ইবাদত

মোহর ও অলংকারে যাকাত সম্পর্কিত ১১ টি মাসআলা।

০১. মাসআলা : হানাফীদের নিকট পরিপূর্ণভাবে মালিক হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পদ নিয়ন্ত্রনে থাকা। কোন ব্যক্তি এমন কোন মালের মালিক হলো, যা এখনো তার নিয়ন্ত্রনে আসেনি; উক্ত মালের যাকাত ওয়াজিব হবে না। যেমন : মহিলাদের মোহর হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব নয়। এমনিভাবে যে মাল কারো নিয়ন্ত্রনে আছে, অথচ সে তার মালিক নয়, তার উপরও যাকাত ওয়াজিব হয় না। যেমন : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রনে যদিও ঋণের টাকা থাকে, কিন্তু সে তার মালিক নয়; বরং অন্য কেউ (ঋণদাতা) তার মালিক । (কিতাবুল ফিকহ : ১/৯৬১) ০২. মাসআলা : এক মহিলার দেনমোহর ধরা হয়েছে তিন হাজার টাকা। স্বামী অন্ত্যন্ত দরিদ্র হওয়ার কারনে তা আদায় করতে পারছে না। এ জাতীয় মহিলাকে যাকাতের অর্থ দেয়া সহীহ আছে। তদ্রুপ স্বামী ধনী হওয়া সত্ত্বেও মোহর আদায় না করলে অথবা স্ত্রী নিজের মোহর মাফ করে দিলে সে ক্ষেত্রেও উক্ত মহিলাকে যাকাত দেয়া ঠিক হবে। তবে যে মহিলা স্বামীর নিকট মোহর চাওয়া মাত্রই স্বামী কর্তৃক দেয়ার আশা থাকে, উক্ত মহিলাকে যাকাতের অর্থ দেয়া ঠিক নয়। (ইমদাদে মাসায়েলে যাকাত :98)

০৩. মাসআলা : মোহর সাধারণত মুআজ্জল তথা বিলম্বে আদায় যোগ্য হয়ে থাকে, এটা যাকাত ওয়াজিবের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। অর্থাৎ স্ত্রীকে বাকিতে আদায়যোগ্য মোহর মূল সম্পদ থেকে কর্তন করা হবে না; বরং পূর্ণ সম্পদেরই যাকাত আদায় করতে হবে। উদাহরণস্বরুপ : কারো কাছে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা মজুদ আছে। তম্মধ্যে স্ত্রীর ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা বাকিতে আদায় যোগ্য মোহর তার জিম্মায় রয়েছে। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি পূর্ণ দশ হাজার টাকার যাকাত ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা আদায় করবে। ০৪.মাসআলা : স্বামীর উপর স্ত্রীর মোহর ওয়াজিব হয়ে আছে। যদি তা নগদ আদায়যোগ্য হয় (অর্থাৎ স্ত্রী চাহিবা মাত্র স্বামী দিতে বাধ্য থাকবে) কিংবা মোহরে মু’আজ্জল তথা বিলম্বে আদায়যোগ্য মোহর হয়, তবে স্বামী তা পরিশোধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে উক্ত ঋণ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে । উক্ত মোহরের ঋণ বাদে তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়। পক্ষান্তরে স্বামী যদি তা আদায়ের চেষ্টায় না থাকে কিংবা এ মর্মে নিশ্চিত থাকে যে, তা আদায় করবে না তবে উক্ত ঋণ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী হবে না। ০৫.মাসআলা : কোনো মহিলা বিয়ের পর একত্রে সম্পূর্ণ মোহর পেয়ে গেল । তার নিয়ন্ত্রনে উক্ত মোহরের টাকা পূর্ণ এক বছর থাকার পর স্বামী সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দিয়ে অর্ধেক মোহর ফেরত নিয়ে নিল।সেক্ষেত্রে মোহর যদি স্বর্ণ রূপার আকারে হয় তবে উক্ত মহিলাকে পূর্ণ মোহরের যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি নগদ তথা স্বর্ণ রূপা না হয়, তাহলে পূর্ণ মোহরের যাকাত তার উপর ওয়াজিব না; বরং অর্ধেক মোহরের যাকাত আদায় করতে হবে। (ইলমুল ফিক্‌হ : ৪/৩৩) যাকাতে স্বামীর অনুমতি জরুরী নয় ০৬. মাসআলা : অলংকার যদি স্বামীর দেয়া হয় এবং স্ত্রীকে তার মালিক বানিয়ে না দেয়া হয়, তবে এতে স্ত্রীর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না, বিধায় স্ত্রীর উপর তার যাকাত ফরজ হবে না; বরং স্বামীকেই যাকাত দিতে হবে। যাকাত আদায় না করলে স্বামী গুনাহগার হবে। স্ত্রী গুনাহগার হবে না। উক্ত অলংকার স্ত্রীর পিতা- মাতার পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ হলে স্ত্রী তার মালিক।

সুতরাং তার কিছু অংশ বিক্রি করে যাকাত আদায় করে দিবে। এতে স্বামীর অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৫০২)

স্ত্রীর অলংকারের যাকাত স্বামীর উপর জরুরী নয়। ০৭.মাসআলা : স্ত্রীর মালিকানায় নেসাব পরিমাণ অলংকার থাকলে যাকাত তার উপরই ফরজ। তবে স্ত্রীর অনুরোধে স্বামী আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৪৫)

মেয়ের জন্য অলংকার বানিয়ে রাখলে তার যাকাত ০৮.মাসআলা : মেয়েদের বিয়েতে দেয়ার উদ্দেশ্যে তৈরী করে রাখা অলংকার এর মালিক যদি মেয়েকে বানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মেয়ে বালেগা হওয়া পর্যন্ত কারো উপর যাকাত ফরজ হবে না। বালেগা হওয়ার পর মেয়ের উপর যাকাত ফরজ হবে। আর মেয়েকে মালিক না বানালে যার মালিকানায় থাকবে, তার উপরই যাকাত ফরজ হবে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১১/১২৬)

মনি- মুক্তা মিশ্রিত অলংকারের যাকাত। ০৯.মাসআলা : স্বর্ণ- রূপার যে সব অলংকারে মনি- মুক্তা খচিত থাকে, তাতে স্বর্ণ- রূপার পরিমাণের উপর যাকাত ফরজ হবে। অর্থাৎ মনি- মুক্তার মূল্যমানে যাকাত আসে না; বরং স্বর্ণ- রূপার পরিমাণের উপরই যাকাত আসে। (কেফায়াতুল মুফতী : ৪/২২৯)

খাদ মিশ্রিত স্বর্ণের যাকাত ১০.মাসআলা : যে সব অলংকারে বেশিরভাগ স্বর্ণ হয় অর্থাৎ অর্ধেকের বেশী পরিমাণ স্বর্ণ হলে তা স্বর্ণের বিধানভুক্ত হবে এবং খাঁটি স্বর্ণের ন্যায় তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/১১৫)

রৌপ্যের তার মিশ্রিত ও কারুকার্যখচিত শাড়ীর যাকাত। ১১. মাসআলা : রূপার পুঁথি দ্বারা তৈরীকৃত বেনারশী শাড়ীতে কী পরিমাণ রূপা থাকতে পারে, তা নিজে অথবা এ বিষয়ের কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা অনুমান করে নিবে। পুঁথি ইত্যাদি দ্বারা কারুকার্যখচিত শাড়ীর প্রতি থানের ওজন কত হয়, সে হিসাব করে যাকাতের হিসাব করবে। অবশ্য এক্ষেত্রে আনুমানিক পরিমাণ ধর্তব্য হবে। তবে অনুমানের ক্ষেত্রে যাতে কোনভাবে কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে; বরং কিছু বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/১২১)

তথ্যসূত্রঃ

যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।

লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *