কথা বলার সুন্নাত, আদব ও নিয়ম কানুন
- কথা কম বলা উত্তম ।
- যা বলবে সত্য বলা ওয়াজিব, মিথ্যা বলা হারাম।
- সাধারণভাবে আস্তে কথা বলাই উত্তম। তবে বড় মজলিসের প্রয়োজনে প্রয়োজন অনুপাতে জোরে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে বলা ভাল নয়।
- নিজের চেয়ে অধিক বয়স এবং অধিক ইম সম্পন্ন লোকদেরকে কথা বলতে অগ্রাধিকার দেয়া আদব ।
- আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে মূর্খদের ভঙ্গিতে কথা না বলা উচিত ।
বিঃদ্রঃ সর্বমোট চার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা জায়েয এবং এক ক্ষেত্রে ওয়াজিব। যেসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা জায়েয তা হল- (১) যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে। (২) দুজন বিবদমান লোকের মধ্যে ঝগড়া, শত্রুতা ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য। (৩) স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য। (৪) নিজের প্রকৃত হক উদ্ধারের জন্য কিংবা নিজের অথবা অপরের বড় ধরনের ক্ষতি ঠেকানোর জন্যেও মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে। এ নীতির অধীনেই চোর ডাকাতের কাছে নিজের টাকা-পয়সা ও মালের কথা অস্বীকার করা যায়, অন্য ভাইয়ের গুপ্ত ভেদ কেউ জানতে চাইলে তা অস্বীকার করা যায়। আর যে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা ওয়াজিব তা হল- সত্য বললে খুব মারাৱক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে এবং মিথ্যা বলা দ্বারা সে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বোধ হলে সেরূপ ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই কোন ক্ষেত্রে সত্য বলা দ্বারা অন্যায়ভাবে নিজের বা অন্যের জীবন হানির সম্ভাবনা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব হলে তা করা ওয়াজিব।
- বানাওটি করে কথা না বলা ।
- কথার মধ্যে ছন্দ সৃষ্টির কসরৎ করা অন্যায় ।
- তাহকীক-তদন্ত ব্যতীত কথা বলা অন্যায়। যে কোন কথা শুনেই তাহ্কীক-তদন্ত ব্যতীত তা বর্ণনা করা মিথ্যার শামিল। তবে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বা নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে কিছু জানলে তা তাহকীক ছাড়াই বলা যায় ।ঝগড়া এবং তর্ক সৃষ্টিকারী কথা বলা অন্যায় ।
- মিথ্যা কছম না খাওয়া উচিত। মিথ্যা কছম করা কবীরা গোনাহ ।
- সত্য হলেও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর কছম করা নিষেধ। যেমন পিতা-মাতার কছম, কারও জীবনের কছম, কা’বার কছম ইত্যাদি ।
- গীবত করা নিষেধ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার দেখুন ৬০৬ পৃষ্ঠা । * চোগলখুরী করা নিষেধ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৬০৭ পৃষ্ঠা ।
- নিজের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন খবর বা প্রতিশ্রুতিমূলক কথা বললে “ইনশাআল্লাহ” বলবে।
- বড় লোদেরকে সম্মানজনক সম্বোধন পূর্বক কথা বলা আদব ।
- বড়দের আদব রক্ষা করে কথা বলা আদব ।
- কথার ভাষা হিসেবে আরবী ভাষাকে পছন্দ করবে।
- গালি গালাজ করা হারাম ।
- অশ্লীল কথা বলা নিষেধ। এটা গোনাহে কবীরা।
- আল্লাহ্ কোন সৃষ্টিকে লা’নত করা পাপ।
- কাউকে লা’নত করে ফেললে তার জন্য কল্যাণের দু’আ সম্বলিত নিম্নোক্ত দুআ পড়বে– اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَهُ قُرْبَةً وَرَحْمَةٌ – (شرعة الاسلام) অর্থঃ হে আল্লাহ, এটাকে তুমি তার জন্য নৈকট্য ও রহমতের ওছীলা বানাও । * কারও উপর অপবাদ না লাগানো । এটা মহাপাপ ।
- কাউকে কাফের, ফাসেক, মালউন, আল্লাহ্ দুশমন, বেঈমান ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা নিষেধ ।
- নিজের ভাঙ্গা ভাঙ্গা অভিজ্ঞতার কথা বলবে না, এতে শ্রোতাদের মনে বিরক্তির উদ্রেক হয় ।
- আত্মপ্রশংসা না করা। এটা গোনাহ।
- কোন ফাসেক বা পাপীর প্রশংসা না করা । এটা গোনাহ ।
- যার মধ্যে অহংকার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা আছে এরূপ ব্যক্তির সম্মুখে তার প্রশংসা না করা।
- অতিরিক্ত ঠাট্টা মজাক না করা। এতে প্রভাব, লজ্জা-শরম ও পরহেজগারী হ্রাস পায় ।
- যে শব্দ বা যে ভাষা বাতিলপন্থীরা খারাপ উদ্দেশ্যে এবং খারাপ অর্থে ব্যবহার করে থাকে সেটা পরিহার করা কর্তব্য।
- যে শব্দটা ভাল-মন্দ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এরূপ শব্দকে ভাল অর্থেও ব্যবহার না করা উচিত ।
- চিন্তা করে কথা বলবে ।
- কথা এত সংক্ষেপ করবে না যাতে বক্তব্য অস্পষ্ট থাকে, আবার এত দীর্ঘ করবে না যাতে বিরক্তি সৃষ্টি হয় ।
- চাটুকারিতামূলক কথা বলবে না ।
- কোন প্রয়োজনের কথা কারও নিকট পূর্বে বলে থাকলে আবার সেটা পুনরাবৃত্তি করার ক্ষেত্রে পূর্ণ কথা বলবে। শুধু ইংগিত করাই যথেষ্ট নয় । কারণ হতে পারে তিনি পূর্বের কথা ভুলে গিয়ে থাকবেন এবং এখন পূর্ণ কথা না হওয়ায় বিভ্রান্তির শিকার হবেন ।
- কারও বক্তব্য শেষ হওয়ার পূর্বেই তার কথা কেটে মাঝখানে কথা না বলা আদব। দু’জনে কথা বলতে থাকলে তাদের সম্মতি ব্যতীত তাদের কথায় ফোঁড়ন কাটবে না ।
- শ্রোতাদের ধারণ ক্ষমতা লক্ষ্য রেখে কথা বলা; যে কথা তাদের বুঝে আসার মত নয়- এরূপ কথা না বলা ।
- নিজের কথায় ভুল হলে সেটা স্বীকার করে নেয়া, অপব্যাখ্যায় না যাওয়া।
তথ্য সূত্রঃ
কিতাবঃ আহকামে যিন্দেগী
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা – ১১০০। মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬