ইবাদত

নারীদের পাক-পবিত্রতার মাসআলা না জানার কারণে নামায আদায়ে গাফলতি

মেয়েদের হায়েজ ও নেফাসের বিধি-বিধান ঠিকমত না জানার কারণে কিংবা বেপরোয়া মনোভাবের ফলে ভালো ভালো নামাযী দ্বীনদার মহিলা নামায আদায় করে না। হায়েয বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে কোনো নামাযের এতটুকু ওয়াক্ত বাকি থাকে যে, সে কোনোরকম তেল মালিশ বা ঘষা-মাজা ছাড়া কোনো মতে পানি ঢেলে গোসল সেরে একবার আল্লাহু আকবার বলার সময় পায় তাহলে সে ওয়াক্তের নামায তার উপর ফরয হয়ে যায়। যদি গোসল সেরে নামায পূর্ণ পড়ার সময় না থাকে তাহলে তাকে কাযা আদায় করতে হবে। আর যদি তা পড়ার সময় থাকে তাহলে আদায় করে নেয়াই ফরয হবে। আজকাল দ্বীনী বিষয়ে অজ্ঞ মেয়েদের উদাসীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কখন হায়েজ বন্ধ হয় তারা সেটাও খেয়াল রাখে না। হয়তো সেটা কোনো নামাযের শেষ ওয়াক্তে এতটুকু সময় বাকি থাকতে বন্ধ হয়েছে, যে সময়ে গোসল সেরে তাকবীরে তাহরীমা বলতে পারতো, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ওয়াক্তের নামায তার উপর ফরয হয়েছে এবং গোসলও ফরয হয়েছে। এ কারণে শেষ দিকে স্বীয় অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা দরকার। যেন কোনো নামায ফরয হওয়া সত্ত্বেও ছুটে না যায় ।

আরেক শ্রেণীর মেয়েলোকের অবস্থা হলো হায়েজ বন্ধ হয়েছে জেনেও গোসল না করে কয়েক ওয়াক্ত কাটিয়ে দেয়। সর্বনাশের ব্যাপার এই যে, সময় পেয়েও নামায না পড়ার পাপতো ঘাড়ে নিলই তারপর এসব নামাযের কাযাও আদায় করে না। এভাবে প্রতি মাসে তাদের জিম্মায় কয়েক ওয়াক্ত অনাদায়ী নামাযের বোঝা চাপতে থাকে। গোটা জিন্দেগীতে তার অঙ্ক অনেক বিরাট হয়ে দেখা দেয়। যদি মাসে তিন ওয়াক্ত নামাযও জমা হয় তো বছরে ছত্রিশ ওয়াক্ত ও ত্রিশ বছরে হাজার ওয়াক্তের বেশি নামাযের দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপে। জীবনভর তার কাযা আদায় হয় না। মরার সময়ও তার ফিদিয়া দেয়ার অসিয়্যত করে না। তাহলে পরকালে এর কি জবাব দিবে? তথাপি নিজেকে নিয়মিত নামাযী বলে মনে করে। কিয়ামতে যখন এ অনাদায়ী নামাযের হিসাব সামনে আসবে তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে ।

উদাসীনতার প্রতিকার

১. নামাযের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুশিয়ারী ও কড়াকড়ি বাণীসমূহের চিন্তা-ভাবনা করা ।

২. মনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে এমতাবস্থায় গাফলতী পরিত্যাগ করা ।

৩. যে সমস্ত মাসআলা জানা নেই সেগুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া।

পরামর্শ ঃ

যখন মেয়েদের ঋতুকালীন অবস্থা দেখা দেয় তখন সংশ্লিষ্ট পুরুষদের কাজ হলো তাদের প্রয়োজনীয় বিধান জানানোর ব্যবস্থা নেয়া। যদি নিজের জানা না থাকে তাহলে ভালো কোনো আলেমের কাছে জেনে নিবে। নারীদের কর্তব্য হলো যখন কোনো সমস্যা দেখা দিবে তা স্বামীদের জানিয়ে আলেমদের থেকে তার সমাধান জেনে আসার তাকীদ দেয়া। এমনকি ঘরের পুরুষ যদি এ ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয় তাহলে সম্ভাব্য অন্য কোনো পুরুষের মাধ্যমে জানার ব্যবস্থা করবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে নিজে কোনো আলেমের কাছে গিয়ে তাদের কোনো মাহরাম মহিলা বা স্ত্রীর মাধ্যমে মাসআলা জেনে নিবে। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।

মেয়েদের মধ্যে নিয়মিত নামায না পড়ার কারণ এই যে, শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার ভয়ে নিয়মিত নামাযীর সংখ্যা কম। মেয়েদের স্থায়ীভাবে প্রতিমাসে কিছুদিন সৃষ্টিগতভাবেই নামায নষ্ট হয়। ফলে নিয়মিত নামাযে উদাসীনতা দেখা দেয়। দেখা যায় মাসিক শেষ হলেও এর প্রভাব অবশিষ্ট থেকে যায়। এতে করে কয়েক দিন পর্যন্ত নামাযের খেয়াল থাকে না। এর মূল প্রতিকার হলো অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করা ও আল্লাহ তা’আলার ভয়ে নামায পড়া। অবশ্যই বাহ্যিক কারণে প্রতিকারও ফলদায়ক। ফকীহগণ বলেছেন যে, নারীদের হায়েয অবস্থাও উত্তম হলো প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে উযূ করে নামাযের মুসল্লায় বসবে এবং কিছুক্ষণ তাসবীহ-তাহলীলে মগ্ন থাকবে। তাহলে অভ্যাস বহাল থাকবে। আর অভ্যাসে খলল না এলে আর নামাযে শৈথিল্য দেখা দেয়ার সম্ভবনা থাকবে না।

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *