ইসলাম

কিয়ামতের ছোট আলামত ৩.বাইতুল মাকদিস বিজয়:

বাইতুল মাকদিস ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এটি শুধু ইসলামের প্রথম ক্বিবলা নয়, বরং বহু নবী ও রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র স্থান। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী অনুসারে, বাইতুল মাকদিস বিজয় কেয়ামতের গুরুত্বপূর্ণ আলামতগুলোর একটি।

বাইতুল মাকদিস: ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্ব

বাইতুল মাকদিসকে মুসলিম উম্মাহ পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। এটি শুধু প্রথম ক্বিবলা নয়, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐতিহাসিক মেরাজ রজনীর কেন্দ্রস্থল। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন: “পবিত্র সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি।” (সূরা আল-ইসরা: ১)

এই আয়াত বাইতুল মাকদিসের গুরুত্ব ও বরকত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এটি এমন এক স্থান, যা ইসলামের ইতিহাসে নবীদের কাজ ও আল্লাহর নির্দেশের প্রতীক হয়ে আছে।


বাইতুল মাকদিস বিজয়: হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদিসে কেয়ামতের আলামত হিসেবে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। হযরত আউফ ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা ছয়টি বিষয়কে কেয়ামতের আলামত হিসেবে গণনা করো: ১. আমার মৃত্যুবরণ। ২. বাইতুল মাকদিসের বিজয়। ৩. এমন একটি রোগের প্রাদুর্ভাব, যা মহামারির মতো মানুষকে ব্যাপকভাবে হত্যা করবে। ৪. সম্পদের এমন আধিক্য, যা কেউ গ্রহণ করতে চাইবে না। ৫. এক মহাযুদ্ধের সূচনা। ৬. বাইতুল মাকদিসে পুনরায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি।” (সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম)

এই হাদিসে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের পাশাপাশি কেয়ামতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি সতর্কবার্তা এবং আত্মসমালোচনার আহ্বান।


ইতিহাসে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের ঘটনাবলি

ইসলামের ইতিহাসে বাইতুল মাকদিস বিজয় কয়েকবার ঘটেছে, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।

প্রথম বিজয়:

খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়। তিনি এটি শান্তিপূর্ণভাবে দখল করেন এবং বাইতুল মাকদিসের পবিত্রতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

দ্বিতীয় বিজয়:

১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাহউদ্দিন আইউবি বাইতুল মাকদিসকে ক্রুসেডারদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করেন। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিজয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল উদাহরণ।

ভবিষ্যৎ বিজয়:

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে, কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বাইতুল মাকদিসে পুনরায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং এর পুনরুদ্ধার হবে কেয়ামতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত।


কেয়ামতের আলামত হিসেবে বাইতুল মাকদিসের তাৎপর্য

হাদিসের আলোকে বাইতুল মাকদিস বিজয় শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ১. উম্মাহর ঐক্য ও শক্তি: বাইতুল মাকদিস বিজয় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। ২. ফিতনার যুগের সূচনা: হাদিসে বলা হয়েছে, বাইতুল মাকদিসে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধ কেয়ামতের সন্নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত। ৩. আত্মসচেতনতার আহ্বান: এই আলামত আমাদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে এবং কেয়ামতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে উৎসাহিত করে।


আমাদের দায়িত্ব ও শিক্ষা

বাইতুল মাকদিসের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্ব পালনে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারি: ১. বাইতুল মাকদিসের গুরুত্ব ও পবিত্রতা সম্পর্কে সচেতন থাকা। ২. ইসলামী ঐক্য বজায় রাখা এবং উম্মাহর মধ্যে বিভাজন রোধ করা। ৩. কেয়ামতের আলামত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের আমল পরিশুদ্ধ করা।

সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *