ইবাদত

অসহায়দের প্রতি সদাচরণে রিজিক বৃদ্ধি

মানবিকতা, উদারতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে একটি সমাজ গঠিত হয়। ইসলাম মানুষকে একে অপরের প্রতি দয়া ও সদাচরণের শিক্ষা দিয়েছে। বিশেষ করে অসহায় ও দরিদ্রদের প্রতি সদাচরণ করলে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষ পুরস্কার দান করেন। শুধু আখিরাতের সওয়াবই নয়, বরং এটি দুনিয়াতেও রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে অসহায়দের সহায়তা ও সদাচরণের ফলে রিজিকে বরকত লাভের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

অসহায়দের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি—কুরআনের দৃষ্টিতে

আল্লাহ তাআলা বলেন:

يَمْحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰا۟ وَيُرْبِى ٱلصَّدَقَـٰتِ

“আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন।”(সূরা আল-বাকারাহ: ২৭৬)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, দান-সদকা এবং অসহায়দের প্রতি সদাচরণ করলে আল্লাহ তাআলা রিজিকে বরকত দান করেন। যারা দানের মাধ্যমে দরিদ্রদের সাহায্য করে, আল্লাহ তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করেন এবং নতুন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন।

আবার, আল্লাহ বলেন:

وَأَحْسِن كَمَآ أَحْسَنَ ٱللَّهُ إِلَيْكَ

“তুমি সদাচরণ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি সদাচরণ করেছেন।”(সূরা আল-কাসাস: ৭৭)

এখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা অন্যদের প্রতি দয়া ও সদাচরণ করে, তিনি তাদের প্রতি আরও বেশি অনুগ্রহ করেন। অর্থাৎ, যারা গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করে, তারা নিজেও আল্লাহর অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য হয় এবং তাদের রিজিকের বরকত বৃদ্ধি পায়।

অসহায়দের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি—হাদিসের দৃষ্টিতে

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“তোমরা তোমাদের দুর্বলদের কারণে সাহায্যপ্রাপ্ত হও এবং রিজিকপ্রাপ্ত হও।”(সুনান আবু দাউদ: ২৫৯৪)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, সমাজের দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সদাচরণ করলে তা রিজিক বৃদ্ধির কারণ হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা এমন মানুষের রিজিক বৃদ্ধি করেন যারা গরিবদের সাহায্য করে।

অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:“যে ব্যক্তি দরিদ্রদের খাওয়ায়, আল্লাহ তার রিজিক বৃদ্ধি করেন।”(মুসনাদ আহমাদ: ৯৪৪৮)

এটি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে, যারা ক্ষুধার্তদের খাবার দেয়, তাদের জন্য আল্লাহ আরও বেশি রিজিকের দরজা খুলে দেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন:“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে, দয়াময় আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন।”(সুনান আত-তিরমিজি: ১৯২৪)

যারা অসহায়দের প্রতি সদাচরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন এবং দুনিয়াতে তাদের জীবন সহজ করে দেন, যার মধ্যে রিজিক বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত।

কীভাবে অসহায়দের প্রতি সদাচরণ রিজিক বৃদ্ধি করে?

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: যারা দরিদ্রদের সাহায্য করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন হন এবং তাদের জীবনে বরকত দান করেন।

মানুষের দোয়া লাভ: গরিব ও অসহায়রা যখন কোনো দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, তখন আল্লাহ তাদের রিজিকে বরকত দান করেন।

পরোপকারের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি: যারা দান করে, তারা মানসিকভাবে শান্তি পায়, যা তাদের কর্মক্ষমতা ও সফলতা বৃদ্ধি করে।

জীবিকার নতুন দরজা খুলে যায়: আল্লাহ এমন ব্যক্তির জন্য নতুন রিজিকের পথ তৈরি করে দেন, যারা অসহায়দের সহযোগিতা করে।

উপসংহার

অসহায় ও দরিদ্রদের প্রতি সদাচরণ করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণকর। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যারা দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করে, আল্লাহ তাদের জন্য রিজিকের বরকত দান করেন। তাই আমাদের উচিত, দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখা, গরিবদের প্রতি সদাচরণ করা এবং আল্লাহর রহমত ও বরকতের আশায় দান-সদকা করা।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *