জান্নাতিদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা
জান্নাত ভোগ-বিলাসের জায়গা। আনন্দ-ফুর্তির চিরস্থায়ী স্থান। মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই, বার্ধক্য নেই। সকল ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার স্থান জান্নাত। সেখানে কারও কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকবে না। সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশের শেষও থাকবে না। যখন যা প্রয়োজন সব কিছুই তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সেখানে (জান্নাতে) আছে, তোমাদের কাঙ্ক্ষিত এবং চোখ-জুড়ানো সব কিছু। তোমরা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে। আর এই যে তোমরা জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। এটা তোমাদের কর্মের ফল।’ (সুরা জুখরুফ: ৭১-৭২)
জান্নাতিরা থাকবে পছন্দনীয় খাবারের প্রাচুর্যের মধ্যে। (আল্লাহ বলবেন,) ‘তোমরা তোমাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।’ (মুরসালাত: ৪২-৪৪)
জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মাছের কলিজা দিয়ে নাশতা দেওয়া হবে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরই মধ্যে এক ইহুদি পাদ্রি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া মোহাম্মদ’ তখন আমি তাকে (ইহুদিকে) এমন জোরে ধাক্কা দিলাম যে, সে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। (ধাক্কা খেয়ে) সে আমাকে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা দিলে কেন? আমি বললাম রাসুলুল্লাহ (স.) না বলে ‘ইয়া মোহাম্মদ’ বললে কেন? ইহুদি বলল, আমি তো তাঁকে সেই নামেই ডেকেছি তাঁর পরিবার যে নাম রেখেছে।
তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমার পরিবারের লোকেরা আমার নাম মোহাম্মদই রেখেছেন। এরপর ইহুদি বলল, আমি আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে এসেছি। জবাবে রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বলেন, আমি তোমার জিজ্ঞাসিত বিষয় সম্পর্কে জানালে তোমার কী লাভ হবে? সে বলল, তা মনোযোগসহ শুনব। রাসুলুল্লাহ (স.) হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মাটিতে দাগ কাটতে কাটতে বললেন, তোমার যা জিজ্ঞাসা করার জিজ্ঞাসা করো। ইহুদি বলল, যেদিন আকাশ ও জমিনকে পরিবর্তন করা হবে (কেয়ামতের দিবসে) সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে?
রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে একটি অন্ধকার স্থানে থাকবে। কারা সর্বপ্রথম তা পার হবে? রাসুল (স.) বলেন, দরিদ্র মুহাজিররা। ইহুদি আবারও প্রশ্ন করল, তারা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম তাদের কী দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে? তিনি বলেন, মাছের কলিজা। ইহুদি পুনরায় প্রশ্ন করল, এরপর তাদের কী খাবার পরিবেশন করা হবে? তিনি বলেন, তাদের জন্য জান্নাতে পালিত ষাঁড় জবাই করা হবে। ইহুদি আবার প্রশ্ন করল, এরপর এদের পানীয় কী হবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, সালসাবিল নামক ঝরনার পানি। অতঃপর সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন। (সহিহ মুসলিম: ৬০৩)
উল্লেখ্য, সালসাবিল হলো এমন ঝরনা যার পানি ফুটন্ত চা ও কফির মতো সুগন্ধি ও উত্তপ্ত থাকবে। (তিরমিজি: ২৫৭১)
জান্নাতের আরও অবিশ্বাস্য নেয়ামত বর্ণনায় হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কখনো কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, যা সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে কোনো ধারণাও জন্মেনি। (সহিহ মুসলিম: ৭০২৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জান্নাতের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করুন। জান্নাত যেন ওয়াজিব হয়ে যায়, সেই আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।