মাযহাব মানার প্রয়োজনীয়তা
মাওলানা আবদুল মালেক দা.বা.
হাদীস থাকতে ফিকহের প্রয়োজন হয় কেন?
প্রশ্নটির উত্তর জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে ‘ফিকহ’ কাকে বলে। ফিকহ বলা হয়- ১. কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানাবলীর সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপকে। কেননা ফিকহের মধ্যে তাহারাত (পবিত্রতা) থেকে ফারায়েজ (মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির সাথে সংশ্লিষ্ট মাসায়িল) পর্যন্ত জীবনের সকল ক্ষেত্রের মাসায়িল বিভিন্ন অধ্যায় ও পরিচ্ছেদের অধীনে এক স্থানে সন্নিবেশিত করে দেওয়া হয়েছে। ২. এবং ইসলামী ইবাদতসমূহের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির সুবিন্যস্ত রূপকে যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে শিখিয়েছিলেন। তাঁরা তাবেয়ীগণকে এবং তাঁরা তাদের পরবর্তী লোকদেরকে শিখিয়েছেন। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, আমরা প্রতিদিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি, তার তাকবীরে তাহরীমা থেকে সালাম পর্যন্ত মাসআলা সমূহ যদি আপনি হাদীসের কিতাব থেকে সংগ্রহ করতে চান তাহলে হাদীসের এক দুটি কিতাবু নয়, দশ বিশ কিতাবেও তা পাবেন না। নামাযের বিবরণ সংক্রান্ত হাদীস যা একশর অধিক কিতাবে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে। তা যদি আপনি এক জায়গায় একত্রিতও করেন তারপরও এ সংক্রান্ত মাসায়িল জানার জন্য আপনাকে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।
ক. নামাযের কাজ সমূহের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরী করা। কেননা কোন হাদীসেই স্পষ্টভাবে পূর্ণাঙ্গ খসড়া উল্লেখ করা হয়নি।
খ. জমাকৃত হাদীস সমূহের মধ্যে সহীহ-যয়ীফ নির্ণয় করা।
গ. এই হাদীস সমূহের মধ্যে যেসব হাদীসের মর্ম শুধু আরবী ভাষার সাহায্যে নির্ধারণ করা যায় না তার সঠিক মর্ম নির্ধারণ করা। কেননা অনেক হাদীস এমন আছে যেখানে ভাষার বিচারে একাধিক অর্থের সম্ভাবনা থাকে।
ঘ. কিছু হাদীস এমনও আছে, যার বিধান মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে কিন্তু এর দলীল সেই হাদীসে উল্লেখ নেই। শরীয়তের অন্যান্য দলীলের আলোকে এ ধরনের হাদীস সমূহ সনাক্ত করাও জরুরী।
ঙ. অনেক হাদীসে সাধারণ পাঠকবৃন্দু দেখবেন যে, কোন হাদীসে রাফয়ে ইয়াদাইন করার কথা আছে, কোন হাদীসে না করার কথা। কোথাও আমীন জোরে বলার কথা এসেছে আবার কোথাও আস্তে বলার কথা। কোন হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইমামের পিছনে কুরআন (সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা পড়তে হয়) আবার কোন হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইমামের পিছনে কুরআন পড়তে হয় না। এ ধরনের অনেক বিষয় আছে। এখন এসব বিষয়ে কী কর্মপন্থা অবলম্বন করা হবে এবং কোন হাদীস অনুযায়ী আমল করা হবে এর ফয়সালা শুধু হাদীসের অনুবাদ পড়ে করা সম্ভব নয়।
চ. উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে নামাযের মধ্যকার যেসব কাজের কথা জানা গেল তার মধ্যে কোন কাজটি ফরয, কোনটি ওয়াজিব, কোনটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আর কোনটি সুন্নাতে যায়েদাহ-মুস্তাহাব; অনুরূপ যেসব কাজ নামাযে নিষিদ্ধ তার মধ্যে কোন কাজটি দ্বারা নামায একদম নষ্ট হয়ে যায়, কোন কাজটি দ্বারী নামায নষ্ট না হলেও নামাযের মধ্যে তা মাকরূহ-মাকরূহে তাহরীমী বা তানযীহী কিংবা অনুত্তম ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণও হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই।
এবার আপনি চিন্তা করে দেখতে পারেন, ফুকাহায়ে কেরাম কত বড় কাজ করেছেন এবং সাধারণ মানুষের কত বড় উপকার করে গেছেন। পাশাপাশি এটাও বোঝা যাচ্ছে যে, ফিকহ কাকে বলে।
ফুকাহায়ে কেরাম নামায সংক্রান্ত হাদীসমূহ একত্রিত করে তার আলোকে নামাযের ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ রূপটি সংকলন করেছেন এবং একজন সাধারণ মানুষ শুধু নয় একজন আলেমও হাদীসের অসংখ্য কিতাব থেকে এ সংক্রান্ত হাদীসমূহ একত্রিত করার পরও নামাযের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা এবং এর মাসায়িল আহরণ করতে উপরোক্ত যে জটিল সমস্যাগুলির সম্মুখীন হতো, শরীয়তের দলীল প্রমাণের আলোকে তার সমাধান দিয়ে গেছেন। একইভাবে যাকাতের ব্যাপারে চিন্তা করুন, হজের ব্যাপারে চিন্তা করুন। প্রত্যেকটি অধ্যায়েই এই সব শাস্ত্রীয় সমস্যা রয়েছে এবং উম্মাহর ফকীহগণ এই সব সমস্যার সাগর পাড়ি দিয়ে কুরআনী বিধি-বিধানের একটি পূর্নাঙ্গ বাস্তব রূপ উপযুক্ত বিন্যাস ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সাথে পেশ করেছেন। তাই বলা যায়, ফিকহ হলো শরীয়তের হুকুম-আহকামের সুবিন্যস্ত ও একস্থানে সংকলিত এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ সমষ্টির নাম।
৩. অনুরূপ ফিকহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, ঐ সব মাসআলার সুবিন্যস্ত সমষ্টি যা কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান নেই। শরীয়তের নীতিমালা থেকে বা কিয়াসে শরয়ীর মাধ্যমে শরীয়তের মৌলিক উৎসসমূহ থেকে ঐ সব মাসআলাকেও ফিকহের মধ্যে উপযুক্ত বিন্যাসের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ফিকহের পরিচয় জানার পর এ প্রশ্নটির উত্তরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাদীস থাকা অবস্থায় ফিকহের প্রয়োজন কেন? কেননা- যখন ফিকহ হাদীস থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়; বরং হাদীস শরীফেরই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং হাদীস শরীফের হুকুম আহকামেরই সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপ, তাই খোদ হাদীসের জন্যই এবং সহজভাবে সঠিক পন্থায় হাদীস শরীফের অনুসরণের জন্যই ফিকহের প্রয়োজন। এজন্যেই খোদ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ফিকহের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব এবং ফুকাহায়ে কেরামের মান ও মর্যাদা সম্পর্কে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আর এজন্যেই ফিকহ বিমুখ ব্যক্তিরা কখনো হাদীসের অনুসারী হতে পারে না। হাদীসের সঠিক অনুসারী তারাই যারা ফকীহগণের নির্দেশনা ক্রমে এবং ফিকহের আলোকে হাদীস শরীফের অনুসরণ করেন। হাদীস অনুসরণের এই পদ্ধতিটিই খাইরুল কুরূন (সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ) থেকে চলে আসছে। এবং ইসলামের সকল যুগেই মুসলিম জাতি এই পদ্ধতিতেই হাদীস শরীফের অনুসরণ করে ধন্য হয়েছেন। তাই এটিই হলো হাদীস অনুসরণের সুন্নাহ-নির্দেশিত পন্থা। আজকাল হাদীস অনুসরণের নামে ফিকহে ইসলামী এবং ফুকাহায়ে কেরামের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে এটা কখনো হাদীস অনুসরণ নয়; এটা সুন্নাতে মুতাওয়ারাছার বিরুদ্ধাচরণ। অন্য ভাষায় বললে, এটা হলো, হাদীস অনুসরণের একটি বিদআতী বা নবআবিষ্কৃত পন্থা।
‘মাযহাব’ কী এবং তাকলীদ’ কাকে বলে?
আপনি যদি ফিকহের পরিচয় পেয়ে থাকেন তবে এবার আরো একটি বিষয় লক্ষ করুন। আমরা ইতিমধ্যেই শুনেছি যে কুরআন-সুন্নাহর হুকুম-আহকামের সুবিন্যস্ত সংকলনই হচ্ছে ফিকহ্। এই ফিকহের একাধিক সংকলন বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে বর্তমান কাল পর্যন্ত শুধু চারটি সংকলনই স্থায়িত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সেই সংকলনগুলো হচ্ছে- ১. ফিকহে হানাফী- যার সংকলনের ভিত্তি স্থাপনের কাজটি ইমাম আযম আবু হানীফা (রহ.) (জন্ম ৮০ হিজরী -মৃত্যু ১৫০ হিজরী) এর হাতে সুসম্পন্ন হয়েছে।
২. ফিকহে মালেকী- যার সংকলনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে ইমাম মালেক (রহ.) (জন্ম ৯৪ হিজরী মৃত্যু ১৭৯ হিজরী) এর হাতে।
৩. ফিকহে শাফেয়ী- ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইদরীস শাফেয়ী (রহ.) (জন্ম ১৫০ হিজরী-মৃত্যু ২০৪ হিজরী) যার ভিত্তি রেখেছেন।
৪. ফিকহে হাম্বলী- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) (জন্ম ১৬৪ হিজরী মুত্যু ২৪১ হিজরী) এর ভিত্তি রেখেছেন।
সাধারণ পরিভাষায় ফিকহের প্রত্যেকটি সংকলন মাযহাব নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য এখানে মাযহাব শব্দটির অর্থ ফিকহের মাযহাব’ তথা ফিকহের নির্দিষ্ট একটি সংকলন। এখানে মাযহাব অর্থ দ্বীন বা আকাইদ বিষয়ে মতবিরোধকারী কোন ফিরকা নয়। কেননা ফিকহের এই মাযহাবগুলোর প্রতিটিই দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের অধীন এবং শরীয়ত অনুযায়ী চলারই একাধিক পথ। এই মাযহাবের ইমামগণ সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদার উপরই ছিলেন এবং সব ধরনের ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে মুক্ত ছিলেন। তাদের অনুসারীরা সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মত ও পথেরই অনুগামী। তবে বিভিন্ন সময় এমন হয়েছে যে, আক্বীদাগতভাবে বিভ্রান্ত বিদআতী লোকেরা ফিকহের ক্ষেত্রে এসে উপরোক্ত চার মাযহাবের কোন একটির অনুসারী হয়েছে বলাবাহুল্য, তাদের বিদআতী আক্বীদা বিশ্বাসের কোন দায়-দায়িত্ব তাদের মাযহাবের ইমাম, তাঁদের সংকলিত ফিকহ্, এবং তাঁদের অনুসারীদের উপর বর্তায় না।
তাকলীদের অর্থ
এই ফিকহী মায্হাবের মাধ্যমে কুরআন-হাদীসের আহকাম জানা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে সাধারণ পরিভাষায় তাকলীদ বলে। অর্থাৎ দ্বীন ও শরীয়তের ক্ষেত্রে ফকীহগণের শরণাপন্ন হওয়ার যে আদেশ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে করেছেন, এবং নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে করেছেন তাদেরই সংকলিত ফিকহ থেকে কুরআন-হাদীসের হুকুম জেনে সে অনুযায়ী আমল করা। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এই পদ্ধতিই সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসৃত।
তাকলিদ-বিরোধীরা কী বলতে চান?
মুসলিম উম্মাহর এই সর্বসম্মত কর্মধারার বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম দলবদ্ধ আওয়াজ ওঠে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাড়ে বারশো বছর পরে। আর তাও এই উপমহাদেশে এবং ইংরেজদের শাসনামলে, যাদের রাজ্য-শাসনের পলিসিই ছিল ডিভাইড এন্ড রুল ‘বিভেদ সৃষ্টি করা এবং রাজ্যশাসন করা। এই বিরোধী আওয়াজটার হাকীকত বড়ই অস্পষ্ট অথবা সীমাহীন স্ববিরোধিতার একটি সমষ্টি। আমি আমাদের দেশের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের (যারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস নামে পরিচয় দেন) অনেক পুস্তিকা ও লিপলেট পড়েছি, তাদের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেছি, কারো কারো সাথে আলোচনাও হয়েছে।কিন্তু এসব কিছুর পরও তাদের বিভ্রান্তি বা অসাধুতাই আমার সামনে পরিস্ফুট হয়েছে।
এরা তাকলীদ করা বা মাযহাব মানাকে না-জায়েজ, হারাম এমনকি শিরক পর্যন্ত বলে থাকে। তাদের কেউ কেউ বলে, সাধারণ মানুষের জন্য তাকলীদ জায়েয, আলেমদের জন্য না-জায়েয। কেউ বলে, জায়েয তবে নির্দিষ্ট কোন ইমামের তাকলীদ না-জায়েয। আবার কেউ মাযহাব মানা ফরয নয় এটুকু বলে চুপ থাকে। ফরয না হলে কা? এ কথাটা আর বলে না।
এখানে আমি এইসব ভ্রান্ত কথাগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে চাই না বা তার প্রয়োজনও নেই। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, তাকলীদ বিরোধী লোকদের বিভিন্ন বই-পুস্তক অধ্যয়ন করে এবং তাদের বেশ কিছু আলোচনা শুনে এ বিষয়টিই জানা গেছে যে, তারা ১. তাকলীদে’র পরিচয় দেয় ‘অন্ধ অনুসরণ’ করা।
২. তাদের মতে, কারো দলীলবিহীন কথাতে শর্তহীন ভাবে মেনে নেওয়ার নাম তাকলীদ। চাই কথাটি কুরআন হাদীসের অনুকুলে হোক বা কুরআন হাদীসের পরিপন্থি।
৩. তাদের বক্তব্য হলো, মুকাল্লিদগণ তাদের ইমামদেরকে মাসুম ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে মনে করে। অর্থাৎ তারা যেন ইমামগণকে রাসুলের স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে।
এ ধরনের আরো কিছু কথা তারা বলে। যার সাথে তাকলীদকারী বা মাযহাব অনুসরণকারীদের কোনই সম্পর্ক নেই। আমরা নিজেরাও মুকাল্লিদ, ফিকহে হানাফীর তাকলীদ করি। ঐসব বন্ধুরা তাকলীদের যে অর্থ করেছেন এবং মুকাল্লিদদের অবস্থার যে চিত্র অঙ্কন করেছেন এর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা নিজেদের রাসূল সা. এর একজন উম্মত এবং তাঁর শরীয়তের খাদেম মনে করি। আর ফিকহের অনুসরণ আমরা এ জন্যই করি যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সা. শরীয়তের হুকুম আহকাম জানার জন্য ফকীহগণের শরনাপন্ন হওয়ার আদেশ করেছেন।
মোট কথা, মাযহাব এবং ফিকহের হাকীকত সম্পর্কে এই নিবন্ধের শুরুর দিকেই আলোচনা করা হয়েছে। তাকলীদ-বিরোধীগণ যদি এই অর্থেই তাকলীদ বা ফিকহের বিরোধীতা করে থাকেন। তাহলে বাস্তবিকই মুকাল্লিদদের সাথে তাদের বিরোধীতা হতে পারে। কিন্তু তাকলীদ বা মাযহাবের এমন অর্থ বয়ান করা, যে অর্থে তাকলীদ ও মাযহাব ভুল প্রমাণিত হয়। এরপর অন্যায়ভাবে তা মুকাল্লিদদের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া, এসব কাজের কোনো বৈধতা হতে পারে কি? না কি তাদের উদ্দেশ্যই হলো মুসলিম জাতির মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য ছড়ানো! এটা অবশ্য এই বাস্তবতা বিরোধী বয়ান-বক্তৃতায় একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। আমরা সেই সব বন্ধুদের খেদমতে আরয করতে চাই; আপনারা তাকলীদ এবং ফিকহের পরিচয় নিয়ে একবার ভাবুন যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যে নিয়ম অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ অংশের আমল চলে আসছে। এরপর বলুন, এ ধরনের তাকলীদ বা এই অর্থে মাযহাব মানার ব্যাপারে আপনাদের কোন আপত্তি আছে কি না? যদি থাকে তাহলে কেন? এটাই হবে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত পন্থা। শুধু শুধু নিজেদের পক্ষ থেকে একটা মতবাদ তৈরী করে তা কারো কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে এরপর মনের সুখে তা খন্ডন কাজে নিমগ্ন হওয়া তো কোন ন্যায় সঙ্গত পন্থা হতে পারে না। আর না এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া কোন হাদীস-অনুসরণকারী মুসলমানের পক্ষে শোভা পায়। বন্ধুদের খেদমতে শুধু একটি প্রশ্নই করতে চাই, যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা উম্মাহর ফকীহগণের সংকলিত ফিকহের শরণাপন্ন হয়েছি আপনারা যখন ফিকহের প্রয়োজন বোধ করেন না, তো এই সব সমস্যার সমাধান আপনারা কীভাবে করেন? শুধুই নিজের মত ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে? না পরবর্তী যুগের কোন আলেমের বুঝের উপর নির্ভর করে। না তৃতীয় কোন পথ অবলম্বন করে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবুন এরপর ইনসাফের সাথে বলুন, ফিকহের অনুসারীরাই সরল-সঠিক পথের উপর আছেন না আপনারা?
আরো একটি বিষয়েও ভাবুন, মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ব্যক্তি এবং আপনাদের মধ্যে মতপার্থক্যটি হচ্ছে হাদীস-অনুসরণের পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে। আপনারা এ ব্যাপারে একটি নব-আবিষ্কৃত কর্মপন্থা অবলম্বন করতে চান আর মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ মানুষ থাকতে চান সুন্নাহ-নির্দেশিত পন্থার উপরই। হাদীস অনুসরণের মূল কথাটিতে তো কারো কোন দ্বিমত নেই। গণহারে এই গোটা মুসলিম জাতির পৃথিবীতে আপনারা নিজেরেদকে আহলে হাদীস নামে পরিচয় দেন আর তাদেরকে আখ্যা দেন হাদীস অমান্যকারী রূপে! হাদীস অনুসরণের পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে যে মতবিরোধ, আপনারা কোন যুক্তিতে তাকে খোদ হাদীস অনুসরণের মতবিরোধী সাব্যস্ত করেন? আল্লাহর ওয়াস্তে একটু ভাবুন এবং কোন হানাফী মাযহাবের অনুসারীকে তাওবা করিয়ে গাইরে মুকাল্লিদ বানানোর এই না-জায়েয বা অন্তত অর্থহীন কর্মকান্ড পরিত্যাগ করে অমুসলিম ও মুশরিকদের মুসলমান বানানোর চেষ্টা করুন। কিন্তু যদি আপনারাও আপনাদের কোনো কোনো বেইলম অনুসারীর মত হানাফী থেকে গাইরে মুকাল্লিদ হওয়াকে কাফের থেকে মুসলমান হওয়ার সমর্থক মনে করেন। তাহলে তো এসব কথা আপনাদেরকে বলাও একটা অর্থহীন পরিশ্রমই হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন এবং ইসলামের এই দুর্দিনে বেহুদা বিভক্ত উম্মতকে একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।
তথসূত্র:
মাওলানা আবদুল মালেক হাফিজাহুল্লাহু