জান্নাতের চক্ষু শীতলকারী নিয়ামতসমূহ
জান্নাতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নেয়ামত দান করবেন যা মানুষের কল্পনাতীত। কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের নেয়ামত সম্পর্কে বহু স্থানে বর্ণিত হয়েছে। নিচে সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:
১. চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তি
জান্নাত হলো এমন এক স্থান যেখানে দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ বা ক্লান্তি থাকবে না।
আল্লাহ বলেন: وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ “আর আমরা তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেব। তারা ভাইয়ের মতো সিংহাসনে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে।” (সূরা হিজর: ৪৭)
২. চিরস্থায়ী জীবন ও অমরত্ব
জান্নাতে মৃত্যু থাকবে না। একবার প্রবেশ করলে জান্নাতবাসীরা অনন্তকাল সেখানে থাকবে।
আল্লাহ বলেন: خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
“তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।” (সূরা তাওবা: ১০০)
৩. স্বপ্নের মতো বাসস্থান
জান্নাতের ঘর-বাড়ি হবে অপূর্ব সুন্দর। সেগুলো সোনা, রূপা এবং মূল্যবান রত্নপাথর দিয়ে তৈরি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “জান্নাতে এমন একটি ইট সোনা এবং একটি ইট রূপা দিয়ে তৈরি প্রাসাদ রয়েছে।” (তিরমিজি: ২৫৪৬)
৪. পানির প্রবাহ ও খাদ্যবস্তু
জান্নাতে দুধ, মধু, পানীয় জল ও মদের ঝরনা প্রবাহিত হবে।
কুরআনে এসেছে: فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى
“সেখানে আছে এমন নদীসমূহ, যেগুলোর পানি কখনো নষ্ট হবে না; এবং আছে দুধের নদী, যার স্বাদ পরিবর্তন হবে না; আর আছে মদের নদী, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু; এবং আছে মধুর নদী, যা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।” (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
৫. নির্বিশেষে সকল খাদ্য
জান্নাতে ইচ্ছামতো সব ধরনের ফল-মূল, খাদ্য ও পানীয় পাওয়া যাবে।
আল্লাহ বলেন: كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
“তোমরা আনন্দের সঙ্গে খাও এবং পান কর, তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিদানে।” (সূরা মুরসালাত: ৪৩)
৬. চমৎকার পোশাক ও অলঙ্কার
জান্নাতে সিল্কের পোশাক এবং স্বর্ণ ও মুক্তার অলঙ্কার থাকবে। وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ
“তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম এবং মোটা রেশমের সবুজ পোশাক।” (সূরা কাহফ: ৩১)
৭. পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও অভ্যর্থনা
জান্নাতের মানুষদের জন্য বিশেষভাবে পরিবেশন করা হবে।
আল্লাহ বলেন: وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا
“তাদের চারপাশে রূপার পাত্র এবং স্বচ্ছ পেয়ালা নিয়ে ঘুরবে খাদেমরা।” (সূরা ইনসান: ১৫)
৮. অন্যরকম সঙ্গী (হুর ও গিলমান)
জান্নাতে জান্নাতবাসীদের জন্য বিশেষভাবে সৃষ্ট সঙ্গী (হুর) ও খাদেম (গিলমান) থাকবে। وَحُورٌ عِينٌ كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ “আর তাদের জন্য রয়েছে বড় বড় চোখবিশিষ্ট হুর, যেন তারা লুকানো মুক্তা।” (সূরা ওয়াকিয়া: ২২-২৩)
৯. আল্লাহর দর্শন
জান্নাতের সর্বোচ্চ নেয়ামত হলো আল্লাহর দর্শন লাভ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “তোমরা তোমাদের প্রভুকে জান্নাতে এমনভাবে দেখতে পাবে যেমন পূর্ণিমার চাঁদকে স্পষ্ট দেখা যায়।” (বুখারি: ৫৫৪)
১০. প্রত্যাশার ঊর্ধ্বে সম্মান
জান্নাতবাসীদের আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে সম্মানিত করবেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন: ‘তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ কি?’ তারা বলবে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন, আমরা কীভাবে অসন্তুষ্ট হতে পারি?’ তখন আল্লাহ বলবেন: ‘আজ আমি তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টি স্থায়ী করে দেব এবং কখনো অসন্তুষ্ট হব না।’” (মুসলিম: ১৮১০)
উপসংহার
জান্নাতের নেয়ামত এতটাই বিস্তৃত যে মানুষের কল্পনার বাইরে। আল্লাহ বলেন: فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ “কোনো প্রাণী জানে না তাদের জন্য কী কী চক্ষু-শীতলকারী বিষয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” (সূরা সাজদাহ: ১৭)
আমরা যেন এই অনন্ত নেয়ামত লাভের জন্য আমল করতে পারি।
সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স