কিয়ামত দিবসে মুমিনরা থাকবে আনন্দিত ও উৎফুল্ল
কিয়ামতের দিন মুমিনদের অবস্থা কাফেরদের বিপরীত হবে। যেহেতু মুমিনরা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর আনুগত্য করেছে, তাঁর আদেশ মান্য করেছে এবং নেক আমল করেছে, সেদিন তাদের জন্য থাকবে শান্তি, সম্মান এবং চিরস্থায়ী পুরস্কার। কুরআন ও হাদিসে মুমিনদের কিয়ামতের দিনের অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:
১. আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তা
মুমিনদের অন্তর কিয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও থাকবে শান্ত।
আল্লাহ বলেন: إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ. لَا يَسۡمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمۡ فِي مَا ٱشۡتَهَتۡ أَنفُسُهُمۡ خَٰلِدُونَ
“যাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে, তারা (জাহান্নাম থেকে) দূরে থাকবে। তারা তার আওয়াজও শুনবে না এবং তারা তাদের কাম্য জিনিসে চিরকাল থাকবে।” (সূরা আম্বিয়া: ১০১-১০২)
২. আনন্দ এবং সম্মান
মুমিনরা সেদিন আনন্দিত ও গর্বিত থাকবে, কারণ তারা জানবে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার।
আল্লাহ বলেন: وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ مُّسۡفِرَةٞ. ضَاحِكَةٞ مُّسۡتَبۡشِرَةٞ “সেদিন কিছু মুখ থাকবে উজ্জ্বল, হাস্যোজ্জ্বল এবং আনন্দিত।”(সূরা আবাসা: ৩৮-৩৯)
ব্যাখ্যা: মুমিনদের চেহারায় প্রতিফলিত হবে তাদের সুখ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি।
৩. নূরের মাধ্যমে পথপ্রদর্শন
মুমিনদের জন্য সেদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো থাকবে, যা তাদের পথ দেখাবে। আল্লাহ বলেন: يَوۡمَ تَرَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَسۡعَىٰ نُورُهُم بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَبِأَيۡمَٰنِهِم بُشۡرَىٰكُمُ ٱلۡيَوۡمَ جَنَّٰت تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
“যেদিন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের তুমি দেখতে পাবে, তাদের নূর তাদের সামনে ও ডান দিকে দৌড়াবে। বলা হবে: আজ তোমাদের সুসংবাদ হলো জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, যেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটাই মহান সাফল্য।”(সূরা হাদিদ: ১২)
৪. হিসাব সহজ হবে
মুমিনদের জন্য কিয়ামতের দিন হিসাব হবে সহজ এবং দ্রুত।
আল্লাহ বলেন: فَسَوۡفَ يُحَاسَبُ حِسَابٗا يَسِيرٗا. وَيَنقَلِبُ إِلَىٰٓ أَهۡلِه مَسۡرُورًا “তার হিসাব হবে সহজভাবে এবং সে আনন্দের সাথে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।”(সূরা ইনশিকাক: ৮-৯)
ব্যাখ্যা: যারা সৎকর্ম করেছে এবং ঈমানের উপর স্থির থেকেছে, তাদের জন্য কোনো কষ্টকর জবাবদিহিতা হবে না।
৫. আরশের ছায়া লাভ
হাদিসে এসেছে, কিছু বিশেষ মুমিন আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ করবে, যেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:”সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না।” (সহিহ বুখারি: ১৪২৩, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)
৬. পুরস্কার হিসেবে জান্নাত
মুমিনদের জন্য জান্নাত আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কার।
আল্লাহ বলেন: جَزَآؤُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ “তাদের পুরস্কার তাদের রবের নিকট থাকবে জান্নাতে, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।”(সূরা আল-বায়্যিনাহ: ৮)
৭. জান্নাতে তাদের অবস্থান
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুমিনদের জান্নাতে অবস্থান হবে চিরস্থায়ী এবং তারা যা চাইবে তা পাবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “জান্নাতে এমন নেয়ামত আছে যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, এবং কোনো মানুষের হৃদয় তা কল্পনাও করতে পারেনি।”(সহিহ বুখারি: ৩২৪৪, সহিহ মুসলিম: ২৮২৪)
উপসংহার
কিয়ামতের দিন মুমিনদের অবস্থা হবে সম্মানিত ও সুখময়। তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা, রহমত এবং জান্নাতের অনন্ত পুরস্কার নির্ধারিত। তাই মুমিনের কর্তব্য হলো ঈমান ধরে রাখা, নেক আমল করা এবং আল্লাহর আদেশ ও রাসূলের নির্দেশ মেনে চলা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুমিনদের দলে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং জান্নাতের যোগ্যতা অর্জনের তৌফিক দিন।
তথ্যসূত্র:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স