কিয়ামতের ছোট আলামত ৪.ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়েই সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস সাক্ষী, সম্পদ অর্জনের জন্য মানুষ নানা সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান সময়ে সম্পদের প্রাচুর্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে এই প্রাচুর্য কেবল আধুনিকতার ফল নয়, বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কিয়ামতের পূর্বাভাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে সম্পদের প্রচুরতা ও এর প্রভাব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।
রসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন সময় আসবে, যখন মানুষের অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। সম্পদের এত প্রচুরতা হবে যে, মানুষ দান গ্রহণে আগ্রহী থাকবে না। একটি হাদিসে তিনি বলেন,
মানুষের কাছে এমন সময় আসবে, যখন স্বর্ণ দান করার জন্য লোক ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তা নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না।” (বুখারি, হাদিস: ১৪১৪)
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জমিন তার ভেতরে থাকা সোনা ও রুপার ভাণ্ডার বের করবে। তখন মানুষ বুঝতে পারবে, তারা যে অন্যায় করেছে, তা এই সম্পদের জন্যই। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা এই সম্পদ ছেড়ে দেবে। (মুসলিম, হাদিস: ১০১৩)
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, সদকা নেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। তিনি বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না সম্পদের এমন প্রাচুর্য দেখা দেবে যে তা উপচে পড়বে। (বুখারি, হাদিস: ১৪১১)
ইমাম মাহদি ও ঈসা (আ.)-এর সময়ে সম্পদ বৃদ্ধির চূড়ান্ত রূপ। কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদি ও ঈসা (আ.)-এর আগমনের পর সম্পদের প্রাচুর্য চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে। সুল (সা.) বলেছেন, ইমাম মাহদির সময়ে জমিন তার শস্য উৎপাদনে সেরা হবে। প্রচুর সম্পদ দান করা হবে এবং মানুষ নিয়ামতপ্রাপ্ত হবে। (সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস: ৭৭১)
ঈসা (আ.)-এর আগমনের পর তিনি শূকর হত্যা করবেন, ক্রুশ ভাঙবেন এবং জিজিয়া রহিত করবেন। ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, তা গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না। (বুখারি, হাদিস: ২২২২)
ইসলামের দৃষ্টিতে কিয়ামতের আলামতগুলো সতর্কতার বার্তা বহন করে। সম্পদের প্রাচুর্যও সেই আলামতগুলোর অন্যতম, যা মানুষের জীবনে একধরনের পরীক্ষা স্বরূপ। প্রাচুর্যের সময়ে মানুষ যদি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়, তবে তা হতে পারে তার জন্য ধ্বংসাত্মক।
তাই এসব আলামত উপলব্ধি করে আমাদের উচিত আরও বেশি আল্লাহমুখী হওয়া এবং জীবনকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করা। কিয়ামতের এই নিদর্শনগুলো আমাদের ইমানকে দৃঢ় করার পাশাপাশি মানবজীবনের প্রকৃত লক্ষ্য চিন্তা করার সুযোগ দেয়।