ইবাদত

মাতা-পিতার খেদমত করলে গুনাহ মাফ হয়

মাতা-পিতার খেদমত করা ফরয। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে এটা ফরয করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল কুরআন থেকে বেশ কয়েকটি আয়াত ও বহুসংখ্যক হাদীসের উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল স.- এর এ নির্দেশ মানার মধ্যে অশেষ ফায়দা বিদ্যমান। এসব ফায়দার মধ্যে একটি হচ্ছে এর দ্বারা আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে থাকেন।

এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস নীচে উদ্ধৃত হলো : عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ رَجُلٌ فَقَالَ إِنِّي أَذْنَبْتُ ذَنْبًا عَظِيمًا فَهَلْ مِنْ تَوْبَةٍ ؟ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ اُمَ وَفِي رِوَايَةٍ هَلْ لَكَ وَالِدَانِ ؟ قَالَ لَا، قَالَ فَهَلْ مِنْ خَالَةٍ ؟ قَالَ نَعَمْ، قَالَ فَبِرُهَا

“হযরত ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ স.-এর নিকট এসে বললো, আমি একটি বড় গুনাহ করে ফেলেছি, এর কি কোনো তাওবা আছে ? রাসূলুল্লাহ স. বললেন, তোমার কি মা আছেন ? অন্য এক বর্ণনায়, তোমার কি মাতা-পিতা আছেন ? লোকটি বললো : না। রাসূলুল্লাহ স. বললেন, তোমার কি কোনো খালা আছে? লোকটি বললো, জি হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, তাঁর সাথে ভাল ব্যবহার কর (তার খেদমত কর)।-তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, হাকিম।

أَخْرَجَ النَّسَائِي مِنْ طَرِيقِ الزُّهْرِي عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ قِرَاءَةً فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقِيْلَ حَارِثَةُ بْنُ النُّعْمَانِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَذَالِكُمُ الْبِرُّ وَكَانَ بِرًّا بِأُمِّهِ –

“ইমাম নাসাঈ যুহরীর বরাতে এবং যুহরী উরওয়াহ হতে এবং উরওয়াহ হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেছেন যে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত শুনলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, কুরআন তেলাওয়াতকারী কে ? বলা হলো, হারিসা ইবনে নুমান। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, সৎলোক এ রকমই হয়, আর তিনি (হারিসা) তাঁর মাতার সেবক ছিলেন।”

হাদীসটি ইমাম আহমদ স্বীয় মুসনাদে মাইমারের বরাতে যুহরী হতে এবং যুহরী হযরত উমরা হতে তিন জায়গায় বর্ণনা করেছেন। এবং তৃতীয় বর্ণনাতে বলা হয়েছে, হারিসা তাঁর মাতার খুব বেশী খেদমত করেছেন।

عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ رَغمَ أنْفُهُ ثُمَّ رَغمَ أنْفُهُ، ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الكِبَرِ أَوْ أحَدَهُمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ –

“হযরত আবু হুরাইরা, রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল স. বলেছেন, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। আবারও তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। আবারও তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক (অর্থাৎ সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হোক) জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে ব্যক্তি ? রাসূলুল্লাহ স. বললেন, যে তার মাতা-পিতাকে অথবা তাঁদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে যেতে পারল না।”- আহমদ ও মুসলিম

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ صَعِدَ النَّبِيُّ ﷺ الْمِنْبَرَ فَقَالَ أَمِينَ أمِينَ، أَمِينَ قَالَ أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ مَنْ أدْرَكَ أَحَدَ أَبَوَيْهِ فَمَاتَ فَدَخَلَ النَّارَ فَابْعَدَهُ اللهُ، قُلْ أَمِينَ فَقُلْتُ أمِينَ – قَالَ يَا مُحَمَّدُ مَنْ أَدْرَكَ شَهَرَ رَمَضَانَ فَمَاتَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ فَأُدْخِلَ النَّارَ فَابْعَدَهُ اللهُ، قُلْ أَمِينَ، قُلْتُ أمِينَ، قَالَ وَمَنْ ذِكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ فَمَات فَدَخَلَ النَّار فَابْعَدَهُ اللهُ، قُلْ أَمِيْنَ فَقُلْتُ أَمِينَ

“হযরত জাবির বিন সামুরাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ মিম্বরে উঠার পর বললেন. আমীন, আমীন, আমীন! রাসূলুল্লাহ স.-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন : আমার নিকট জিবরাঈল এসে বললেন! হে মুহাম্মদ, যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতার কোনো একজনকে জীবিত অবস্থায় পেল, তার পর মরে গিয়ে জাহান্নামে গেল, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিন। বলুন, আমীন, তখন আমি বললাম, আমীন ! তিনি আবার বললেন : হে মুহাম্মদ! যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল আর তার গুনাহ মাফ করা হলো না এবং তাকে জাহান্নামে দেয়া হলো। আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিন। বলুন আমীন! তখন আমি বললাম, আমীন! তিনি আবার বললেন, যার সম্মুখে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো আর সে আপনার ওপর দরুদ পড়ল না এবং মরে গিয়ে জাহান্নামে গেল, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। বলুন আমীন ! আমি বললাম, আমীন !

خَالِدِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ رِضا الرَّبِّ فِي رِضا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ –

“হারিসের পুত্র খালিদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে শো’বা হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি আতা’র পুত্র ইয়া’লা হতে এবং ইয়ালা তার পিতা হতে ও তার পিতা আবদুল্লাহ আবনে আমর ইবনু আস রা. হতে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতার নারাজীতেই আল্লাহর নারাজী।”-তিরমিযি

বই : মাতা-পিতা ও সন্তানের হক

অধ্যাপক মুহাম্মদ মতিউর রহমান

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *