প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট কাপড় পড়ে নামাজ পড়ার বিধান
জামা-কাপড়ে অনেকে বিভিন্ন কারুকাজ, প্রকৃতির ছবি ইত্যাদি পছন্দ করে থাকেন। রুচি বৈচিত্র্যের কারণে কেউ কেউ প্রাণীর ছবিযুক্ত জামাও কিনে থাকেন। কিন্তু ইসলামে যেহেতু প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম, তাই এমন পোশাক পরে নামাজ পড়লে তা শুদ্ধ হবে কি না—জানতে চান অনেকে।
এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, নামাজে হোক বা নামাজের বাইরে—সর্বাবস্থায় প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা মাকরুহে তাহরিমি বা হারাম। তবে, নামাজের সময় কোনো কাপড় দ্বারা ওই ছবি ঢাকা থাকলে নামাজ মাকরুহ হবে না।
সুতরাং ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামাজ পড়লে তা আদায় হবে ঠিকই, কিন্তু মাকরুহে তাহরিমিতে লিপ্ত অবস্থায় নামাজ পড়ার কারণে গুনাহ হবে।
অনেকে মনে করে, ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা শুধু নামাজের ক্ষেত্রে হারাম! ফলে তারা নামাজের সময় এ ব্যাপারে খেয়াল রাখলেও অন্য সময় উদাসীন থাকে।
অথচ এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সর্বাবস্থায় ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে হ্যাঁ, নামাজে এমন পোশাক পরিধান করা গর্হিত অপরাধ। ‘খোলাসা’ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে নামাজ আদায় করা হোক বা না হোক, উভয় অবস্থায় তা মাকরুহে তাহরিমি বা হারাম। (আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৯)
প্রাণীর ছবি আঁকা নিয়ে হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই কোনো প্রাণীর স্পষ্ট দৃশ্যমান ছবিযুক্ত কাপড় নামাজের বাইরেও পরা উচিত নয় এবং এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এক হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) একবার একটি ছবিযুক্ত গদি ক্রয় করলেন। (রাসুলুল্লাহ স. তা দেখলেন) তখন তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন না। রাসুল (স.) ইরশাদ করলেন, নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি নির্মাণ করে কেয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছ তাতে জীবন দান করো। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি: ৫৯৫৭)
বিখ্যাত ফতোয়াগ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে- কাপড়, বিছানা, মুদ্রা, বাসনকোসন, দরজা বা অন্য যেকোনো কিছুতে প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন- বৃক্ষ, পাহাড়, ঝর্ণা ইত্যাদির ছবি বৈধ।
(আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৯, ২/২৭; মেরকাতুল মাফাতিহ: ৪৪৮৯; কিতাবুল আছল: ১/১৮৫; আলআজনাস, নাতিফি: ১/৭৬; আলহাবিল কুদসি: ১/২০৯; রদ্দুল মুহতার: ১/৬৪৭; শরহে নববি: ১৪/৮১)
ইসলামী শরিয়ত মতে, কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন—বৃক্ষ, পাহাড়, ঝরনা ইত্যাদির ছবি বৈধ। (আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৯, মেরকাতুল মাফাতিহ : ৪৪৮৯)