ইবাদত

খুতবা চলাকালীন দানবাক্স চালানোর বিধান

অনেক মসজিদে দেখা যায়, খুৎবা চলা অবস্থায়ও দানবাক্স চলতে থাকে। অথচ খুতবা চলাকালীন সব ধরনের কাজকর্ম, কথাবার্তা এমনকি নামাজ, যিকির ও তিলাওয়াত পর্যন্তও নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–

وإذا قرئ القرأن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون

আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।(সূরা আরাফ, ২০৪) এই আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ রহ. বলেন, এ আয়াত নামাজ ও জুমার খুতবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪৪৪)

হাদীস শরীফে খুৎবা চলা অবস্থায় অন্যকে চুপ করতে বলাকেও অনর্থক কাজ বলা হয়েছে। সেখানে খুৎবার সময় দানবাক্স চালানো তো আরো বড় অনর্থক কাজ। সুতরাং তা পরিহার করা জরুরী।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন–

مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল অতঃপর জুমায় এসে চুপ করে মনোযোগ সহকারে (খুতবা) শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭)

অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–

إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت

জুমার দিন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমন সময় যদি তোমার পাশের ব্যক্তিকে বল ‘চুপ কর’ তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪)

ইমাম ইবনে ওয়াহাব রহ. বলেন–

مَعْنَاهُ أَجْزَأَتْ عَنْهُ الصّلَاة وَحُرِمَ فَضِيلَة الْجُمُعَة.

এর অর্থ হল, তার জুমার ফরয আদায় হলেও সে জুমার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। (ফাতহুল বারী ২/৪৮১)

‘নাহি আনিল মুনকার’ বা গোনাহের কাজ থেকে নিষেধ করা তো ভালো। কিন্তু খুৎবা চলা অবস্থায় সেটাকেও অনর্থক ও গোনাহের কাজ বলা হয়েছে। মসজিদের জন্য দান করা বা দান সংগ্রহ করা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। কিন্তু তা যদি খুৎবা চলা অবস্থায় করা হয় তাহলে তাও অনর্থক ও গোনাহের কাজ বলে গণ্য হবে। এজন্য এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকা জরুরী।

তাই জুমার দিন খুতবার সময় দানবাক্স চালানো কিংবা উঠে টাকা উঠানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শুনতে হবে। প্রয়োজন হলে খুতবার আগে বা নামাজের পরে মসজিদের জন্য টাকা উঠানো যেতে পারে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *