জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। একজন মানুষ মারা গেলে মুমিনের জন্য কর্তব্য বিষয় আছে কয়েকটি। নবীজি সা. বলেন, ‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের অধিকার পাঁচটি। ১. সালামের উত্তর দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচির উত্তর দেওয়া। (বুখারি ১২৪০)
রাসুলুল্লাহ সা. জানাজার নামাজে উপস্থিত হতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য নামাজ আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কিরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।’ (বুখারি ১৩২৫)
এছাড়াও জানাজার নামাজে উপস্থিত হয়ে মুমিনরা নামাজের মাধ্যমে মৃতব্যক্তির পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহর দরবারে মুমিনের এই সুপারিশের বিশেষ মূল্য আছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাজায় যদি এমন ৪০ জন দাঁড়িয়ে যায়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না, তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (মুসলিম ২০৮৮)
জানাজা নামাজের রহস্য
জানাজার নামাজের প্রতি ইসলাম এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু অন্তর্নিহিত কারণ আছে। যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
১. মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ : পৃথিবীর নিয়ম হলো, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো রাজদরবারে নতুন আগমন করে, তখন তাঁর জন্য উপস্থিত ব্যক্তিরা বিনয়ের সঙ্গে সুপারিশ করতে থাকে। যেন আগত ব্যক্তির জন্য উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তেমনি কোনো মুসলমান যখন পৃথিবী ছেড়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন মুমিনরা জানাজার মাধ্যমে তাঁর পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহর দরবারে মুমিনের এই সুপারিশের বিশেষ মূল্য আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাজায় যদি এমন ৪০ জন দাঁড়িয়ে যায়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না, তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৮৮)
২. আল্লাহর সুসংবাদ লাভ : হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, ‘মানুষের আত্মা দেহ ত্যাগ করার পরও অভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়গুলো সঙ্গে সঙ্গে অক্ষম হয় না; বরং তাতে অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে। জাগতিক জীবনে অর্জিত জ্ঞানও তাঁর সঙ্গে থাকে। এই সময় ঊর্ধ্বজগৎ থেকে তার প্রতি এক ধরনের জ্ঞান ও বার্তা অবতীর্ণ হয়। যার ভিত্তিতে সে শাস্তি বা প্রশান্তি অনুভব করে। এই সময় যদি আল্লাহর বান্দারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে, মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করে, তবে মৃত ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপকারী জ্ঞান ও বার্তা লাভ করে। (যুক্তির আলোকে শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা ১১০)
৩. আমৃত্যু ভ্রাতৃত্ব : পৃথিবীতে মুমিনের সঙ্গে মুমিনের ভ্রাতৃত্ব আমৃত্যু। মৃত্যুর পরও তা অটুট থাকে এবং ভাই হিসেবে তার অধিকার শেষ হয়ে যায় না। এ জন্য নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের অধিকার পাঁচটি। তা হলো—১. সালামের উত্তর দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচির উত্তর দেওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪০)
৪. ক্ষমার শিক্ষা : জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে মুমিন ব্যক্তি সবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। যা তাকে পারস্পরিক ক্ষমার শিক্ষা দেয়। বিশেষত মৃত ব্যক্তির প্রতি যেন তার মনে কোনো ক্ষোভ ও কষ্ট ধরে না রাখে। জানাজায় সে পাঠ করে, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৯৮)
৫. মৃত্যুর স্মরণ : জানাজায় উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে জীবিত ব্যক্তিদের ভেতর মৃত্যুর স্মরণ জাগ্রত হয়। আর মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। বারা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের কিনারে বসে কাঁদলেন, এমনকি তাঁর চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, তোমাদের অবস্থাও তার মতোই হবে, সুতরাং তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ কোরো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৫)
আল্লাহ সবাইকে উত্তম জীবন দান করুন। আমিন