মুসাফিরের নামাযের বর্ণনা
সফর ও মুসাফির কাকে বলে?
সফর : এর অর্থ হলো, যেখানে স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেটে পৌঁছতে তিন দিন তিন রাত কমপক্ষে অতিবাহিত হয়। মুসাফির : শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ৪৮ মাইল (সোয়া ৭৭ কিলোমিটার) দূরে ভ্রমন করে এবং সেখানে ১৫ দিনের কম সময় অবস্থানের ইচ্ছা পোষন করে। এ পরিমাণ দূরত্বের নিয়ত করে নিজ শহর কিংবা গ্রামের সীমানা অতিক্রম করলে মুসাফির বলে গণ্য হবে।
সফরের সময়সীমা
সফরের সময়সীমা হচ্ছে তিন দিন তিন রাত পায়ে চলার সমান দূরত্বের রাস্তা অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা সোয়া ৭৭ কিলোমিটার। এ পরিমাণ পথ কোনো দ্রুতগামী যানবাহনে অতিক্রম করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মুসাফির হিসাবে গন্য হবে।
মুসাফির কয় রাকাত নামায আদায় করবে?
মুসাফির চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দু’রাকাত আদায় করবে। ইসলামি শরীয়তে এটাকে (কসর) বলে।
১. মুসাফির যখন একাকী বা ইমাম হয়ে নামায আদায় করবে তখন তার জন্য দু’রাকাতের অতিরিক্ত আদায় করা জায়েয নেই।
২. কিন্তু মুসাফির কোন মুকীম ইমামের ইক্তেদা করলে তখন ইমামের অনুসরণার্থে পূর্ণ নামায আদায় করবে। কেননা ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যক।
৩. যদি কোন মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের পূর্ণ আদায় করে ফেলে এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে তার প্রথম দুই রাকাত ফরয এবং পরবর্তী দু’রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে তার ফরয বাতিল হয়ে যাবে।
৪. মুসাফির কোন শহরে গমনের পর সেখানে ১৫দিন বা তার বেশী অবস্থানের নিয়ত না করলে তাকে কসরই আদায় করতে হবে। চাই সে ঐ স্থানে ঘটনাক্রমে ১৫দিনের বেশী সময় অবস্থান করুক। (কুদূরী)
মুসাফির দু’রাকাতের বেশী পড়লে তার বিধান
মুসাফির ব্যক্তি যোহর, আসর ও ইশার ফরয নামায দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ চার রাকাত আদায় করে ফেলে, তবে দু’রাকাত অতিরিক্ত হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় রাকাতে বসা তার জন্যে শেষ বৈঠক হিসেবে গণ্য হবে। এটি পালন করে যদি অতিরিক্ত পড়ে, তাহলে তার দায়িত্ব থেকে ঐ ওয়াক্তের ফরয আদায় হয়ে যাবে।
মুসাফির কসর না করে চার রাকাত পড়লে তার কি হুকুম?
যদি কোন মুসাফির চার রাকাত আদায় করে ফেলে তাহলে দেখতে হবে সে প্রথম বৈঠক করেছে কিনা? যদি প্রথম বৈঠক করে থাকে তাহলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে এবং শেষ দু’রাকাত নফল বলে গণ্য হবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে তার ফরয বাতিল হয়ে যাবে এবং পুরো নামাযই নফল হিসেবে গণ্য হবে।
অবস্থানের নির্দিষ্ট নিয়ত না করলে তার বিধান
কোন মুসাফির আজ যাব, কাল যাব এ অবস্থায় যদি কোন স্থানে কয়েক বছরও থেকে যায় এবং ধারাবাহিক ১৫দিন থাকার নিশ্চয়তা না থাকে, তবে সে কসর নামাযই আদায় করতে থাকবে। হযরত ইবনে ওমর ও আনাস রা. এমনিভাবে ছয়মাস পর্যন্ত কসর করতে থাকার কথা বর্ণিত আছে।
মুসাফির ব্যক্তি ইমাম হলে তার বিধান
মুসাফির ইমাম হলে সে দু’রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে নিবে। কিন্তু মুকীম মুক্তাদিগণ পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে মুসাফিরের দু’রাকাত শেষ হওয়ার পর মুক্তাদিদেরকে উদ্দেশ্য করে “ তোমরা তোমাদের নামায পূর্ণ করো, কেননা আমি মুসাফির” কথাটি বলা মুস্তাহাব।
বি. দ্র. যোগ্য ইমাম উপস্থিত থাকাবস্থায় মুসাফির ব্যক্তি মুকীমদের ইমামতি না করলেই ভালো। তবে যদি ইমামতি করতেই হয় নামাযের পূর্বেই ইমাম সাহেব মুসাফির হওয়ার কথা মুসল্লিদের বলে তাদের করণীয় বলে দেয়া উত্তম, কেননা বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের শরীয়তের মাসআলা মাসায়েলের ব্যাপারে অজ্ঞতাই বেশী।
তথ্যসূত্রঃ
বই: নামায পড়ি বেহেশতের পথে চলি
লিখক: মাওলানা মুমিনুল হক জাদিদ
মুহতামিম: ফেনী জামিয়া ইসলামিয়া