ইসলাম

কিয়ামতের ছোট আলামত ৫.ভণ্ড ও মিথ্যা নবীদের আগমন:

ইসলামের দৃষ্টিতে কেয়ামত অবধারিত একটি সত্য। কেয়ামতের আগে বিভিন্ন আলামত প্রকাশিত হবে, যা মানবজাতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হলো ভণ্ড ও মিথ্যা নবীদের আগমন। নবুওয়তের দাবিদার এসব মিথ্যাবাদী মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং তাদের ইমান ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করা হয়েছে।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ভবিষ্যদ্বাণী

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী। তার পর আর কোনো নবী আসবেন না। তবে কেয়ামতের আগে ভণ্ড ও মিথ্যা নবীরা আবির্ভূত হবে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

কুরআনের ঘোষণা:

আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।”— (সূরা আহযাব: ৪০)

এই আয়াত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, নবুওয়তের দরজা মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে চিরতরে বন্ধ হয়েছে। এরপর কেউ নবী হওয়ার দাবি করলে, সে মিথ্যাবাদী।

হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী:

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না যতক্ষণ না ত্রিশজন দাজ্জাল (মিথ্যা নবী) আবির্ভূত হবে। তাদের প্রত্যেকেই দাবি করবে যে সে আল্লাহর রাসূল।” (সহিহ বুখারি: ৩৬০৯, সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)

আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “আমার পরে আর কোনো নবী নেই। তবে মিথ্যাবাদীরা (নবীর দাবি করে) আবির্ভূত হবে, তারা সংখ্যায় প্রায় ত্রিশজন হবে।” — (তিরমিজি: ২২১৯)

মিথ্যা নবীদের লক্ষণ

১.মিথ্যা নবীদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হাদিস ও ইতিহাস থেকে জানা যায়:

২.তারা নিজেদের নবী হিসেবে দাবি করবে, যদিও নবুওয়তের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

৩.ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করবে।

৪.অলৌকিক কাজ করার মিথ্যা দাবি করবে।

৫.সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের অনুসারী বানাবে।

৬.বিভ্রান্তিকর ও ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করবে।

ইতিহাসে মিথ্যা নবীদের উদাহরণ

ইসলামের ইতিহাসে বহু মিথ্যা নবীর আগমন ঘটেছে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য:

১.মুসাইলামা কাজ্জাব: মুসাইলামা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই নবুওয়তের মিথ্যা দাবি করে বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ইসলামী সেনারা যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করে।

আসওয়াদ আনসি: তিনি ইয়েমেনে নবুওয়তের মিথ্যা দাবি করেছিলেন এবং বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।

সাজাহ: একজন নারী, যিনি নবী হওয়ার মিথ্যা দাবি করে মুসাইলামার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।

এছাড়াও বিভিন্ন যুগে এবং অঞ্চলে অনেক ভণ্ড নবী মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

নিকটবর্তী অতিতে ভারতে মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভারত বর্ষের অনেক আলেম তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত ভন্ড এবং মিথ্যুক নবী থেকে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন সে তাদেরই একজন। আল্লামা ছানাউল্লাহ অম্রিতসরী অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। এতে মিথ্যুক কাদিয়ানী শায়খ ছানাউল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করলে উভয় পক্ষের মাঝে ১৩২৬ হিজরী সালে এক মুনাযারা (বিতর্ক) অনুষ্ঠিত হয়। তাতে এই মর্মে মুবাহালা হয় যে, দু’জনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অল্প সময়ের মধ্যে এবং সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হালাক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা শায়খ ছানাউল্লাহর দু’আ কবূল করলেন। এই ঘটনার এক বছর এক মাস দশদিন পর মিথ্যুক কাদীয়ানী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।’ এমনিভাবে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত একের পর এক মিথ্যুকের আগমণ ঘটে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ঘোষিত ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ হবে।

মুমিনদের করণীয়

ভণ্ড নবীদের ফিতনা থেকে বাঁচতে এবং ঈমান রক্ষা করতে মুমিনদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে:

১.সতর্ক থাকা: মুমিনদের উচিত কুরআন ও হাদিসের আলোকে সঠিক ইসলাম চর্চা করা এবং মিথ্যা নবীদের থেকে দূরে থাকা।

২.ইসলামের প্রচার: সঠিক ইসলামের বার্তা প্রচার করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক।

৩.সঠিক জ্ঞান অর্জন: কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

৪.দোয়া করা: মুমিনদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যাতে তিনি তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন।

উপসংহার

ভণ্ড ও মিথ্যা নবীদের আবির্ভাব কেয়ামতের একটি বড় আলামত। তারা মানুষের ঈমান নষ্ট করার জন্য উঠে-পড়ে লেগে থাকবে। তবে কুরআন ও হাদিসের আলোকে নবুওয়তের সমাপ্তি স্পষ্ট হওয়ায় মুমিনদের জন্য তাদের মিথ্যা দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামিক জ্ঞান অর্জন এবং সচেতনতা সৃষ্টি করে মিথ্যা নবীদের ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং কেয়ামতের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।

সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *