যে সকল স্থানে রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর
দুরূদ পড়া সুন্নাত
১। আযানের পরে মুয়াযযিনের জবাবের পরে দুরূদ পড়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. এর হাদীস عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذَنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةٌ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ ليَ الْوَسِيلَةَ ، فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لى الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছেন: “যখন তোমরা আযান শোন তখন তোমরা তার জবাবে তাই বল— যেমনি সে বলে। অতপর আমার উপর দুরূদ পড়, কেননা যে আমার উপর একবার দুরূদ পড়ে, তার উপর আল্লাহ দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট অসীলা কামনা কর, কেননা; এটা জান্নাতের এমন এক স্তর যা আল্লাহর বান্দাদের থেকে এক বান্দার জন্যই শোভনীয়। আর আমি আশা করি, সেই ব্যক্তি আমিই হবো। সুতরাং যে আমার অসীলা হওয়াটা আল্লাহর কাছে চাইবে, তাঁর জন্য আমার শাফা’আত হালাল হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৩৮৪।)
২। মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দরুদ পড়া সুন্নাত
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- عَن أبي حُمَيْدٍ السَّاعِدِى، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمُ عَلَى النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لِيَقُلُ :
“হযরত আবু হুমাইদি আস সাঈদী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন নবীর উপর সালাম পেশ করে। অতঃপর যেন বলে হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আর যখন কেউ মসজিদে প্রবে করে, তখন সে যেন বলে: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার দেয়া রিযিক অনুগ্রহ চাই ।
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ. وَإِذَا خَرَجَ ، فَلْيَقُلْ: اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
“আর যখন বের হয়, তখন যেন বলে: ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কছে তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি। (সুনানে ইবনেমাযাহ, হাদীস নং: ৭৭২)
৩। সালাতে সর্বশেষ তাশাহহুদের বৈঠকে দুরূদ পড়া সুন্নাত
عَنْ فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ، يَقُولُ: سَمِعَ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يَدِعُو فِي صَلَاتِهِ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَجِلَ هَذَا» ، ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأُ بِتَحْمِيدِ اللَّهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ لِيُصَلِّ عَلَى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ثُمَّ لُيَدْعُ بَعْدُ بِمَا شَاءَ
“হযরত ফাদ্বালাহ বিন উবাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. শুনেছেন: এক ব্যক্তি সালাতে দু’আ করছে, কিন্তু তাঁর উপর দুরূদ পাঠ করেনি । তখন নবী করীম সা. বললেন, এটা তাড়াহুড়া হয়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. তাকে ডাকলেন, অতঃপর তাকে বা অন্য কাউকে বললেন- যখন তোমাদের কেউ সালাত পড়ে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন দিয়ে শুরু করে। অতঃপর নবী করীম সা. এর উপর যেন দুরূদ পড়ে, তারপর যা খুশি সে যেন প্রার্থনা করে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৩৪৭৭)
৪। দু’আ কবুল হওয়ার জন্য দুরূদ পড়া সুন্নাত
عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَابِ، قَالَ: إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ ، حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيّكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
“হযরত ওমর বিন খাত্তাব রা. বলেছেন— দু’আ আকাশ ও যমীনের মাঝে স্থির থাকে। এর থেকে কিছু উর্ধ্বে পৌঁছে না; যতক্ষণ না নবী করীম (স)- এর উপর দুরূদ পড়া হয়। (”সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৪৮৬।)
৫। জুমু’আর দিনে নবী করীম সা.-এর উপর দুরূদ পড়া সুন্নাত
যেমন নবী করীম সা.-এর বাণী- عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ
“হযরত আউস বিন আউস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্য থেকে উত্তম দিন হলো জুমু’আর দিন। এদিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে তাঁকে মৃত্যু দেয়া হয়েছে। এ দিনে শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তাতেই সংজ্ঞাহীন করা হবে। সুতরাং ঐদিনে আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়। (”সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ১০৪৭)
৬। জানাযার সালাতে দ্বিতীয় তাকবীরের পর দুরূদ পড়া সুন্নাত
৭। বক্তৃতা, খোত্বা, ভূমিকা ও মজলিসসমূহে দুরূদ পড়া সুন্নাত
৮। নবী সা. এর নাম উল্লেখের সময় দুরূদ পড়া সুন্নাত
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন— عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ .
“হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: সেই লোকের নাক ধূলিমলিন হোক, যার নিকট আমার নাম উল্লেখের পরও সে আমার উপর দুরূদ পড়েনি।” সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৩৫৪৫।
তিনি (স) আরও বলেন- عَنْ حُسَيْنِ بْنِ عَلِي بْنِ أَبي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : البَخِيلُ الَّذِي مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ .
“হযরত হুসাইন বিন আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: কৃপণ সে, যার নিকট আমার নাম উল্লেখের পর সে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে না ৷”সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৩৫৪৬।
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম