ইসলাম

যেমন হবে মুমিনের কবর জীবন

মানুষের জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য হলো পরকাল। দুনিয়ার জীবন শেষ হলে শুরু হয় কবরের জীবন, যা “বারযাখ” নামে পরিচিত। কবরের জীবন দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে একটি মধ্যবর্তী পর্যায়, যেখানে মানুষের কর্ম অনুযায়ী শান্তি বা শাস্তি নির্ধারিত হয়। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, মুমিনদের কবর জীবন জান্নাতের এক ঝলক হয়ে ওঠে। এটি দুনিয়ায় তাদের ঈমান ও সৎকর্মের ফল এবং আল্লাহর রহমতের নিদর্শন।

মুমিনের কবর জীবন আল্লাহর কৃপা ও অনুগ্রহের ফল। কুরআন ও হাদিসে মুমিনদের কবর জীবনের বিশেষ গুণাবলি এবং শান্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুমিনদের জন্য কবর জান্নাতের বাগানগুলোর মধ্যে একটি বাগান, যেখানে আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের সুসংবাদ তাদের জন্য অপেক্ষা করে। মুমিনের কবর জীবনের এই বর্ণনা আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উৎস।

কুরআনের আলোকে মুমিনের কবর জীবন:

১. আনন্দ ও শান্তি:

আল্লাহ বলেন: “যারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ,’ তারপর সোজা পথে চলে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নেমে বলে, ‘তোমরা ভয় পেও না, দুঃখ করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।’” (সূরা ফুসসিলাত: ৩০)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুমিনের মৃত্যু মুহূর্তে ফেরেশতারা তাকে শান্তি ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন।

২. জান্নাতের সুসংবাদ :

আল্লাহ বলেন: “আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য সুসংবাদ হলো জান্নাতের বাগান, যেখানে নদীগুলো প্রবাহিত। যখনই তাদেরকে এর কোনো ফল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটি তো আগে আমাদের দেওয়া হয়েছিল।’ এবং তাদেরকে একই ধরনের ফল দেওয়া হবে। তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সঙ্গী এবং তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।” (সূরা বাকারাহ: ২৫)

এই আয়াতে ঈমানদারদের চূড়ান্ত পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। যদিও এটি সরাসরি কবর জীবনের নয়, এটি প্রমাণ করে যে যারা ঈমান এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য জান্নাতনিশ্চিত। হাদিসে উল্লেখিত জান্নাতের দরজা কবর থেকেই মুমিনদের দেখানো হয়।

হাদিসের আলোকে মুমিনের কবর জীবন:

১. কবরের প্রশস্ততা ও জান্নাতের দৃশ্য:

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যখন মুমিন ব্যক্তি কবরে রাখা হয়, তখন তার কাছে একজন সুন্দর মুখাবয়বধারী ব্যক্তি আসে এবং বলে, ‘আমি তোমার সৎকর্ম।’ তার কবরকে প্রশস্ত করা হয় এবং জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেয়া হয়।” (তিরমিজি: ১০৭০)

২. কবরের আলো ও প্রশান্তি:

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তির কবর জান্নাতের বাগানগুলোর মধ্যে একটি বাগান হবে।” (সহিহ বুখারি: ১৩৭৯, সহিহ মুসলিম: ২৮৭০)

৩. ফেরেশতাদের সুসংবাদ:

মুমিনের মৃত্যু হলে ফেরেশতারা তার কাছে এসে বলেন: “তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? এবং তোমার নবী কে?” মুমিন সহজেই উত্তর দেয়। তখন তাকে বলা হয়, ‘ঘুমাও জান্নাতের আরামের ঘুম।’” (সহিহ মুসলিম: ২৮৭১)

৪. সৌরভ ও প্রশান্তি:

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মুমিনের আত্মা জান্নাতের সুগন্ধযুক্ত বাতাসে প্রবাহিত হয়। কবর থেকে জান্নাতের সুগন্ধি অনুভব করা যায়।” (মুসনাদে আহমদ: ১৮৩৭২)

মুমিনের কবর জীবনের বৈশিষ্ট্য:

১. প্রশস্ততা: কবরকে প্রশস্ত করা হয়, যাতে মুমিন স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে।

২. জান্নাতের দরজা: কবর থেকে জান্নাতের দৃশ্য দেখানো হয়।

৩. আলো ও সুগন্ধ: কবরকে আলোকিত করা হয় এবং জান্নাতের সুগন্ধ দ্বারা পূর্ণ হয়।

৪. ফেরেশতাদের সঙ্গ: মুমিন কবরেই ফেরেশতাদের থেকে শান্তি ও সুসংবাদ পায়।

৫. আরামের ঘুম: তাকে বলা হয়, ‘ঘুমাও জান্নাতের আরামের ঘুম।’

উপসংহার:

মুমিনদের কবর জীবন শান্তি ও আনন্দময়। কুরআন ও হাদিসে মুমিনদের জন্য কবরকে জান্নাতের বাগান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ঈমান ও সৎকর্মের ফল এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের প্রতিদান। মুমিনের কবর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দুনিয়ার জীবন কেবল একটি পরীক্ষা, আর কবর হলো বা জান্নাতের সুখের সূচনা।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *