ইসলাম

কিয়ামতের ছোট আলামত ৬.হেজায থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবে:

ইসলামে কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো হেযায (বর্তমান সৌদি আরবের একটি অঞ্চল) থেকে একটি বিশাল আগুন বের হওয়া। এই আগুন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা কেয়ামতের বড় আলামতগুলোর একটি হিসেবে গণ্য। এটি এমন একটি ঘটনা যা মানুষকে আল্লাহর শাস্তি এবং কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়।

হাদিসে হেযাযের আগুনের উল্লেখ

রাসূলুল্লাহ (সা.) এই আগুন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “কেয়ামত তখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ না হেযাযের জমিন থেকে একটি আগুন বের হবে, যা বাসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করবে।”(সহিহ বুখারি: ৭১১৮, সহিহ মুসলিম: ২৯০২)

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন এক আগুনের কথা উল্লেখ করেছেন, যা এতই বিশাল হবে যে তার আলো দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত দৃশ্যমান হবে।

ইতিহাসে আগুনের আবির্ভাব

ইসলামের ইতিহাসে একটি ঘটনা পাওয়া যায়, যা এই হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১২৫৬ খ্রিস্টাব্দে (৬৫৪ হিজরি), হিজাজের মদিনার কাছে একটি ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি (ভলকানো) বিস্ফোরণ ঘটে।

এই আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা এমনভাবে প্রবাহিত হয়েছিল যে, এটি রাতের বেলায়ও চারদিক আলোকিত করে তুলেছিল।

অনেক ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে হাদিসে বর্ণিত সেই আগুন বলে উল্লেখ করেছেন।

ইবনে কাসির তার বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থে এই ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “৬৫৪ হিজরিতে মদিনায় এমন একটি আগুন দেখা গিয়েছিল, যা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আলো ছড়িয়েছিল। এটি ছিল কেয়ামতের আলামতগুলোর একটি।”

এই আগুনের বৈশিষ্ট্য

হাদিস ও ইতিহাস থেকে এই আগুনের কিছু বৈশিষ্ট্য জানা যায়:

১.অত্যন্ত বিশাল ও ভয়াবহ: এই আগুন এত বড় হবে যে তার আলো শত মাইল দূর থেকেও দৃশ্যমান হবে।

২.দূরবর্তী অঞ্চল আলোকিত করা: হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাসরার উটগুলোর গর্দানও এই আগুনের আলোতে আলোকিত হবে।

৩.মানুষকে সতর্ক করা: এই আগুন মানুষকে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার বার্তা দেবে এবং আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

ইসলামের শিক্ষা ও আগুন থেকে প্রাপ্ত উপদেশ

এই আলামত সম্পর্কে জেনে মুমিনদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন:

১.কেয়ামতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস: এই ঘটনা প্রমাণ করে যে কেয়ামতের আলামতগুলো সত্য এবং তা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে।

২.আল্লাহর দিকে ফিরে আসা: মানুষকে উচিত আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং তার আনুগত্যে ফিরে আসা।

৩.সতর্ক হওয়া: মুমিনদের উচিত নিজেদের ইমান মজবুত করা এবং কেয়ামতের আলামতগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া।

৪.সত্য ইসলামের পথে থাকা: এই ধরনের আলামত মানুষের জন্য সতর্কবার্তা। তাই আমাদের উচিত কুরআন ও হাদিসের অনুসরণে জীবনের প্রতিটি দিক পরিচালিত করা।

সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *