ইবাদত

মোজার উপর মাসাহ করার আহকাম

উযূ করার সময় মোজা পরিহিত থাকলে মোজা না খুলে তার উপর মাসাহ করে নিলেও চলে, তবে তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। -শামী ১/৪৩৬

শর্তসমূহ

১. পা ধোয়ার পর মোজা পরিধান করবে। চাই পূর্ণ উযূ করার পর মোজা পরিধান করুক কিংবা উযূর আগেই পা ধুয়ে মোজা পরিধান করে তারপর উযূ ভাঙ্গার কোনো কারণ পাওয়া যাওয়ার পূর্বেই উযূ পূর্ণ করুক। -শামী ১/৪৫৬

২. মোজা পায়ের টাখনুর গিরা ঢাকা থাকতে হবে ।

৩. মোজা এমন হতে হবে যা পরিধান করে উপর্যুপরি অন্তত তিন মাইল হাঁটা যায় ৷

৪. একটি মোজায় পায়ের ছোট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি ফাঁটা-ছেঁড়া থাকতে পারবে না, চলার সময় এ পরিমাণ খুললেও তার উপর মাসাহ চলবে না। মোজা এমন হতে হবে যা বাঁধা ছাড়াই পায়ের উপর আঁটকে থাকে।

৫. মোজা এমন হতে হবে যার ভিতর দিয়ে পানি ভেদ করে শরীরে লাগে না।

৬. কমপক্ষে হাতের ছোট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ পায়ের অগ্রভাগ সথাকতে হবে। অতএব, কোনো এক পা টাখনু-গিরার উপর থেকে কাটা গেলে আর অপর পা ঠিক থাকলে সে অবস্থায় পরিহিত মোজায় মাসাহ করা জায়েয হবে না। ৭. গোসল ফরয হলে মোজায় মাসাহ করা জায়েয নেই; বরং তখন মোজা খুলে পা ধৌত করতে হবে। -মারাকিউল ফালাহ

কোন্ ধরনের মোজায় মাসাহ করা জায়েয

চামড়া, পশম, কাতান প্রভৃতি এমন মোটা মোজা, যা অন্তত পায়ের টাখনু গিরা ঢাকা হবে এবং বাঁধা ছাড়াই পায়ের উপর খাড়া থাকতে পারে। এমন হবে, যা পায়ে দিলে অন্ততঃ তিন মাইল হাঁটা যাবে। তাতে ফাঁটবে না এবং যা ভেদ করে পানি ভিতরে ঢুকবে না এবং যা দিয়ে পায়ের চামড়া দেখা যাবে না এমন মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। —ইমদাদুল ফাতাওয়া

হাত মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয় ৷

মোজায় কতোদিন মাসাহ করা জায়েয

১. শরঈ সফরের অবস্থায় তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত এবং সফর না হলে এক দিন এক রাত পর্যন্ত মাসাহ করা যায়। যে উযূ করে মোজা পরিধান করা হবে সে উযূ ভঙ্গ হওয়ার সময় থেকে এই তিন দিন তিন রাত ও একদিন এক রাতের হিসাব ধরা হবে।

২. মুকীম অর্থাৎ বাড়িতে থাকা অবস্থায় যদি মাসাহ আরম্ভ হয় অতঃপর সফরে বের হয়, তাহলে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসাহ করতে পারবে। পক্ষান্তরে যদি সফরে থাকা অবস্থায় মাসাহ শুরু করা হয়, তারপর একদিন একরাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বাড়িতে চলে আসে, তাহলে এক দিন এক রাত হওয়ার পর আর মাসাহ করতে পারবে না।

মোজায় মাসাহের তরীকা

উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পানিতে ভিজিয়ে উভয় পায়ের পাতার অগ্রভাগে রাখবে, যেন সম্পূর্ণ মোজার উপর আঙ্গুলগুলোর ছাপ পড়ে। অতঃপর হাতের তালু শূন্যে রেখে এবং আঙ্গুলগুলোর মধ্যে সামান্য ফাঁক রেখে ক্রমশঃ আঙ্গুলগুলো টেনে পায়ের টাখনুর দিকে আনবে। পুরো হাতের তালুসহ মোজার উপর রেখে টেনে আনলেও দুরস্ত আছে।

যেসব কারণে মোজায় মাসাহ ভঙ্গ হয়ে যায়

১. যে কারণে উযূ ভেঙ্গে যায় সে কারণে মাসাহও ভেঙ্গে যায়।

২. উভয় মোজা বা কোনো একটি মোজা খুলে ফেললেও মাসাহ ভেঙ্গে যায়। এরূপ অবস্থায় উযূ থাকলে শুধু পা ধুয়ে আবার মোজা পরিধান করে নিলেই চলে, পুরো উযূ দোহরানোর প্রয়োজন হয় না। মাসাহের মেয়াদ তিন দিন তিন রাত বা একদিন একরাত পূর্ণ হয়ে গেলেও মাসাহ ভেঙ্গে যায়। এরূপ ক্ষেত্রে উযূ থাকলে শুধু পা ধুয়ে নিবে।

৪. মোজার ভিতরে পানি ঢুকে সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অর্ধেকের বেশি ভিজে গেলে। এক্ষেত্রেও উযূ থাকলে শুধু পা ধুয়ে নিবে।

৫. মাযূর ব্যক্তি যদি মাসাহ করে, তাহলে ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যেমন তার উযূ ভেঙ্গে যায় তদ্রূপ তার মাসাহও ভেঙ্গে যাবে। তবে উযূ করার সময় এবং মোজা পরিধান করার সময় ওযর না থাকলে অন্যান্য সুস্থলোকের ন্যায় সেও মাসাহ করতে পারবে। -নূরুল ইযাহ, বেহেশতী জেওর, আলফিক আলাল মাযাহিরিল আরবায়া

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *