কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كُلُّ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَمْ يُبْدَ بِبِسْمِ اللَّهِ فَهُوَ ابْتَرُو اقْطَعُ
অর্থ : “নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা আরম্ভ করা হয় না, সে কাজ বরকতশূন্য হয়ে যায়।” (অর্থাৎ অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ থাকে) –আবু দাউদ, নাসাঈ
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক উল্লেখযোগ্য কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ে নিতেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে সুন্নাতের অনুসরণার্থে প্রত্যেক উল্লেখযোগ্য কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা আরম্ভ করা চাই। যেমন : খানার শুরুতে, ঘরে প্রবেশ করার সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, শয়নকালে, জাগ্রত হয়ে, কিতাব অধ্যয়নে ও রান্না-বান্না এক কথায় প্রত্যেক উল্লেখযোগ্য কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার সুন্নাত চালু করা চাই ।
এভাবে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজ-কর্মের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার নিয়ম করে নিলে বিনা পরিশ্রমে এবং বিনা কষ্টে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমলনামায় অগণিত সওয়াব যোগ হতে থাকবে। এমনকি এই বিসমিল্লাহর বদৌলতে সাংসারিক কাজ-কর্মও ইবাদতে পরিণত হবে। একজন কাফেরও জাগতিক কাজ-কর্ম সম্পাদন করে আর একজন মুমিনও করে। এতোদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য এটাই যে, কাফের আল্লাহ তা’আলার ধ্যানশূন্য অবস্থায় কাজ করে আর মুমিন আল্লাহ তা’আলার কথা স্মরণ রেখে বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করে। যার ফলে তার আমল-কাজ ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়। এটা এমন সংক্ষিপ্ত আমল যে এতে না আছে কোনো সময় ব্যয়, না আছে তেমন মেহনত। অথচ উপকারিতা কেমন বড় পরশমণি তুল্য যে দুনিয়া দ্বীনে পরিণত হয়ে যায়।
বিসমিল্লাহ সম্পর্কিত কতিপয় আদব
১. হযরত হাসান রাযি. কে এক ব্যক্তি বিসমিল্লাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো এটাতো প্রত্যেক লেখার শিরোনাম। চিঠি লিখার মূল সুন্নাত তো হলো, প্ৰত্যেক চিঠির শুরুতেই বিসমিল্লাহ লিখবে। কিন্তু কুরআন, হাদীসের বাণী ও ইঙ্গিতের ভিত্তিতে হযরত ফুকাহায়ে কিরাম এই মূলনীতি লিখেছেন, যে স্থানে বিসমিল্লাহ কিংবা আল্লাহ তা’আলার নাম লিখা হবে যদি সেখানে সেই কাগজকে হেফাযত করার কোনো গুরুত্ব না থাকে বরং পড়েই সেটা ফেলে দেয়া হয় তাহলে এমন কাগজ এবং বস্তুতে বিসমিল্লাহ অথবা আল্লাহ তা’আলার নাম লেখা জায়েয নাই। এবং এসব ক্ষেত্রে সুন্নাত আদায়ের জন্য না লিখে শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পড়ে নিবে। -মাআরিফুল কুরআন, ১ম খণ্ড
২. অনেকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকে অথচ শরীয়াতে সংখ্যাকে কখনও শব্দের বদল হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। এগুলো ইয়াহুদীদের আবিষ্কার। এজন্য ইয়াহুদী, নাসারা ৭, ১৪ সংখ্যাকে গুরুত্ব দেয়। এগুলো তারা ‘লাকি সেভেন’ ও ‘লাকি ফরটিন’ বলে অভিহিত করে থাকে। অর্থাৎ শব্দ ও সংখ্যার মূল প্রচলনকারী হলো অমুসলিম আহলে কিতাব ।
৩. মুসলিম ভাইগণের নিকট আবেদন এই যে, যেখানে বিসমিল্লাহ লিখলে হেফাযত হবে না, যেমন আজকাল পোস্টার, লিফলেট, দোকানপাটের ক্যাশমেমোতে, দাওয়াত পত্রে, বিসমিল্লাহ লেখা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে সুন্নাত আদায়ের জন্য শুধু মুখে পড়ে নিবেন। কারণ এটা কুরআন শরীফের আয়াত। কাজেই এটার সম্মান ও হেফাযত জরুরী। যদি সংক্ষেপে লিখতে হয় তাহলে “বিসমিহী তা’আলা” লিখাও জায়েয আছে। এতে করে আল্লাহ তা’আলার নামের বরকত এবং রহমতসমূহ অর্জিত হবে। ইয়াহুদীদের আবিষ্কৃত ৭৮৬ লিখা কোনোভাবেই এর বদল হতে পারে না। যদিও এক্ষেত্রে বরকতের নিয়তেই লিখা হয় কিন্তু এর যথাযত হেফাযত না হওয়ার কারণে বেবরকতি ও গুনাহ’র কারণ হবে। -গুনাহে বেলজ্জত
তথ্যসূত্রঃ
কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ