আমাদের কিই-বা আনন্দ দিতে পারে! (মুসলিম: ১০৬৯)
৭। কেয়ামত দিবসে আরশের নিচে ছায়া পাবেন
সাহাবি আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ছায়া দান করবেন ঐ দিন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে একজন হল ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় মসজিদের সাথে লাগানো। অর্থাৎ সালাত ও জামায়াতের প্রতি আন্তরিকভাবে আগ্রহী। (বুখারি ও মুসলিম : ৬২০)
৮। আল্লাহ তায়ালা মুসল্লির আগমনে খুশি হন
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পরিপূর্ণভাবে অযু করে, অতঃপর শুধু সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি এমন খুশি হন যেরূপ খুশি হয় নিরুদ্দেশ ব্যক্তির আচম্বিতে ফেরে আসায় তার পরিবারের সদস্যরা । (ইবনু খুযাইমাহ : ৮১৩১)
৯। একাগ্রতা অর্জন ও অন্তর বিগলিত হওয়ার উপকরণ
কোনো মুসলিম যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়, অতঃপর সে মসজিদে আগত মুসল্লিদের আল্লাহর সামনে রুকু-সিজদারত অবস্থায় দেখে। যিকির এবং কোরআন তিলাওয়াত প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর কালাম স্বকর্ণে শোনার সুযোগ পায়। এসব থেকে সে বুঝতে পারে এ ময়দান আল্লাহ ও তার জান্নাত লাভের উদ্দেশে প্রতিযোগিতার ময়দান। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাকারীরাই আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়।
১০। পারস্পরিক আন্তরিকতা ও মহব্বত সৃষ্টি করে
জামায়াতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানগণ দিন ও রাতে পাঁচবার পরস্পর মিলিত হয়। তাদের মাঝে সালাম বিনিময় হয়। একে অপরের খোঁজ-খবর নেয়। হাসিমুখে একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করে। এসব বিষয় পারস্পরিক মহব্বত, ভালবাসা এবং একে অপরের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়।
১১। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের নিকট মুসল্লিদের নিয়ে গর্ব করেন
হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাযি) থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের প্রভু আসমানের দরজাসমূহের একটি দরজা খুলেছেন। সেখানে তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ আমার বান্দাদেরকে, তারা একটি ফরজ আদায় করেছে এবং আরেকটি ফরজের জন্য অপেক্ষা করছে। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ্ : ৭৯৩ )
১২। অজ্ঞ লোকের শিক্ষা এবং বিজ্ঞের উপদেশ
যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে মসজিদে সালাত আদায় করে, সে সালাতের আহকাম, আরকান, সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়গুলো আহলে ইলম থেকে শিখতে পারে । আহলে ইলমের সালাত দেখে উক্ত ব্যক্তি নিজের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে নেয়। এমনিভাবে ওয়াজ-নসিহত শুনে ভাল কাজে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এতে সে অনেক উপকৃত হয়, যা ঘরে সালাত আদায় করে আদৌ সম্ভব নয়।
১৩। আল্লাহ তায়ালা মুগ্ধ হন
কতই না সৌভাগ্য ঐ ব্যক্তির, যার আমল দেখে সৃষ্টিকর্তা মুগ্ধ হন। হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা জামায়াতে সালাত আদায় করাতে মুগ্ধ হন। (আহমাদ)
১৪। ছওয়াব লেখা এবং আসমানে উঠানোর ব্যাপারে ফেরেশতাগণ বির্তক করেন
ইবনে আব্বাস (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একরাতে আল্লাহ তায়ালা এক জ্যোর্তিময় অবস্থায় আমার নিকট এলেন । তিনি বলেন, সম্ভবত তা নিদ্রায় হবে। এসে বললেন : হে মুহাম্মদ ! ঊর্ধ্বজগতে কি নিয়ে বিতর্ক হয় তুমি জান? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তার শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। (অথবা বললেন আমার গলায়) তখন বুঝতে পারলাম আসমান জমিনের মাঝে কি হচ্ছে ? তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ! তুমি জান উপর আসমানে কি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে ? আমি বললাম : হ্যাঁ, কাফফারা সম্পর্কে। কাফফারা হল সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে জামায়াতের জন্য গমন করা, কষ্টের সময়েও পুরোপুরি অযু করা। যে ব্যক্তি এটা করবে সে কল্যাণময় জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যু মঙ্গলময় হবে । তার গুনাহগুলো মিটে এমন হবে যেন সে তার মায়ের উদর থেকে আজই জন্মগ্রহণ করল। (তিরমিজি : ৩১৫৭)
১৫। ভাল কাজের প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত এবং নফলের প্রতি উৎসাহিত করে
আবু হুরাইরা (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি লোকেরা জানত আজান এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি আছে, আর লটারির মাধ্যম ছাড়া তা অর্জন করার অন্য কোন পথ না থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই লটারি করত। যদি তারা জানত গরমের সময় ভর দুপুরে মসজিদে যাওয়ার কি ফজিলত, তাহলে অবশ্যই তার জন্যে প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা এশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে কি মর্যাদা আছে জানতে পারত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দু’টি সময়ের সালাতে শামিল হত। (বুখারি ও মুসলিম: ৫৮০)
অনুরূপভাবে সালাতের সাথে সালাত আদায় ব্যক্তিকে নফল সালাত আদায়েও অভ্যস্ত করে তুলে। যে ব্যক্তি সালাত কায়েমের পূর্বে মসজিদে আসে, সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের সুযোগ পায়, সুন্নাত পড়ার সুযোগ পায়, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ইসতিগফার ইত্যাদির সুযোগ পায়। আর কিছু না করলেও অন্তত সালাতের অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকতে পারে। আর এ সময় ফেরেশতাগণ তার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি রহম কর।
আবু হুরায়রাহ (রাযি) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন —রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি যখন সালাতের জন্য নিজের মহল্লায় অপেক্ষা করতে থাকে, তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকে যতক্ষণ তার অযু ভঙ্গ না হয়। ফেরেশতাগণ বলতে থাকে, আল্লাহ! তুমি একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! তুমি এর ওপর রহম কর। (মুসলিম : ১০৬৩)
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স