মসজিদ, মাদরাসায় যাকাত প্রদান সম্পর্কিত ১৪ টি মাসআলা।
মাদ্রসার ছাত্ররা যাকাতের অধিক উপযুক্ত ০১. মাসআলা : ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরীব ছাত্রদেরকে যাকাত দিলে শরীয়তের প্রচার- প্রসার ঘটে। কেননা দ্বীন ও শরীয়তের বাহক এই ছাত্ররাই। এদের দ্বারাই নবী কারীম সা. এর আনীত শরীয়ত প্রকাশিত হয়েছে।
যাকাতের টাকা দ্বারা মাদ্রাসা নির্মাণ করা। ০২. মাসআলা : যাকাতের টাকা দিয়ে মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ করা বা করানো জায়েয নেই। কেননা যাকাতের মধ্যে ফকীরদেরকে মালিকানা স্বত্বদান শর্ত । আর এখানে মালিকানা দান করা হয় না। (তাতারখানিয়া : ২/২৭২)
মাদ্রাসায় যাকাতের খাত না থাকলে। ০৩.মাসআলা : যদি কোনো মাদ্রাসার মধ্যে যাকাতের খাত না থাকে, তাহলে সেখানে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। যদি কোনো ব্যক্তি জেনে শুনে এমন মাদ্রাসায় যাকাত দিয়ে দেয়, তাহলে তার যাকাত আদায় হবে ন। (শামী : ২/৩৫২)
মাদ্রাসার স্থায়িত্বের জন্য যাকাত নেওয়া ০৪.মাসআলা : মাদ্রাসায় বর্তমানে যাকাতের টাকার প্রয়োজন নেই। অবশ্য মাদ্রাসার স্থায়িত্বের জন্য উন্নতি এবং দৃঢ়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে অগ্রীম যাকাতের টাকা নেওয়া জায়েয হবে। (শামী : ২/২৬৯)
যাকাতের টাকা দ্বারা শিক্ষকদের বেতন দেওয়া ০৫.মাসআলা : যাকাতের টাকা দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া জায়েয নেই। কেননা যাকাতের টাকা বিনিময় ছাড়া (মফ্ত) মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। হ্যাঁ, যদি মাদ্রাসা গরীব অঞ্চলে অবস্থিত হয়, যে অঞ্চলের লোকেরা শিক্ষকদের বেতনের টাকার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা রাখে না, তখন এমন অপারগতার কারণে প্রয়োজন অনুপাতে যাকাতের টাকা নিয়ে, শরয়ী হিলা (কৌশল) করে, শিক্ষকদেরকে বেতন দেওয়া জায়েয আছে। (তাতারখানিয়া : ২/২৭২, ৩৪৪)
মাদ্রাসার চাঁদার উপর যাকাত ০৬.মাসআলা : মাদ্রাসার চাঁদা নেসাব পরিমান হয়ে তাতে বছর অতিবাহিত হলেও যাকাত ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪৯) ০৭.মাসআলা : জনসেবামূলক কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যে সামাজিক কোন কমিটির জমাকৃত অর্থে এবং মসজিদের টাকায় যাকাত ওয়াজিব হয় না। (কেফায়াতুল মুফতী : ৪/২৫০)
মাদ্রাসায় যাকাত জমে গেলে ০৮. মাসআলা : মাদ্রাসায় যাকাতের টাকা যত বেশী পরিমাণই আসুক, যাকাত দেওয়া যাবে। কোন বাধা নেই, তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উচিত হলো যাকাতের অর্থ বছর বছর নির্দিষ্ট খাতে ব্যায় করা। অবশ্য যেসব মাদ্রাসায় বছরের পর বছর যাকাতের টাকা জমা রেখে দেয়, এ জাতীয় মাদ্রাসায় যাকাত না দিয়ে এমন মাদ্রাসায় দেওয়া উচিত যারা যাকাতের টাকা কাজে লাগিয়ে দেয়। আর তাদের যাকাতের প্রয়োজনও থাকে । (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া : ৫/১৬৩)
পুরস্কারের নামে যাকাত দেওয়া ০৯.মাসআলা : যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে পুরস্কারের নামে যাকাতের টাকা আসবাবপত্র, কিতাব, কাপড় ইত্যাদি দেওয়া জায়েয আছে। তবে পুরস্কারের নামে দেওয়ার সময় মনে মনে যাকাতের নিয়ত করে নিবে। তাহলে আদায় হয়ে যাবে। (আলমগীরী : ১/১৭১)
১০. মাসআলা : এভাবে যে কোন জায়েয কাজে যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে বিনিময় ছাড়া যাকাতের হিসেবে পুরস্কার দেওয়া জায়েয, তবে যারা যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত নয়, তাদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। (শামী : ২/৩87)
দ্বীনি কিতাবাদী যাকাত হিসেবে বন্টন করা ১১. মাসআলা : যাকাতের টাকা দ্বারা দ্বীনি কিতাবসমূহ ক্রয় করে গরীব ছাত্রদেরকে এবং গরীব আলেমদেরকে মালিকানার সূরতে বন্টন করা শুধু জায়েযই নয়; বরং দ্বীনি কিতাবসমূহ প্রচারের উত্তম মাধ্যম এবং সদকায়ে জারিয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এমন কিতাবসমূহ পড়তে থাকবে সাওয়াব পেতেই থাকবে এবং দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। (মিশকাত : পৃ. ৩২)
দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে যাকতা দেওয়া ১২. মাসআলা : যে দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে গরীব এবং মুসাফির ছাত্ররা রয়েছে তাদের বৃত্তি, খানা- পিনা, চিকিৎসা অথবা পোষাক ইত্যাদি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, ঐ দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে যাকাত দেওয়া শুধু জায়েযই নয়; বরং উত্তম। কেননা তাতে গরীব ছাত্রদের সহযোগীতার সাথে সাথে দ্বীনি ইলমের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সদকায়ে জারিয়াও হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত এই শিক্ষার ব্যবস্থা চালু থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাওয়াব পেতেই থাকবে। (মিশকাত : পৃ. ৩২)
মসজিদের নির্মাণ কাজে যাকাতের টাকা খরচ করা। ১৩. মাসআলা : মসজিদের নির্মাণ কাজে যাকাতের টাকা খরচ করার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা মসজিদ যাকাতের টাকা খরচ করার খাত নয়। (তাতারখানিয়া : ২/272**)**
মসজিদের জন্য হিলা (কৌশল) অবলম্বন করা। ১৪. মাসআলা : মসজিদের জন্য হিলা (কৌশল) করে মালিকত্ব দান করা উচিত না। তথাপি যদি মসজিদ গরীব এবং এলাকাবাসীও গরীব হয়, আর এলাকার লোকদের মাঝে যাকাত ব্যতীত দানের টাকা দ্বারা মসজিদের প্রয়োজন পূর্ণ করার সামর্থ না থাকে, তখন বাধ্য হয়ে মালিকানা স্বত্ব দানের কৌশল করার সুযোগ থাকবে। মালিকানা স্বত্ব দানের কৌশলের পদ্ধতি হলো এই যে, যে কোন গরীব ব্যক্তি কারো থেকে ঋণ নিয়ে মসজিদের প্রয়োজন পূরণের জন্য টাকা দিয়ে দিবে। আর এই গরীবকে ঋণ আদায় করার জন্য যাকাতের টাকা দিয়ে দিবে । (তাতারখানিয়া : ২/২72)
তথ্যসূত্রঃ
যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।
লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী